বিড়ালজগতে বড় তারকা

ফেলিডি হলো বিড়ালজাতীয় প্রাণীগুলোর বৈজ্ঞানিক পরিবার। এই পরিবারের সব সদস্যের মধ্যে কিছু বৈশিষ্ট্যের মিল রয়েছে। তবে ফেলিডি পরিবারে রয়েছে বৈচিত্র্যময় প্রাণীও। এগুলোর দুর্দান্ত কিছু প্রতিভা রয়েছে। সে রকম কয়েকটি সবচেয়ে দ্রুততম, শক্তিশালী ও ক্ষমতাবান বিড়ালজাতীয় প্রাণীগুলো দেখে নিন...

চিতা

আফ্রিকার সমভূমি ও তৃণভূমিতে এই প্রজাতির চিতার আবাসস্থল। চারপেয়ে তথা প্রাণিজগতের মধ্যে চিতা সবচেয়ে দ্রুততম প্রাণী। দ্রুতগতির এই চিতাগুলো ৩ সেকেন্ডের মধ্যে ০-৬০ মাইল প্রতি ঘণ্টায় (০-৯০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায়) ছুটতে পারে। এগুলো অত্যন্ত চটপটে ও ক্ষিপ্রগতির প্রাণী। শিকারকে ফাঁদে ফেলতে অতি দ্রুত নিজেদের দিক পরিবর্তন করতে পারে। চিতা বর্তমানে বিপদগ্রস্ত প্রাণী। চিতার বৈজ্ঞানিক নাম অ্যাকিনোনিক্স জুব্যাটাস (Acinonyx jubatus)।

ইউরেশিয়ান লিনাক্স

তুলতুলে শরীর ও আকর্ষণীয় কান ইউরেশিয়ান লিনাক্সকে অন্য প্রজাতির বিড়াল থেকে আলাদা করেছে। পশ্চিম ইউরোপ, রাশিয়া ও মধ্য এশিয়ার বনাঞ্চলে এগুলোর দেখা পাওয়া যায়। শিকারের সময় এগুলো অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করে। শিকার দেখলেই দ্রুতগতিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে শিকারের ওপর। ইউরেশিয়ান লিনাক্স কম বিপদগ্রস্ত প্রাণী। এর বৈজ্ঞানিক নাম লিনাক্স লিনাক্স (Lynx lynx)।

কালো জাগুয়ার

দক্ষিণ আমেরিকায় এগুলোর দেখা পাওয়া যায়। প্রাচীন সংস্কৃতিতে কালো জাগুয়ারের বিশাল ভূমিকা রয়েছে। আমেরিকান আঞ্চলিক শব্দ ইয়াগুর থেকে জাগুয়ার শব্দটি এসেছে। ইয়াগুর অর্থ এক থাবায় হত্যা করতে পারে এমন প্রাণী। জাগুয়ার মাঝেমধ্যে গাছে উঠে ঘাপটি মেরে বসে থাকে শিকারের অপেক্ষায়। দূর থেকে জাগুয়ার দেখতে মিশমিশে কালো মনে হলেও এগুলোর শরীরে ছোট ছোট দাগ আছে। কালো জাগুয়ার বর্তমানে কম বিপদগ্রস্ত প্রাণী। এর বৈজ্ঞানিক নাম প্যানথেরা ওঙ্কা (Panthera onca)।

তুষার চিতা

তুষার চিতা মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার পাহাড়ে বাস করে। এগুলো উষ্ণ অঞ্চল থেকে দূরে থাকে। এগুলোর গায়ের রং ধূসর সাদা। ফলে বরফের মধ্যে সহজেই লুকিয়ে থাকতে পারে। তুলতুলে নরম পায়ের কারণে বরফের মধ্যে হাঁটতে অসুবিধা হয় না। এগুলোর দীর্ঘ লেজ শরীরের ভারসাম্য রাখতে সাহায্য করে। তুষার চিতা বর্তমানে বিপদগ্রস্ত প্রাণী। এর বৈজ্ঞানিক নাম প্যানথেরা আনসিয়া (Panthera uncia)।

বাঘ

বিড়ালজাতীয় প্রাণীর মধ্যে বাঘ সবচেয়ে ঐশ্বর্যশালী। শরীরের ডোরাকাটা দাগ বাঘকে করেছে আরও দৃষ্টিনন্দন। বাঘের জ্ঞাতি ভাইয়েরা পানি পছন্দ না করলেও এগুলো পানিতে সাঁতার কাটতে পছন্দ করে। জলে ও স্থলে একই দক্ষতায় শিকার করতে পারে। বাঘ শক্তিশালী ও পেশিবহুল প্রাণী। এগুলো সহজেই গাছে উঠতে পারে। শিকারের লোভে গাছে ঘাপটি মেরে বসে থাকে। বাঘ বর্তমানে বিপন্ন (অধিক বিপদগ্রস্ত) প্রাণী। বাংলাদেশের সুন্দরবনসহ বিভিন্ন দেশ এদের আবাসস্থল। এদের বৈজ্ঞানিক নাম প্যানথেরা টাইগ্রিস (Panthera tigris)।

গেছো বাঘ

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রেইন ফরেস্টে এগুলোর দেখা যায়। এগুলোর মুখের ওপরের পাটিতে বিশাল দুটি দাঁত রয়েছে। দেহের আকারের অনুপাতে অন্য কোনো বিড়ালজাতীয় প্রাণীর এত বড় দাঁত নেই। গেছো বাঘের লেজও অনেক লম্বা। এগুলোর শরীরে মেঘের মতো কালো কালো দাগ রয়েছে। তাই ‌আরেক নাম মেঘলা চিতা। এগুলো উচ্চ স্বরে গর্জন করতে পারে। গেছো বাঘ বর্তমানে বিপদগ্রস্ত প্রাণী। এর বৈজ্ঞানিক নাম নিওফেলিস নেবুলোসা (Neofelis nebulosa)।

সিংহ

আফ্রিকান সমভূমিতে সিংহ রাজা। বিড়ালজাতীয় প্রাণীগুলোর মধ্যে একমাত্র সিংহ দল বেঁধে বাস করে। পুরুষ সিংহগুলো স্ত্রী সিংহগুলোকে রক্ষা করে। হয়তো সে কারণেই পুরুষ সিংহগুলো অহংকারী হয়। স্ত্রী সিংহগুলো শিকার করতে গেলে পুরুষগুলো বাচ্চা সিংহগুলোর সঙ্গে খেলাধুলা করে। সিংহ বর্তমানে বিপদগ্রস্ত প্রাণী। এর বৈজ্ঞানিক নাম প্যানথেরা লিও (Panthera leo)।

চিতাবাঘ

এদের প্রায়ই গাছের ওপরে দেখা যায়। শিকারকে গাছের ওপরে বসেই খেতে পছন্দ করে চিতাবাঘ বা লেপার্ড। এদের শরীরে তিলকের মতো কালো দাগ রয়েছে। দাগগুলো ছদ্মবেশ ধারণ করতে সাহায্য করে। সাপ যেমন নিঃশব্দে মাছ ধরে, তেমনি চিতাবাঘও নিখুঁতভাবে শিকার করতে পারে। সাহারা আফ্রিকায় এদের দেখা পাওয়া যায়। চিতাবাঘ বর্তমানে বিপদগ্রস্ত প্রাণী। এর বৈজ্ঞানিক নাম প্যানথেরা পারদুস (Panthera pardus)।

গ্রন্থনা: কাজী আকাশ, সম্পাদনা দলের সদস্য, বিজ্ঞানচিন্তা

সূত্র: ওয়ার্ল্ডস অব অ্যানিমেলস ও উইকিপিডিয়া