মাথার একপাশে প্রচণ্ড ব্যথা করছে। একটু পরপর যেন থেকে থেকে ধাক্কা মারছে ব্যথাটা। যাঁদের সমস্যাটা হয়, তাঁরা নিশ্চয় বুঝে গেছেন। হ্যাঁ, মাইগ্রেনের ব্যথার কথাই বলছি। এ সময় অনেকের পেটে বা পাকস্থলী কেমন যেন মোচড় দেয়, বমি বমি ভাব হয়, কারো কারো বমিও হয়ে যায়। তীব্র আলো বা শব্দ সহ্য হয় না একদম। কেউ কেউ চোখে তারা দেখেন এ সময়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা এই সমস্যা রয়ে যেতে পারে। ওষুধ খেলে বা ঘুমালে কমে আসতে পারে মাইগ্রেনের এই ব্যথা। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই ব্যথা কেন হয়?
উত্তর শুনে আপনি একটু চমকে যেতে পারেন। কারণ খুব পরিচিত এই ব্যথার সত্যিকার কারণ আজও আমাদের অজানা। তবে এটুকু তো বোঝাই যায়, মস্তিষ্কে অস্বাভাবিক কোনো পরিস্থিতি দেখা দিলেই এ সমস্যায় পড়তে হয়।
অনেক সময় হরমোনের পরিমাণ কমা-বাড়ার ফলে এ সমস্যা হয়, বিশেষ করে ইস্ট্রোজেন নামে একধরনের হরমোনের কারণে। এ হরমোন নারীদেহে বেশি থাকে। ছেলেদের দেহে এর ঘনত্ব অত্যন্ত কম। ফলে নারীরা মাতৃত্বকালীন সময়সহ অনেক সময় মাইগ্রেনের সমস্যায় ভোগেন। নির্দিষ্ট কিছু খাবারের জন্যও এ সমস্যা হতে পারে। বিশেষ করে কেউ যদি ডায়েটের জন্য একবেলা খাবার না খান কিংবা বেশি করে ক্যাফেইনযুক্ত খাদ্য, যেমন চা-কফি খান, সে ক্ষেত্রে এই ব্যথা হতে পারে। ঘুম ঠিকভাবে না হলে কিংবা জেটল্যাগের জন্যও মাইগ্রেনের ব্যথা হয়।
প্রশ্ন আসতে পারে, মাইগ্রেন কি জিনগত? উত্তর, হ্যাঁ। যাঁরা মাইগ্রেনের সমস্যায় ভোগেন, দেখা গেছে, তাঁদের প্রায় ৯০ শতাংশের পূর্বপুরুষদের কারো না কারো এ সমস্যা রয়েছে। সাধারণ যে মাইগ্রেনের সমস্যা দেখা যায়, তার সঙ্গে বেশ কিছু জিন জড়িত। এসব জিন মস্তিষ্কের বিভিন্ন কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। এ ছাড়া ফ্যামিলিয়াল হেমিপ্লেজিক মাইগ্রেন নামে বিশেষ একধরনের মাইগ্রেন আছে। এটিও উত্তরাধিকার সূত্রে পান আক্রান্তরা। চারটি বিশেষ জিন—CACNA1A, ATP1A2, SCN1A, and PRRT2-এর জন্য এই মাইগ্রেন হতে পারে।
মাইগ্রেনের সাধারণত দুধরনের চিকিৎসা রয়েছে। এক, নিরাময়কারী ওষুধ। মাইগ্রেনের ব্যথা হলে এই ওষুধ গ্রহণের মাধ্যমে ব্যথা কমে আসে। আর দুই, প্রতিরোধক ওষুধ। যাঁদের নিয়মিত মাসে চারবার বা আরও বেশি মাইগ্রেনের ব্যথা হয়, তাঁদের এ ধরনের ওষুধ দেন ডাক্তাররা। তবে রোগীর সমস্যা বুঝে ডাক্তার সিদ্ধান্ত নেন ওষুধের ধরন, গ্রহণের নিয়ম ইত্যাদি কেমন হবে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
