হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলেন। হাতের কিছু অংশ গেল কেটে। প্রচণ্ড জ্বালা হচ্ছে। ফিনকি দিয়ে রক্ত ঝরছে। হাত দিয়েই কাটা স্থানে চেপে ধরলেন। বুদ্ধি করে কাপড় দিয়ে বাঁধলেন ক্ষতস্থান। ধীরে ধীরে বন্ধ হলো রক্ত পড়া।
এমনটা হরহামেশাই ঘটে আমাদের সঙ্গে। কেটে-ছড়ে যায়, রক্ত বের হয়। আবার রক্ত পড়া বন্ধও হয়। প্রশ্ন হলো, রক্ত পড়া বন্ধ হয় কেন? কাটা স্থানে আবার রক্ত জমাট বাঁধেই-বা কীভাবে?
আসলে আমাদের দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কারণে ক্ষতস্থানে রক্ত দ্রুত জমাট বাঁধে, বন্ধ হয় রক্তক্ষরণ। এই প্রক্রিয়াকে রক্ত জমাট বাঁধা বা রক্ত তঞ্চন বলে। প্লেটলেট (প্রচলিতভাবে লেখা হয় ‘প্লাটিলেট, একধরনের রক্তকণিকা) এবং প্লাজমায় থাকা প্রোটিন (রক্তের তরল অংশ) একসঙ্গে কাজ করে রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্যে করে। ফলে বন্ধ হয় রক্তপাত।
ক্ষতস্থানে রক্ত জমাট না বাঁধলে কী হবে, তা বোধ হয় আলাদা করে বলার প্রয়োজন নেই। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে শরীরের যাতে ক্ষতি না হয়, তা নিশ্চিত করে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এ প্রক্রিয়ায়।
রক্তের তরল অংশ, মানে প্লাজমায় ফাইব্রিনোজেন নামে একধরনের প্রোটিন থাকে। কোনো জায়গা কেটে গেলে একাধিক জটিল রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে এই ফাইব্রিনোজেন পরিণত হয় ফাইব্রিনে। ফাইব্রিনের জাল ক্ষতস্থানে জালের মতো প্রসারিত হয়ে রক্তকণিকাকে আটকে রাখে। এতে রক্ত তরল থেকে কিছুটা জেলির মতো হয়ে যায়। তাই আর রক্ত বের হয় না।
মানবদেহের জন্য রক্ত তঞ্চন গুরুত্বপূর্ণ। ক্ষতস্থানে রক্ত জমাট না বাঁধলে কী হবে, তা বোধ হয় আলাদা করে বলার প্রয়োজন নেই। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে শরীরের যাতে ক্ষতি না হয়, তা নিশ্চিত করে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এ প্রক্রিয়ায়। এটি দ্রুত কার্যকর না হলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে শরীরে অক্সিজেন ও পুষ্টির সরবরাহ ব্যাহত হতে পারে। রক্ত শুধু অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহই করে না, এটি গ্যাসীয় পদার্থ পরিবহন, বর্জ্য অপসারণ এবং হরমোন বহনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজও করে। তাই দেহের কোনো অংশে রক্তক্ষরণ চলতে থাকলে মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা থাকে।