ডায়াবেটিস কী ও কেন

ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র আমাদের অতিপরিচিত একটি রোগ। আশপাশের বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে আমরা এই রোগ বেশি দেখতে পাই। তবে কম বয়সীদের মধ্যেও দিন দিন এ রোগের প্রকোপ বাড়ছে। এক হিসেবে দেখা গেছে, বাংলাদেশের ৮ শতাংশ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, আর দেশের মোট মৃত্যুর ৩ শতাংশের কারণ ডায়াবেটিস।

ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ, যেটি আমাদের বিপাক প্রক্রিয়া অর্থাৎ খাবার থেকে শক্তি তৈরির প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটায়। তবে রোগটির নাম এর একটি লক্ষণ অনুসারে। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা অনেকেই রাতে ঘন ঘন মূত্রত্যাগ করেন। তা থেকেই এ রোগের নাম হয়ে যায় ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ।

আমাদের খাদ্যের একটি বড় অংশ পরিপাকের পর ভেঙে গ্লুকোজ তৈরি হয়। এই গ্লুকোজ চলে যায় রক্তে। রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ (ব্লাড গ্লুকোজ লেভেল) বেড়ে গেলে অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন নির্গত হয়। ইনসুলিনের কাজ রক্ত থেকে গ্লুকোজ সরিয়ে নিয়ে তা দেহের শক্তি উৎপাদনে ব্যবহার করা, অথবা পরে ব্যবহার করার জন্য গ্লাইকোজেন হিসেবে সঞ্চয় করে রাখা।

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত একজন ব্যক্তির অগ্ন্যাশয় যথেষ্ট পরিমাণ ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না অথবা তার দেহ এই ইনসুলিন ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারে না। ফলে দেহে ইনসুলিনের কাজগুলো হয় না, অর্থাৎ রক্তে গ্লুকোজ রয়ে যায়। দীর্ঘ সময় ধরে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেশি থাকার ফল হতে পারে ভয়াবহ। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত অনেকেই পরবর্তী সময়ে হৃদ্‌রোগ, কিডনির রোগ, স্নায়বিক সমস্যা ও অন্ধত্বের শিকার হন।

ডায়াবেটিস মূলত তিন প্রকার: টাইপ–১, টাইপ–২ এবং গর্ভকালীন ডায়াবেটিস।

টাইপ–১ ডায়াবেটিসে অগ্ন্যাশয় ইনসুলিন তৈরি বন্ধ করে দেয়। সাধারণত এটা ঘটে অটোইমিউন রি–অ্যাকশনের মাধ্যমে। অর্থাৎ দেহ নিজেই অগ্ন্যাশয়ের ইনসুলিন তৈরি করা বিটা কোষগুলোকে ধ্বংস করে দেয়। তাই টাইপ–১ ডায়াবেটিসে লক্ষণগুলোও আসে খুব তাড়াতাড়ি। সাধারণত প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই এটি ধরা পড়ে। এ ডায়াবেটিসে যেহেতু ইনসুলিন তৈরি হয় না, তাই আক্রান্ত ব্যক্তিকে ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রতিদিন ইনসুলিন নিতে হয়। টাইপ–১ ডায়াবেটিস প্রতিরোধের কোনো উপায় এখনো আমাদের জানা নেই, তবে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

অন্যদিকে টাইপ–২ ডায়াবেটিসে দেহের কোষগুলো ইনসুলিন ব্যবহার করতে পারে না, তাই ব্লাড সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে থাকে না। ৯০ শতাংশ ডায়াবেটিস রোগী এ ধরনের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। সাধারণত টাইপ–২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ও লক্ষণ প্রকাশ পেতে অনেক সময় লাগে। তাই সাধারণত বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে টাইপ–২ ডায়াবেটিস ধরা পড়ে বেশি। এ ডায়াবেটিস প্রতিরোধে জীবনধারায় পরিবর্তন আনা বেশ কার্যকর। জীবনধারার পরিবর্তনের পাশাপাশি ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ খেয়ে টাইপ–২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

কোনো কোনো নারীর ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থার প্রথমে ডায়াবেটিস ধরা পড়ে, যাকে বলে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস। গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মায়ের শিশুর কিছু স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকে। এ ছাড়া মা ও শিশু দুজনেরই ভবিষ্যতে টাইপ–২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।

এখন পর্যন্ত ডায়াবেটিসের কোনো নিরাময় নেই। ওজন কমিয়ে রাখা, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম করার মাধ্যমে ডায়াবেটিসের রোগীরা স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেন। নিয়মিত ডাক্তার দেখানো এবং প্রয়োজনে ওষুধ খাওয়া বা ইনসুলিন নেওয়ার মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।

লেখক: শিক্ষার্থী, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, ঢাকা

সূত্র: ডব্লিউএইচও, সিডিসি