সহজ কথায়, একজন চিফ হিট অফিসার দায়িত্বপ্রাপ্ত নগরের অস্বাভাবিক উচ্চ তাপমাত্রার ঝুঁকি মোকাবেলায় কাজ করবেন।
পৃথিবীজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাড়ছে উত্তাপ। বাংলাদেশও এর ব্যাতিক্রম নয়। মাসখানেকের বেশি সময় ধরে প্রচণ্ড গরমে নাকাল পুরো দেশ। গ্রামের চেয়ে শহরাঞ্চলের তাপমাত্রা বরাবরই বেশি। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় তাপমাত্রা অনেক বেশি। এতে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। বাড়ছে গরমজনিত রোগবালাই।
এ অবস্থায় যুগ্মভাবে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা অ্যাড্রিয়েন আরশট-রকফেলার ফাউন্ডেশন রেসিলিয়েন্স সেন্টার প্রথমবারের মতো নিয়োগ দিয়েছে ‘চিফ হিট অফিসার’। বাংলায় কথাটি ‘শীর্ষ তাপ কর্মকর্তা’ হলেও, আসলে কথাটি হবে ‘শীর্ষ তাপনিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা’। নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নাম বুশরা আফরিন। পদের নাম শুনে তো বুঝতেই পারছেন, তাঁর কাজ কী। কিন্তু তাঁর দায়িত্ব আসলে কতটা বিস্তৃত? তাঁর কাজ ঠিক কী? সম্পূরক প্রশ্ন হিসেবে কেউ কেউ হয়তো জিজ্ঞেস করতে পারেন, পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে কি এই পদ আছে?
ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের তথ্য অনুসারে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা কমানোর উদ্দেশ্য চিফ হিট অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়। একজন চিফ হিট অফিসারের কাজ হলো, শহরের নাগরিকদের চরম তাপমাত্রা থেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া। এর অংশ হিসেবে তাঁর কাজের আওতায় আরও আছে তাপমাত্রা কমানোর জন্য স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী কর্মপরিকল্পনা তৈরি ও সমন্বয় করা এবং তাপমাত্রার কারণে সৃষ্ট দীর্ঘমেয়াদী নানা ঝুঁকি হ্রাসের জন্য নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা। এসবের মাঝে আছে বৃক্ষরোপণ, ছায়াযুক্ত স্থান বাড়ানো, সবার সময় কাটানোর মতো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্থান বাড়ানো এবং তাপ নিয়ন্ত্রণ ও তাপজনিত রোগের চিকিৎসাবিষয়ক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করা।
সহজ কথায়, একজন চিফ হিট অফিসার দায়িত্বপ্রাপ্ত নগরের অস্বাভাবিক উচ্চ তাপমাত্রার ঝুঁকি মোকাবেলায় কাজ করবেন। সেইসঙ্গে তিনি আরবান হিট আইল্যান্ড বা শহরের উচ্চ তাপমাত্রাবিশিষ্ট অঞ্চলের তাপমাত্রা কমানোর জন্য কাজ করবেন।
গ্রামের তুলনায় শহরে বেশি মানুষ বসবাস করেন। কল-কারখানা এবং যানবাহনও শহরে বেশি। পাশাপাশি অবকাঠামোগত উন্নয়নের কারণে শহরে স্বাভাবিকভাবেই গ্রামের তুলনায় গাছপালা কম থাকে। সব মিলিয়ে শহরাঞ্চলের আবহাওয়া গ্রামের তুলনায় বেশি হয়। মানুষের সক্রিয়তা অবশ্য শহরের সব জায়গায় সমান হয় না। এ কারণে শহরের মধ্যেও এলাকাভেদে তাপমাত্রার তারতম্য দেখা যায়। যেসব এলাকার তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশি হয়, সেসব এলাকাকে বলা হয় আরবান হিট আইল্যান্ড বা উচ্চ তাপমাত্রাবিশিষ্ট অঞ্চল।
কী করবেন ঢাকার চিফ হিট অফিসার?
নিজের কাজ নিয়ে বলেছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের চিফ হিট অফিসার বুশরা আফরিন। তিনি বলেন, ‘তীব্র তাপপ্রবাহের মতো অদৃশ্য ঝুঁকির বিষয়ে মানুষকে জানাতে হয়। বিশ্বের অনেক দেশ মানুষকে এ বিষয়ে আগে থেকেই সাবধান করে। তাপপ্রবাহের মধ্যে বাইরে গেলে কী করতে হবে সে পরামর্শ দেওয়া হয়।’
চিফ হিট অফিসার হিসেবে শুরুতে সে কাজটিই করতে চান বলে জানান তিনি। আরও জানান, চিফ হিট অফিসাররা সান্তিয়াগোতে কুলিং পেভমেন্ট, কুল রুফ, ফ্রিটাউনে ভবনের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছেন। কিছু শহর বনায়নসহ নানা উপায় প্রয়োগ করছেন। এ ধরনের সমাধানগুলো থেকে বাংলাদেশের উপযোগী পদ্ধতিগুলো প্রয়োগের পরিকল্পনার কথা জানান তিনি। বলেন, ‘আমাদের এখানে জায়গা কম, তাই তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে মিনিয়েচার ফরেস্ট কীভাবে করা যায়, সেটা চিন্তা করব। তীব্র তাপপ্রবাহের সমস্যা সমাধানে অনেক ধরনের সমাধান রয়েছে। সেগুলো আমাদের খুঁজে বের করে স্থানীয় বিষয়গুলোকে সামনে রেখে প্রয়োগ করতে হবে।’
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা অ্যাড্রিয়েন আরশট-রকফেলার ফাউন্ডেশন রেসিলিয়েন্স সেন্টার ও এক্সট্রিম হিট রেসিলিয়েন্স অ্যালায়েন্সের কল্যাণে প্রথমবারের মতো এই পদ সৃষ্টি হয় এ দশকের শুরুর দিকে। সংস্থাটি ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে ১০০ কোটি মানুষকে জলবায়ুর চরম অবস্থা থেকে রক্ষার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, গ্রিস ও আফ্রিকার বেশ কিছু দেশ চিফ হিট অফিসার নিয়োগ দিয়েছে। এবারে এ তালিকায় যুক্ত হলো বাংলাদেশও।
লেখক: শিক্ষার্থী, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা
সূত্র: উইকিপিডিয়া, ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরাম, দ্য কনভার্সেশন