সবচেয়ে লম্বা লেজের প্রাণী

লেপার্ড হুইপটেইল রে

শান্তশিষ্ট, লেজবিশিষ্ট…এমন কথা নিশ্চয়ই শুনেছেন। শান্ত ও ভদ্র কোনো ছেলে দুষ্টুমি করলে তাকে অনেক সময় এ কথা শুনতে হয়। শুধু ‘লেজ’ শব্দটা ব্যবহারের কারণে পুরো কথাটা হয়ে যায় নেতিবাচক।

প্রাণিজগতে এই লেজ অবশ্য দুষ্টুমির কোনো জিনিস না। রীতিমতো দরকারি অঙ্গ। প্রয়োজন অনুযায়ী একেক প্রাণীর লেজ একেক রকম। তিমির লেজের সঙ্গে যেমন বানরের লেজের কোনো মিল খুঁজে পাবেন না, তেমনি ইঁদুরের লেজের সঙ্গে কুমিরের লেজের আছে বিস্তর ফারাক। এই লেখার উদ্দেশ্য অবশ্য লেজের পার্থক্য বের করা নয়। চলুন আমরা জানার চেষ্টা করি, লেজবিশিষ্ট এতসব প্রাণীর ভীড়ে কোন প্রাণীর লেজ সবচেয়ে বড়।

কথায় আছে, তালার চেয়ে চাবি বড়। তেমনি স্থলে বাসকারী ‘দেহের চেয়ে লেজ বড়’ প্রাণীর নাম গ্রাস লিজার্ড বা ঘাস টিকটিকি। অর্থাৎ দেহের অনুপাতে এদের লেজটি বেজায় লম্বা। গ্রামাঞ্চলে খড়ের গাদা বা ঝোপঝাড়ে হঠাৎ এদের ছুটে বেড়াতে দেখা যায়। সাধারণ টিকটিকির চেয়ে এদের দেহ খানিকটা বড়। রং-বেরঙের চামড়ার এ টিকটিকির দেহ অর্থাৎ ধড়ের দৈর্ঘ্য মাত্র ২ থেকে ৩ ইঞ্চি। ধড়ের প্রায় ২-৩ গুণ লম্বা হয় এদের লেজ। অর্থাৎ লেজসহ এদের পুরো দেহের দৈর্ঘ্য প্রায় ১ ফুট! বুঝুন অবস্থা। প্রাণিজগতে দেহের তুলনায় এত লম্বা লেজ নেই আর কোনো প্রাণীর।

ঘাস টিকটিকি
ছবি: পাঙ্কি নন্দ প্রত্ম
কথায় আছে, তালার চেয়ে চাবি বড়। তেমনি স্থলে বাসকারী ‘দেহের চেয়ে লেজ বড়’ প্রাণীর নাম গ্রাস লিজার্ড বা ঘাস টিকটিকি। অর্থাৎ দেহের অনুপাতে এদের লেজটি বেজায় লম্বা। গ্রামাঞ্চলে খড়ের গাদা বা ঝোপঝাড়ে হঠাৎ এদের ছুটে বেড়াতে দেখা যায়

বাংলাদেশসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, চীন ও দক্ষিণ রাশিয়ার কিছু অংশে এদের দেখা মেলে। লম্বা লেজ নানাভাবে সাহায্য করে ছোট্ট এই প্রাণীকে। ঘাসের তীক্ষ্ণধার পাতা বা গাছের ডালের ওপর দিয়ে চলার সময় এ লেজের মাধ্যমে দেহের ভারসাম্য ধরে রাখে ঘাস টিকটিকি। অনেকটা পাতলা দড়ির ওপর দিয়ে হাঁটার সময় দড়াবাজ লম্বা লাঠির সাহায্যে দেহের ভারসাম্য যেভাবে রক্ষা করে, সেভাবে। লেজের কারণে গাছের এক ডাল থেকে আরেক ডালে লাফিয়ে লাফিয়ে চলার সময় মাটিতে পড়ে যায় না এরা। ওপরের ডাল থেকে নিচের ডালে আসতে লেজ দিয়ে ওপরের ডাল ধরে ধীরে সুস্থে দেহকে নামিয়ে আনে।

শুধু কি তাই? সাধারণ টিকটিকির মতো শত্রুর মুখে পড়লে বা বিপদে পড়লে লেজটা দেহ থেকে আলাদা করে পালিয়ে যায়। লেজ খসানোর পর অবশ্য কয়েকমাস কিছুটা বিপদে থাকে ঘাস টিকটিকি। লেজ ছাড়া তো ভারসাম্য বজায় রেখে ডালে ডালে চলা মুশকিল! তাই এ সময়টা এরা একটু লুকিয়ে চুরিয়ে থাকে। এর মধ্যে আবার এদের নতুন লেজ গজায়।

এ তো গেল দেহের তুলনায় সবচেয়ে বড় লেজের কথা। কিন্তু সত্যিকার অর্থে দৈর্ঘ্যে বড় লেজ আছে কার? যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোরের ন্যাশনাল অ্যাকুয়ারিয়ামের ব্লু ওয়ান্ডার প্রদর্শনীর কিউরেটর জে ব্র্যাডলির মতে, দৈর্ঘ্যের দিক থেকে সবচেয়ে বড় লেজের প্রাণী হলো থ্রেশার হাঙর। এরা একধরনের পরিযায়ী প্রাণী। প্রায় সারাক্ষণ চলতে থাকে। এদের লেজের ওপরের অংশেরই দৈর্ঘ্য হতে পারে প্রায় ১০ ফুট। লম্বা এই লেজ সাঁতার কাটতে যেমন সাহায্য করে, তেমনি শিকারের কাজেও লাগে।

দৈর্ঘ্যের দিক থেকে সবচেয়ে বড় লেজের প্রাণী হলো থ্রেশার হাঙর
ছবি: উইকিমিডিয়া

সাধারণত সাগরে ঝাঁক বেধে চলা ছোট মাছ শিকার করে থ্রেশার হাঙ্গর। চুপিসারে ছোট মাছের ঝাঁকের কাছে গিয়ে নিজেদের বড় পাখনা দিয়ে বাধা তৈরি করে। এরপর লেজ মাথার ওপর দিয়ে ঘুরিয়ে এনে চাবুকের মতো সজোরে আঘাত করে মাছগুলোকে। তারপর টুপটাপ খেয়ে ফেললেই হলো!

লম্বা লেজের প্রাণীর কথা যখন হচ্ছে, তখন হুইপটেইল রের কথা বলতেই হবে। সাগর তলের এ প্রাণী এক ধরনের স্টিং রে (আমাদের দেশে শাপলা-পাতা মাছ ডাকা হয়)। এদের লেজ শরীরের প্রস্থের তুলনায় তিন গুণ পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। তবে গবেষকেরা সাধারণত এদের লেজের পুরো দৈর্ঘ্য মাপতে পারেন না। যাঁরা মাছটি ধরেন, তাঁরা বহনের সুবিধার্থে শুরুতেই লেজের কিছু অংশ কেটে ফেলেন। এমনটাই জানিয়েছেন কিউরেটর জে ব্র্যাডলি।

লেপার্ড হুইপটেইল রে (Himantura leoparda) প্রজাতির একেকটি স্টিং রে প্রায় ৪ ফুট চওড়া হতে পারে।  লম্বায় হতে পারে প্রায় ১৩ ফুট। এই ১৩ ফুটের মধ্যই লেজ অন্তর্ভূক্ত।

যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটল অ্যাকুয়ারিয়ামের তথ্যমতে, এরা সাধারণত সমুদ্রের তলদেশে বাস করে। লম্বা লেজ এদের সাঁতারে ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। অনেক সময় আত্মরক্ষার জন্য শত্রুর ওপর আক্রমণ করতেও লেজ ব্যবহার করে। শিকারি প্রাণী ওপর থেকে আক্রমণ করতে এলে লেজটি চাবুকের মতো ঘুরিয়ে লেজে থাকা বিষাক্ত কাঁটা দিয়ে ঘায়েল করে শত্রুকে।

লেখক: শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

সূত্র: লাইভ সায়েন্স, উইকিপিডিয়া