প্লাস্টিকদূষণের বিরুদ্ধে লড়াই

প্লাস্টিকদূষণ বাংলাদেশ ও পৃথিবীর অন্যতম এক সমস্যার নাম। প্রতিদিনের জীবনে এ দূষণ ওতপ্রোতভাবে জড়িত এবং এর জন্য নিজেরাই অনেকাংশে দায়ী। ইচ্ছা হলেই পানি খেয়ে বোতল ফেলে যাচ্ছি রাস্তায়। চিপসের প্যাকেট, বিস্কুটের প্যাকেট, পলিথিন ইত্যাদিতে ভরে আছে বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি রাস্তা। যে মানুষ তাঁর সন্তানকে ভালো রাখার জন্য দিনভর পরিশ্রম করছেন, তিনিই রাস্তায় প্লাস্টিক ফেলে প্রতিনিয়ত বিষাক্ত করে তুলছেন পৃথিবীটাকে।

২০০৫ সালে ঢাকায় প্রতিবছর ১৭৬ টন প্লাস্টিক তৈরি হতো। ২০২০ সালে এসে এই পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৪৬ টন। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বেসরকারি সংস্থা ওয়েস্ট কনসার্নের করা এক জরিপের তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, শুধু ঢাকার চারপাশের চারটি নদীতে প্লাস্টিকবর্জ্য জমে আছে ৩০ টনের মতো।

প্লাস্টিকদূষণ আমাদের জন্য শুধু একদিক থেকে ক্ষতিকর নয়, এটি বিভিন্নভাবে আমাদের জলবায়ুর ওপর বাজে প্রভাব ফেলে। প্রথমত, দূষিত প্লাস্টিক মাটির সঙ্গে মিশে যায় না। গড়ে প্লাস্টিক ভাঙতে প্রায় এক হাজার বছর লাগে। দ্বিতীয়ত, প্লাস্টিক উৎপাদনের সময় প্রচুর গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ হয়। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্লাস্টিক উৎপাদনে প্রতিবছর প্রায় ১৭ মিলিয়ন ব্যারেল তেল ব্যবহার করা হয় এবং ১ কেজি প্লাস্টিক উৎপাদনে ৫-৬ কেজি কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরিত হয়। শুধু ঢাকার হিসাবে যদি চিন্তা করি, তাহলে ঢাকায় প্রতিবছর ৬৪৬ টন, মানে ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৪১ কেজি প্লাস্টিক তৈরি হচ্ছে। ফলে কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরিত হচ্ছে ২৯ লাখ ৩০ হাজার ২০৫ কেজি! চিন্তা করুন, আমাদের সন্তানের জন্য কী রেখে যাচ্ছি আমরা।

পৃথিবীজুড়ে প্রতি মিনিটে সাগরে গিয়ে মিশছে ১০ লাখ প্লাস্টিকের বোতল এবং প্রতিবছর সাগরে গিয়ে পড়ছে ১৩ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক। এ রকম চলতে থাকলে ২০৫০ সালের মধ্যে সাগরে মাছের তুলনায় প্লাস্টিকের পরিমাণ বেড়ে যাবে।

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন বলছে, পৃথিবীজুড়ে প্রতি মিনিটে সাগরে গিয়ে মিশছে ১০ লাখ প্লাস্টিকের বোতল এবং প্রতিবছর সাগরে গিয়ে পড়ছে ১৩ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক। এ রকম চলতে থাকলে ২০৫০ সালের মধ্যে সাগরে মাছের তুলনায় প্লাস্টিকের পরিমাণ বেড়ে যাবে। ফলে বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণী মারা তো যাচ্ছেই, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মাটি, পানি ও জীববৈচিত্র্য। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বাস্তুসংস্থান। প্রভাব পড়ছে জলবায়ুতে। এর খানিকটা আঁচ আমরা বাংলাদেশে টের পাচ্ছি। ঋতুবৈচিত্র্য নষ্ট হয়ে গেছে অনেকটাই। কাঠফাটা রোদ বারবার অশনিসংকেত দিচ্ছে আমাদের।

আসলে, শুধু সমস্যার কথা বলতে গেলেও ছোট এ লেখায় বলে শেষ করা যাবে না। এর চেয়ে বরং প্লাস্টিক সমস্যার সম্ভাব্য কিছু সমাধান নিয়ে কথা বলা যাক।

ভারতের কেকে প্লাস্টিক ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড বিটুমিনের সঙ্গে প্লাস্টিক মিশিয়ে রাস্তা তৈরি করছে। প্লাস্টিকবর্জ্য থেকে তৈরি বিশেষ এই প্লাস্টিকের নাম কেকে পলিব্লেন্ড। বিটুমিনের সঙ্গে এটি ৮: ১০০ অনুপাতে মেশানো হয়। আর অতি সরলীকরণ করে বললে, বিটুমিন ব্যবহার করা হয় মূলত অ্যাসফল্টকে জোড়া দেওয়ার জন্য। এভাবে তৈরি রাস্তাগুলো সাধারণ রাস্তার তিন গুণ পানিনিরোধক। অর্থাৎ বৃষ্টিতে সহজে পিছলা হয়ে যায় না। ব্রেক কষতে সমস্যা হয় না গাড়ির। প্রতি ১০ হাজার টন প্লাস্টিকবর্জ্য ব্যবহার করে ২ হাজার কিলোমিটার এ রকম রাস্তা বানাচ্ছে তারা। জানা গেছে, তাদের এ উদ্যোগ অন্ধ্র প্রদেশের প্লাস্টিক সমস্যার ৭০ শতাংশ মিটিয়ে দেবে।

প্লাস্টিকের স্তূপ

এ কাজের জন্য কেকে প্লাস্টিক ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড প্রচুর পরিমাণ প্লাস্টিক সংগ্রহ করে, করতে হয়। সাধারণত বর্জ্য দুই ধরনের হয়। এক, শুষ্ক বর্জ্য। এ ধরনের বর্জ্যগুলোকে রিসাইকেল বা পুনরায় প্রক্রিয়াজাত করে ব্যবহার করা যায়। যেমন কাগজ, প্লাস্টিক ইত্যাদি। আর দুই, ভেজা বর্জ্য। যেমন ফেলে দেওয়া খাবার, বাগান বা চাষের সময় তৈরি বর্জ্য ইত্যাদি। এগুলো সাধারণত পচে যায়। তৃতীয় আরেক ধরনের বর্জ্য আছে। বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক বা ইনজেকশনের সিরিঞ্জ, নষ্ট হয়ে যাওয়া ওষুধ ইত্যাদি। এগুলো আলাদাভাবে প্যাকেজিং করতে হয়, যাতে বোঝা যায়, এগুলো বিপজ্জনক। নির্দিষ্ট ও বিশেষ পদ্ধতিতে এসব বর্জ্য পুড়িয়ে ফেলা হয় বা সংরক্ষিত এলাকায় মাটিতে পুঁতে ফেলা হয় কিংবা কংক্রিট বা অ্যাসফল্ট দিয়ে চারদিকে প্রলেপ দিয়ে দেওয়া হয় যেন বিপজ্জনক কিছু বাইরে বের হতে না পারে। মাটি, পানি বা বাতাস দূষিত করতে না পারে।

এখানে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে একটু বলা দরকার। আমরা সাধারণত সব ধরনের বর্জ্য একসঙ্গে ফেলি। এটা করা উচিত নয়। খাবার বা ভেজা সব বর্জ্য এক জায়গায় বা একটি পাত্রে ফেলা উচিত। প্লাস্টিকবর্জ্য আলাদা ফেলা উচিত। এ ছাড়া কাগজ ও অন্যান্য শুষ্ক বর্জ্য আলাদা পাত্রে রাখা উচিত। পৌরসভা থেকে ময়লা সংগ্রহের সময় এগুলোকে আলাদাভাবে সংগ্রহ করতে হবে এবং যে ধরনের বর্জ্য সমস্যা যেভাবে সমাধান করা যায়, সেগুলো সেভাবে সমাধান করতে হবে। যেমন প্লাস্টিকের বোতল খাবারের সঙ্গে একসঙ্গে ফেলা যাবে না। প্লাস্টিক ও কাগজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করে, এ রকম প্রতিষ্ঠানের কাছে পাঠিয়ে দিতে হবে।

কেকে প্লাস্টিক ঠিক এ কাজই করে। তারা যতভাবে সম্ভব প্লাস্টিকবর্জ্য সংগ্রহ করে। এটা তারা বাসায় বাসায় গিয়ে করে, এমনটা নয়। যদিও এ ব্যবস্থাও তাদের আছে। তবে মূলত একটি এলাকার সব প্লাস্টিকবর্জ্য বা একটি স্কুলের সব প্লাস্টিকবর্জ্য আলাদাভাবে জমিয়ে তাদের জানালে তারা সেগুলো সংগ্রহ করে নেয়। বাংলাদেশেও এ ধরনের ব্যবস্থা করা যায়। সে ক্ষেত্রে সড়ক নির্মাণে যেমন কাজে লাগবে, তেমনি ভয়ংকর প্লাস্টিকদূষণও কমে আসবে অনেকাংশে।

এদিকে ভারতের এমকে অ্যারোমেটিকস প্লাস্টিকবর্জ্য থেকে ক্রুড অয়েল, সহজ করে বললে, পেট্রোলিয়াম তেল তৈরি করছে। ওদের পুরো ব্যবস্থাই স্বয়ংক্রিয়। ৪৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ওরা সব ধরনের প্লাস্টিকবর্জ্যকে গলিয়ে ফেলে, তৈরি করে পেট্রোলিয়াম তেল। এ ক্ষেত্রে ওরা সব ধরনের প্লাস্টিকই ব্যবহার করে। এ সময় বাইপ্রোডাক্ট বা উপজাত হিসেবে কিছুটা বিউটেন ও প্রোপেনও তৈরি হয়। সেগুলোকে আবার প্রক্রিয়াজাত করে পেট্রোলিয়াম তেল বানিয়ে ফেলে ওরা। পাশাপাশি আরও যেসব উপজাত উৎপন্ন হয়, সেসব রাসায়নিক বিভিন্ন ধরনের কৃষিকাজে বা কোটিং, মানে বিভিন্ন পণ্যের ওপর প্রলেপ দেওয়ার কাজে ব্যবহার করা যায়।

এ রকম আরেকটি প্রশংসনীয় উদ্যোগের নাম মিনিউইজ। প্রতিষ্ঠাতা আর্থার হুয়াং একজন স্থপতি ও পুরকৌশলী। তাঁর নেতৃত্বে মিনিউইজ বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য থেকে বাড়িঘর, ফার্নিচার বা আসবাব, বাড়িঘর নির্মাণে প্রয়োজন হয় এমন বিভিন্ন জিনিস বানিয়েছে এবং বানাচ্ছে। একের পর এক চমক দেখিয়ে যাচ্ছে মিনিউইজ। এ রকম একটি চমকের নাম প্লাস্টিক ট্র্যাশ-টেক। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্লাস্টিকবর্জ্য থেকে ষড়্‌ভুজাকৃতির টাইল বানায় তারা। পাঁচটি প্লাস্টিক বোতল দিয়ে একটি টাইল বানানো যায়। ৫০টি বোতলের ঢাকনা ও ঢাকনার সঙ্গে বোতলের মুখে যে রিং থাকে, তা থেকে বানানো যায় ১টি টাইল। এগুলো কোনো ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি নয়। এ রকম টাইল মিনিউইজ ইতিমধ্যেই বানিয়েছে এবং নিয়মিত বানাচ্ছে।

মিনিউইজের এ রকম আরেকটি বড় চমকের নাম ইকোআর্ক। ৯ তলা এই গণ-জাদুঘরটি (public museum) বানানো হয়েছে ১.৫ মিলিয়ন পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকৃত প্লাস্টিক বোতল দিয়ে! সোলার প্যানেল আছে এতে। সারা দিন সৌরশক্তি জমিয়ে রাখে ইকোআর্ক। সেই সৌরশক্তি দিয়েই রাতের বেলায় চলে এর ভেতরের সব এলইডি বাতি। সাধারণ বিল্ডিংয়ের চেয়ে এটির ওজন ৫০ শতাংশ কম। অথচ প্রাকৃতিক যেকোনো দুর্যোগ সামাল দেওয়ার সামর্থ্য রাখে। ইকোআর্ক সে জন্য ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকস মেগাস্ট্রাকচার হিসেবে ফিচারও হয়েছে।

প্লাস্টিকের স্তূপে কাজ করছেন নারীরা

এখান থেকে আমরা একটা জিনিস বুঝতে পারি। পরিবেশ রক্ষার জন্য, পৃথিবীটাকে বাঁচানোর জন্য কতটুকু করতে চাই; সেটা আমাদের নিজেদের ঠিক করতে হবে। এটা আমাদের দায়িত্ব, বিবেকের কাছে মানুষ হিসেবে দায়বদ্ধতা। শুধু আইন বা নিয়ম করে পরিবেশ রক্ষা করা সম্ভব নয়। এ জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সবাইকে নিয়ে, সরকারিভাবে উদ্যোগ নিয়ে আমরা চাইলে ছোট ছোট, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারি পরিবেশ রক্ষায়। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এ রকম কিছু কাজের কথা বলে এ আলোচনা শেষ করব।

প্রথমত, আমরা চাইলে পলিথিন বা প্লাস্টিক ব্যাগের বদলে পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করা যায় এ রকম ব্যাগ ব্যবহার করতে পারি। গড়ে প্রতিবছর পৃথিবীজুড়ে পাঁচ ট্রিলিয়ন প্লাস্টিক ব্যাগ বানানো হয়। হিসাব করলে দেখা যায়, গড়ে জনপ্রতি বছরে ব্যাগ বানানো হচ্ছে ৭০০টি! একটি প্লাস্টিকের ব্যাগ গড়ে সর্বোচ্চ ১২ মিনিট ব্যবহৃত হয়। অথচ এটা পচতে সময় লাগে প্রায় ৯৪০ বছর। সে জন্যই পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করা যায় এ রকম ব্যাগের দিকে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন আমাদের।

বিজ্ঞানচিন্তার জানুয়ারি সংখ্যায় ‘বিপন্ন মানবতা, বিজ্ঞানের বিস্ময়’ লেখায়ও এ নিয়ে বলেছি। মাহবুব সুমন আলুর স্টার্চ থেকে পচনশীল পলিথিন বানিয়ে দেখিয়েছেন। প্রতি কেজি আলু থেকে ১৫টি পলিথিন বানানো যায়। এই পলিথিনের দাম পড়ে তিন টাকার মতো। এর ধারণক্ষমতা পাঁচ-ছয় কেজি। আর এটা ৩০ দিনের মধ্যে পচে যায়।

একটি বড় সমস্যা পানি বা কোল্ড ড্রিংকসের বোতল। প্রতিবছর শুধু পানির বোতলই বিক্রি হয় ২৮ বিলিয়ন।

২০১৮ সালে কাসাভা (শিমুল আলু) থেকেও পলিথিন উদ্ভাবন করেছে ইকোস্পিয়ার নামে একটি দেশি প্রতিষ্ঠান। ওটাও পুরোপুরি পচনশীল। আবার পাটের আঁশ থেকে পলিমার তৈরির পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছিলেন বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা অধ্যাপক মোবারক আহমদ খান। তিনি এ থেকে পরিবেশবান্ধব সোনালি ব্যাগও বানিয়েছেন। এ উদ্ভাবনগুলো সে রকম বিনিয়োগ পায়নি। বাণিজ্যিকীকরণ করা হয়নি। এগুলো নিয়ে আমাদের আরও কাজ করা প্রয়োজন। এ ছাড়া কাগজ ও কাপড়ের ব্যাগও ব্যবহার করা যায়।

আরেকটি বড় সমস্যা পানি বা কোল্ড ড্রিংকসের বোতল। প্রতিবছর শুধু পানির বোতলই বিক্রি হয় ২৮ বিলিয়ন। এ ক্ষেত্রে একটা উপায় হচ্ছে, প্রতিটি দোকানে বোতল সংগ্রহের একটা ব্যবস্থা রাখা। প্লাস্টিকের বোতলের জন্য কিছুটা বাড়তি টাকা নেওয়া যেতে পারে। দোকানে খালি বোতল ফেরত দিলে সেই বাড়তি টাকাটুকু আবার ফেরত পাওয়া যাবে। আরেকটি উপায় হতে পারে, মানুষ নিজের সঙ্গে সব সময় একটা ছোট বোতল রাখবে। বোতল মানে প্লাস্টিকের বোতল নয়। যেসব বোতলে ঠান্ডা-গরম—দুই ধরনের পানীয়ই রাখা যায়, সে রকম। সব অনুষ্ঠানে, রেস্তোরাঁয়—সবখানে রিফিল, মানে বোতল ভর্তি করে নেওয়ার সুযোগ থাকবে। সেটা পানি হোক, কোল্ড ড্রিংকস বা কফি। প্লাস্টিকের বোতল দূষণ সমস্যা সমাধানে এটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

একই রকম বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে দেখা যায়, ছোট ছোট প্যাকেটে সাবান, শ্যাম্পু ইত্যাদি দেওয়া হয়। এ রকম ছোট প্যাকেটে সাবান বা শ্যাম্পু দোকানেও কিনতে পাওয়া যায়। এভাবে সাবান বা শ্যাম্পু বিক্রি না করে বড় শ্যাম্পুর বোতল, বড় সাবান ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে। একইভাবে ছোট বিস্কুটের প্যাকেট বা অন্য খাদ্যদ্রব্য ছোট প্যাকেটে বিক্রি করা কমানো যেতে পারে। এর বদলে খাবারের বড় প্যাকেট কেনার পাশাপাশি বহনের জন্য নিজস্ব পাত্র, বাটি, বোতল ইত্যাদি ব্যবহার করলে অনেকটাই কমে আসতে পারে প্লাস্টিকের ব্যবহার।

প্রয়োজন ছাড়া প্লাস্টিকের বোতল কেনা, প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহার করা বন্ধ করতে হবে।

এ ছাড়া ভারত ও সিঙ্গাপুরে প্লাস্টিক ব্যবহার করে সড়ক, বিল্ডিং, টাইল ইত্যাদি বানানোর কথা বলেছি। বাংলাদেশেও এ রকম উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। এ জন্য দরকার প্লাস্টিকবর্জ্য সংগ্রহ। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি এ ধরনের কাজে ব্যক্তিগতভাবেও মানুষ সাহায্য করতে পারেন। যেমন নিজেদের বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিকবর্জ্যগুলোকে আলাদা পাত্রে ফেলা। এটা নিয়ে ওপরেও বলেছি। প্লাস্টিকের বোতল ও বিভিন্ন শুষ্ক প্লাস্টিকবর্জ্য, যেমন চিপস বা বিস্কুটের প্যাকেট এক পাত্রে ফেলা যেতে পারে। ব্লেড, কাচ এগুলো আলাদা ফেলা যেতে পারে। ব্যাটারি আলাদা রাখা যেতে পারে। কারণ, ব্যাটারিকে চাইলে পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করে ব্যবহার করা যায়।

এ ছাড়া প্রয়োজন ছাড়া প্লাস্টিকের বোতল কেনা, প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহার করা বন্ধ করতে হবে। যেমন বাজার থেকে মাছ-মাংস নিয়ে আসার জন্য প্লাস্টিক ব্যাগের প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু লন্ড্রিতে কাপড় দেওয়া বা এমনিতে বাজার করা, কাপড়চোপড় কেনা ইত্যাদিতে প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহারের আসলে কোনো প্রয়োজন নেই। এই কাজগুলো আমরা নিজেরাই করতে পারি।

একটা দেশ বলতে মূলত সে দেশের মানুষদের বোঝায়। একটি দেশের সব মানুষ যদি অপ্রয়োজনে প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ করে দেয়, তাহলে সে দেশের প্লাস্টিকদূষণ সমস্যা নেমে আসতে পারে শূন্যের কোঠায়। যে পৃথিবীকে আমরা প্রচণ্ড দূষিত করে ফেলেছি, নিজেদের চেষ্টায় সেটাকে আমরা আবার চমৎকার করে তুলতে পারি। পরবর্তী প্রজন্মের জন্য আমরা তো সুন্দর একটি পৃথিবীই রেখে যেতে চাই, তাই নয়?

লেখক: অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

অনুলেখক: উচ্ছ্বাস তৌসিফ, সহসম্পাদক, বিজ্ঞানচিন্তা

সূত্র: কেকে প্লাস্টিক ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড, এমকে অ্যারোমেটিকস লিমিটেড, মিনিউইজ, ওয়েস্ট কনসার্ন, প্রথম আলো