যদি জিজ্ঞেস করা হয়, মানবদেহের সবচেয়ে বড় অঙ্গ কোনটি, তাহলে অনেকই হয়তো বলবেন যকৃত বা ফুসফুসের কথা। কিন্তু শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও, এর কোনটাই মানবদেহের সবচেয়ে বড় অঙ্গ নয়। সঠিক উত্তরটা হল ত্বক বা চামড়া।
পায়ের আঙুল থেকে নখের ডগা পর্যন্ত আমাদের সম্পূর্ণ দেহই চামড়া বা ত্বকে আবৃত্ত। মানবদেহের সবচেয়ে বড় অঙ্গ এই ত্বক। প্রাপ্ত বয়ষ্ক মানুষের ত্বকের ওজন প্রায় ২.৭ কিলোগ্রাম। ত্বক দেহে পানিরোধী পর্দা হিসেবে কাজ করে। শরীরের কোষ এবং বাইরের পরিবেশের মাঝে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় অঙ্গটি। এছাড়াও চামড়া দেহকে আর্দ্র রাখে, দেহের ভেতরে আলো প্রবেশ করতে বাঁধা দেয়, চর্বি জমায়, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং ইনফেকশনের বিরুদ্ধে ঢাল হিসেবে কাজ করে।
আর এসব কিছু হয়, চামড়ায় থাকা তিনটি ভিন্ন কোষীয় স্তরের কল্যাণে। চামড়ার একদম বাইরের স্তরকে বলা হয় বহিঃত্বক বা এপিডার্মিস। একক কোষের চার থেকে পাঁচটি উপস্তর নিয়ে এপিডার্মিস গঠিত। ঘনক আকৃতির স্টেম কোষ থেকে এপিডার্মিসের কোষগুলো তৈরি হয়। প্রতি চার সপ্তাহে স্টেম কোষ থেকে সম্পূর্ণ নতুন ত্বক তৈরির সমপরিমাণ কোষ জন্ম নেয়।
ত্বকের এ কোষগুলোকে বলা হয় কেরাটিনোসাইটিস। কেরাটিন প্রোটিন তৈরি করে এরা। নামকরণ হয়েছে সেকারণেই। কেরাটিন প্রোটিন তন্তুর মতো কোষ। এ তন্তু আমাদের নখ ও চুল তৈরি করে। নতুন কেরাটাইনোসাইটিস তৈরি হলে, সেগুলো পুরানো কোষকে বাইরে ঠেলে দেয়। এদিকে কোষ যখন বাইরের দিকে আসে, ততই মসৃণ আর শক্ত হয়ে ওঠে। একদম বাইরে চলে আসলে কোষগুলো মরে যায়। মৃত কোষ হয় আরও শক্ত ও পানিরোধী।
ত্বকে এপিডার্মিসের পরের স্তরের নাম ডার্মিস। বাংলায় মধ্যত্বক বলা যেতে পারে। কোলাজেন নামের বিশেষ এক ধরনের প্রোটিন এ দুই স্তরের মাঝে সংযোগ হিসেবে কাজ করে। এই স্তরেই থাকে রক্ত নালী, লিম্ফ্যাটিক নালী, স্নায়ু, চুলের ফলিকল এবং ঘাম গ্রন্থি। এসব কাঠামো নমনীয় আঁশের স্তরের সঙ্গে যুক্ত থাকে। ফিব্রোব্লাস্ট নামের বিশেষ কোষে তৈরি হয় এই নমনীয় স্তর।
ত্বকের একেবারে নিচের স্তরের নাম, হাইপোডার্মিস বা অন্তঃত্বক। এ অংশটি ত্বকের অন্য দুই অংশকে শরীরের অভ্যান্তরীণ অঙ্গ—হাড়, পেশী কিংবা অন্যান্য টিস্যুর সঙ্গে যুক্ত করে। এ স্তরের কোষগুলো অ্যাডিপোসাইটিস নামে পরিচিত। এরা দেহের অতিরিক্ত শক্তি চর্বি হিসেবে জমা করে।
পুরো শরীর জুড়ে ত্বকের বিস্তৃতি। তবে সব জায়গার ত্বক কিন্তু এক নয়। জায়গাভেদে ত্বকের পুরুত্ব, তৈলাক্ততা, ঘামার বা লোমশ হওয়ার প্রবণতার ভিন্নতা দেখা যায়। হাতের তালুর দিকে তাকালেই বিষয়টি বুঝতে পারবেন। আমাদের হাতের উল্টো পাশের ত্বকের তুলনায় তালুর ত্বকের গঠন, পুরুত্ব সবই ভিন্ন। শুধু হাতের তালু নয়, পায়ের তালুতেও এই অপেক্ষাকৃত পুরু ত্বক দেখা যায়। এপিডার্মিস অংশে কোষের একটি অতিরিক্ত স্তর থাকায় এ ত্বকগুলো পুরু হয়। এছাড়াও থাকে চর্বির স্তর। এ ত্বকে চুল বা তেলের কণা তৈরি হয় না। তবে প্রচুর ঘাম তৈরি হয়। অন্যদিকে বাহুমূলের নিম্নদেশের ত্বকে যেমন লোমশ হয়, তেমনি প্রচুর তেলের কণা তৈরি করে। ফলে গন্ধ তৈরি হয়। এছাড়া ত্বকের বাকি অংশের তুলনায় এখানে পিএইচএর মান অনেক বেশি। ফলে দুর্গন্ধ তৈরি করতে সক্ষম ব্যাকটিরিয়ার বৃদ্ধি এ অঞ্চলে অনেক বেশি। চোখের পাতা হলো দেহের সবচেয়ে পাতলা ত্বক। মাত্র ০.০৪ মি.মি. পুরু। পায়ের নিচের ত্বকের তুলনায় এটি প্রায় ৪০ গুণ পাতলা।
লেখক: শিক্ষার্থী, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা
সূত্র: হাউইটওয়ার্কস ম্যাগাজিন