বাংলাদেশের সুন্দরবনের প্রাকৃতিক পরিবেশে কুমিরের বাস করে। তাই এই অঞ্চলের জেলে ও সাধারণ মানুষের জীবনে কুমির নিয়ে এক ধরনের দুশ্চিন্তা সবসময়ই থাকে। মাঝেমধ্যে শোনা যায়, কেউ নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে কুমিরের শিকার হয়েছেন। শুধু বাংলাদেশেই নয়, পৃথিবীর অনেক দেশেই মানুষ কুমিরের মুখোমুখি হয়। প্রাকৃতিক জলাভূমি ছাড়াও বিভিন্ন পুকুর, হ্রদ বা খালে কুমির বাস করে। যেমন বাগেরহাটের খান জাহান আলী মাজারের পুকুরেও কুমির আছে। যদিও কুমিরের আক্রমণ খুবই বিরল, তবু এটি মাঝেমধ্যে প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে। কুমির হলো পৃথিবীর অন্যতম শক্তিশালী বন্যপ্রাণী। তাই কখনো যদি কুমিরের মুখোমুখি হতে হয়, তাহলে কী করতে হবে তা আগে থেকেই জেনে রাখা ভালো।
প্রথমেই মনে রাখতে হবে, সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত কুমিরের প্রজনন মৌসুম। এই সময় এরা বেশি আক্রমণাত্মক ও সক্রিয় থাকে। তাই যেসব জলাশয়ে কুমির আছে, সেই এলাকাগুলোর আশপাশে চলাচলের সময় বাড়তি সাবধানতা প্রয়োজন। কুমির থেকে নিরাপদ থাকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো এদের থেকে দূরে থাকা। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস পার্কস অ্যান্ড ওয়াইল্ডলাইফ কমিশনের মতে, কুমির থেকে অন্তত ৩০ ফুট (প্রায় ৯ মিটার) দূরে থাকা উচিত। কারণ কুমির খুব অল্প দূরত্বে ঘণ্টায় ৩৫ মাইল (প্রায় ৫৬ কিমি) বেগে ছুটতে পারে। একজন মানুষের চেয়েও এরা দ্রুত দৌড়ায়।
তবে কখনো কুমিরের সামনে পড়ে গেলে পেছনে ধীরে ধীরে সরে আসা হবে বুদ্ধিমানের কাজ। আপনি যদি কুমিরের খুব কাছে চলে যান এবং কুমিরটি নিজে সরে যেতে না পারে, তবে ওরা ‘ফোঁসফোঁস’ শব্দ করতে পারে। এই শব্দ শুনলে এদের বিরক্ত না করাই ভালো। যদি কোনো কুমির নিজে থেকেই আপনার দিকে এগিয়ে আসে, তবে বিপদের আশঙ্কা থাকে। যদি কেউ কুমিরকে খাওয়ায় তাহলে আবার খাবারের আশায় কুমির তাঁর দিকে এগিয়ে যেতে পারে।
চিড়িয়াখানা বা কোনো কুমির আছে এমন এলাকায় গেলে শিশুদের বিশেষভাবে নজরে রাখতে হবে। কুকুর বা বিড়ালের মতো পোষা প্রাণীদেরও দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখতে হবে যাতে ওগুলো কোনোভাবেই খাল, নদী বা পুকুরে নামতে না পারে। কারণ, সহজে পরাস্ত করতে পারে এমন শিকার ওদের পছন্দ। কুকুর বা ছোট প্রাণীর চলাফেরা বা চিৎকারও কুমিরকে আকৃষ্ট করতে পারে।
বন্যপ্রাণী সংস্থাগুলোর পরামর্শ হলো, দিনে এবং শুধু নির্ধারিত স্থানে সাঁতার কাটতে পারেন। সাঁতারের সময় কোনো পোষা প্রাণীকে সঙ্গে রাখা যাবে না। কারণ, কুমির সবচেয়ে সক্রিয় থাকে সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত। পানিতে কুমির দেখলে শান্ত থাকতে হবে, আতঙ্কিত হওয়া যাবে না এবং কোনোভাবেই এর দিকে এগিয়ে যাওয়া যাবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, সাউথ ক্যারোলাইনা, টেক্সাসসহ বিভিন্ন স্থানে কুমিরকে খাওয়ানো আইনত নিষিদ্ধ। বাংলাদেশে যদিও তেমন কোনো আইন নেই, তবু মানুষের উচিত কুমিরকে কখনো না খাওয়ানো। বাগেরহাটের খান জাহান আলীর মাজারের পুকুরে কুমির খাওয়ানোর রীতি আছে, কিন্তু এটা খুবই বিপজ্জনক। কারণ, কুমির মানুষকে খাবারের উৎস হিসেবে ভাবতে শুরু করলে আক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
যদি কোনো কুমির আপনাকে ধরে ফেলে, তখনই প্রতিরোধ করতে হবে। এই অবস্থায় কুমিরের চোখ, নাক বা গলার মতো সংবেদনশীল অংশে আঘাত করতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামির দক্ষিণে গেটর পার্কের জেনারেল ম্যানেজার ডোনাল্ড হাউজার বলেছেন, ‘যতক্ষণ মানুষ কুমিরকে খাওয়াবে না, ততক্ষণ কোনো সমস্যা নেই। তবে কেউ যদি টানা তিনদিন কুমিরকে খাওয়ায়, তাহলে কুমির মানুষের প্রতি ভয় হারিয়ে ফেলে।’ তাই তাঁর পরামর্শ, কুমির থেকে দূরে থাকা।
যদি কোনো কুমির আপনাকে ধরে ফেলে, তখনই প্রতিরোধ করতে হবে। এই অবস্থায় কুমিরের চোখ, নাক বা গলার মতো সংবেদনশীল অংশে আঘাত করতে হবে। যতটা সম্ভব শক্তি দিয়ে কুমিরকে ঘুষি, লাথি বা ধাক্কা দিতে হবে যেন সে আপনাকে ছেড়ে দেয়। তবে বাস্তবতা হলো, একবার যদি কুমির তার চোয়ালে কাউকে ধরে ফেলে, তখন রক্ষা পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। যদিও কুমির মানুষকে সাধারণত খাওয়ার জন্য আক্রমণ করে না, তবুও এরা কাউকে কামড়ে ধরে পানির নিচে অনেকক্ষণ ধরে রাখতে পারে। এতে শ্বাসরোধ হয়ে মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে। তাই সবসময় কুমির থেকে সাবধান থাকুন।