শীতের বর্ণিল পুষ্পোদ্যান

শীতের রুক্ষ-শুষ্ক, নিষ্প্রাণ প্রকৃতিকে কিছুটা হলেও প্রাণবন্ত করে তোলে বর্ণিল মৌসুমী ফুল। দিগন্ত বিস্তৃত হলুদ সর্ষেক্ষেত এই সৌন্দর্যকে করে আরও মোহনীয়। আমাদের আবহাওয়ায় শীতের দীর্ঘজীবী ফুলের সংখ্যা খুব কম। এই ঋতুর অধিকাংশ ফুল ক্ষণস্থায়ী। শীতের শুরুতে ফোটে তুণ, প্রায় একই সময়ে ফোটে স্বর্ণঅশোক। বর্ণহীন প্রকৃতিতে স্বর্ণঅশোকের উপস্থিতি সত্যি দ্যুতিময়। ঢাকার একমাত্র স্বর্ণঅশোকটি আছে বলধা গার্ডেনের সাইকিতে। আরেকটি পরিণত গাছ আছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেনে। স্বর্ণঅশোকের জৌলুস কমতে না কমতেই বলধা গার্ডেনে বর্ণিল ক্যামেলিয়ার বর্ণাঢ্য উত্সব শুরু হয়। এটিও শীতের দুষ্প্রাপ্য ফুল। বলধা গার্ডেনের দক্ষ ও অভিজ্ঞ নিসর্গীদের জাদুস্পর্শে এখানকার সিবিলি অংশে ক্যামেলিয়া ফোটে। বাগানের উত্তর প্রান্তে ক্যামেলিয়ার একটি ঘর আছে। ক্যামেলিয়া পরিবারের আরেক নান্দনিক ফুল চা-ফুল। শীতের দিনে চা-বাগানে অসংখ্যা চা-ফুল ফোটে। এ ছাড়াও এই মৌসুমে বাগান আলোকিত করে আরও ফোটে সোনাঝুরি লতা, অর্কিড কাঞ্চন, সাদাঝিন্টি, সাদাচিতা, লিলিয়াম, স্ন্যাপড্রাগন, জার্বেরা, বাসরলতা, ধাইরা, পপি, টিউলিপ ইত্যাদি।

১ / ১৪
ছবি: মোকারম হোসেন

চা-ফুল

চিরসবুজ গুল্ম আকৃতির গাছ। পাতা ৪-১৫ সেন্টিমিটার লম্বা হতে পারে। ফুল কার্তিক-অগ্রহায়ণে ফোটে। সাদা, একটু মোড়ানো ধরনের কয়েকটি পাপড়ি থাকে। মাঝে একগুচ্ছ হলুদ-সোনালি পরাগকেশর। গড়ন অনেকটা নাগেশ্বরের মতো।

২ / ১৪
ছবি: মোকারম হোসেন

ক্যামেলিয়া

এই ফুল জন্মে এশিয়ার শীতল ও উপ-উষ্ণ অঞ্চলে। জলাভূমি বা অধিক শুষ্কতা এ গাছের জন্য ক্ষতিকর। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশে চাষের জন্য ছায়াযুক্ত স্থান প্রয়োজন। সাদা ও লাল ফুলের গাছ সংখ্যায় বেশি। প্রতিটি ফুলেই ৫টি বৃতি ও অসংখ্য পুংকেশর থাকে।

৩ / ১৪
ছবি: মোকারম হোসেন

সোনাঝুরিলতা

উজ্জ্বল লালচে কমলা রঙের ফুল দূর থেকে নজর কাড়ে। বেশি উষ্ণতা ও শীত—দুটোই অপছন্দ। শীতের শুরুতে ফুল ফোটে। নমনীয়, পাতাঝরা, ঝুলন্ত শাখাবহুল ও লম্বা লতা। ঝুলন্ত মঞ্জরির ফুলগুলো নলাকার।

৪ / ১৪
ছবি: মোকারম হোসেন

স্ন্যাপড্রাগন

শীত মৌসুমে প্রায় সব বাগানে চাষ হয়। সারাদেশে সহজলভ্য। বর্ষজীবী বীরুৎ গাছ, খাড়া, কিছু শাখা আছে। পাতা লম্বাটে। এই ফুলের বিভিন্ন রং আছে।

৫ / ১৪
ছবি: মোকারম হোসেন

বাসরলতা

শক্ত লতার আলঙ্করিক গাছ, সমান্তরাল মাচায় বাসর সজ্জার ফুলের মতো চমত্কারভাবে ঝুলে থাকে। ১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। ঝুলন্ত মঞ্জরিতে বর্ষব্যাপী তামাটে-লাল রঙের ফুল ফুটলেও শীতে সংখ্যাধিক্যে বেশি থাকে। পাপড়ি পুরোপুরি খোলে না। গন্ধহীন।

৬ / ১৪
ছবি: মোকারম হোসেন

অর্কিড কাঞ্চন

জন্মস্থান থাইল্যান্ড। আবাদিত জাতের ফুল। গাছের গড়ন, কাল, পাতা ও ডালপালার ক্ষেত্রে অন্যান্য কাঞ্চনের সঙ্গে খুব একটা তফাৎ নেই। পত্রমোচি গাছ, উচ্চতা প্রায় ৮ মিটার, বহুশাখী। পাতা চওড়া, পুরু ও অসম্পূর্ণভাবে সজোড়। ফুল বড়, ১২ সেমি চওড়া, লাল অথবা গোলাপি-বেগুনি রঙের।

৭ / ১৪
ছবি: মোকারম হোসেন

স্বর্ণঅশোক

মাঝারি আকৃতির চিরসবুজ ছায়াঘন বৃক্ষ। কাণ্ড কালচে রঙের, ডালপালা উর্ধ্বমুখী ও শক্তপোক্ত ধরনের। অন্যান্য অশোকের তুলনায় পাতা বড়। পৌষ-মাঘ মাসে সারা গাছজুড়ে হলুদ-সোনালি রঙের অসংখ্য গুচ্ছবদ্ধ ফুল ফোটে।

৮ / ১৪
ছবি: মোকারম হোসেন

পপি

শীত মৌসুমে সারাদেশেই চাষ হয়। গাছ ৬০ থেকে ৯০ সেন্টিমিটার উঁচু হতে পারে। পাতা লম্বাটে, কিনার কাটাকাটা, রোমশ। লম্বা বোঁটায় ফুল ফোটে, গড়ন অনেকটা বাটির মতো, সিঙ্গল বা ডাবলও হতে পারে। সাদা, গোলাপি, লাল, বেগুনি নানা রঙের ফুল দেখা যায়।

৯ / ১৪
ছবি: মোকারম হোসেন

ধাইরা

পরজীবী গাছ, সাধারাণত ধাইরা নামেই পরিচিত। কোথাও কোথাও মান্দা বা বান্ধা নামটিও প্রচলিত। প্রিয় আবাস পরিণত আম গাছ। মাঝেমধ্যে মেঘশিরীষ বা কাঁঠাল গাছেও দেখা যায়।

১০ / ১৪
ছবি: মোকারম হোসেন

টিউলিপ

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কয়েক বছর ধরে বড় পরিসরে টিউলিপ চাষ হচ্ছে। এ ছাড়া বিক্ষিপ্তভাবে দেশের অনেক স্থানেই এ ফুল দেখা যায়। টিউলিপের স্বর্গভূমি নেদারল্যান্ড। মধ্য এশিয়ায় বিস্তৃত ‘তিয়ান শান’ পার্বত্য অঞ্চল এবং হিমালয় অঞ্চলেও প্রাকৃতিকভাবে জন্মে।

১১ / ১৪
ছবি: মোকারম হোসেন

জার্বেরা

শীত মৌসুমে দেশের বিভিন্ন বাগানে দেখা যায়। বছরের অন্যান্য সময়েও বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয়। গাছ প্রায় ৩০ থেকে ৪৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। পাতাহীন কাণ্ডের আগায় ফুলগুলো পর্যায়ক্রমে ফোটে। পাপড়ি ঘনবদ্ধ ও বেশ পুরু। ফুলের রং অনেকটা সাদা, ক্রিম-সাদা, হলুদ, কমলা, ইট-লাল, গোলাপি, মেরুন, টেরাকোটা ও মিশ্র রঙের।

১২ / ১৪
ছবি: মোকারম হোসেন

লিলিয়াম

শীত মৌসুমে সারাদেশে বিচ্ছিন্নভাবে চাষ হতে দেখা যায়। প্রায় এক দশক আগে যশোর জেলার টাওরা গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু হয়েছিল। সুগন্ধি এই কন্দজ ফুলটি সারাবিশ্বে ‘কাট ফ্লাওয়ার’ হিসেবে বিখ্যাত। ঘরে রাখলে রজনীগন্ধার মতো সুগন্ধি ছড়ায়।  ফুলের দোকানগুলোয় বিক্রি হয়।

১৩ / ১৪
ছবি: মোকারম হোসেন

সাদাচিতা

স্থানীয়ভাবে চিতা বা চিত্রক নামে পরিচিত। বহুবর্ষজীবী বীরুৎ বা ছোট ধরনের গুল্ম শ্রেণির উদ্ভিদ। শাখাসমূহ আড়াই মিটার পর্যন্ত লম্বা, বেলনাকার, মসৃণ, সোজা এবং সুগঠিত অনেক মুকুলবিশিষ্ট। ফুলের রং সাদা। ফোটার মৌসুম হেমন্ত থেকে শীতের প্রথমভাগ পর্যন্ত।

১৪ / ১৪
ছবি: মোকারম হোসেন

সাদাঝিন্টি

খাড়া, কাঁটাহীন, প্রায় ১ মিটার উঁচু উপগুল্ম, শাখা রোমশ। গাছ ঝোপাল, অনেকগুলো ডালপালা, কাণ্ড কৌণিক, রোমশ ও সবুজ। পাতা ৪ থেকে ৭ সেন্টিমিটার লম্বা, ওপরে সবুজ, নিচ হালকা রোমশ, বিন্যাস বিপ্রতীপ।

লেখক: প্রকৃতি ও পরিবেশবিষয়ক লেখক