বিজ্ঞানচিন্তা: আপনি সম্প্রতি এশিয়ার সেরা বিজ্ঞানী হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। এ স্বীকৃতি পেয়ে কেমন লাগছে?
সেঁজুতি সাহা: ভালো লাগছে। কিন্তু যেকোনো স্বীকৃতি আসলেই আমার অনেক ভয় লাগে। মনে হয়, দায়িত্ব আরও বেড়ে গেল। ছোটবেলায় কোনো পুরস্কার নিয়ে বাসায় এলেই মা বলতেন, ‘এখন এত আনন্দের দরকার নেই। এখন চিন্তা করো পরের পুরস্কারটা কীভাবে পাবে। যাঁরা পুরস্কারটা দিয়েছেন, তাঁদের আস্থাটা যেন বজায় রাখতে পারো।’ এ রকম একটা ভয় লাগছে। মনে হচ্ছে, দেশের জন্য কাজ করার দায়িত্বটা আরও বেড়ে গেছে। সঙ্গে আনন্দও লাগছে অবশ্যই।
বিজ্ঞানচিন্তা: আমাদের দেশে বিশ্বমানের গবেষণা হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য অনুপ্রেরণার বিষয়। কিছুদিন আগে আপনার সঙ্গে যখন কথা হলো, আপনি বলছিলেন, বর্তমানে ডিএনএ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন টেস্ট দেশেই করার মতো ল্যাব তৈরির কাজ করছেন, সামনে যেন জেনেটিকসের কোনো টেস্ট করার জন্য নমুনা বিদেশে পাঠাতে না হয়। এই স্বয়ংসম্পূর্ণ ল্যাব তৈরির কাজটা কোন পর্যায়ে আছে?
সেঁজুতি সাহা: প্রশ্নটা করার জন্য অনেক ধন্যবাদ। বিষয়টা নিয়ে আমরা অনেক দিন ধরেই চিন্তা করছি। অনেক বছর ধরেই একটা জেনেটিক ল্যাব তৈরির কাজ করছি। এটি দিয়ে আমরা দেশের মানুষকে খুব অল্প খরচে সেবা দিতে পারব। শুধু গবেষণার মাধ্যমে নয়, জেনেটিক টেস্টিং বা ডায়াগনস্টিকের মাধ্যমে এখনো কিন্তু আমরা বিভিন্ন হাসপাতালে সেবা দিই। কিন্তু এখানে জেনেটিকস কীভাবে আনা যায়? আমাদের ল্যাবের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। জুলাইয়ে উদ্বোধন করব। একদম জরুরি যে টেস্টগুলো, সেগুলো দিয়ে শুরু করব। যেমন ব্রাকা ওয়ান, ব্রাকা টু, ব্রেস্ট ক্যানসার স্ক্রিনিং, থ্যালাসেমিয়া—এ রকম কিছু টেস্ট দিয়ে আমরা শুরু করছি জুলাই মাস থেকে। এটা আরও বড় পরিসরে ধীরে ধীরে শুরু করব। ব্যক্তিগতভাবে আমার জন্য এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমি যেন কাজটা করতে পারি। আমি জানি না আপনারা জানেন কি না, আমি নিজেও একজন ক্যানসার সারভাইভার। আমার যখন ক্যানসার ধরা পড়ে, তখন আমি কানাডায় ছিলাম। কানাডায় আমার টেস্টগুলো সব ঠিকমতো হয়েছে। এ জন্যই কিন্তু আমি চিকিৎসা পেয়েছি। আমি কানাডায় যে সুযোগ পেয়েছি, আমি চাই বাংলাদেশের সবাই যেন একই সুযোগ পায়। আমরা জুলাই মাসেই শুরু করে দিচ্ছি। তারপর ধীরে ধীরে বাকি কাজগুলো করব।
বিজ্ঞানচিন্তা: আপনার ক্যানসারের বিষয়টা আমরা জানি। গত বছর ল্যানসেট-এ আপনাকে নিয়ে যে নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল, সেখানেও এর কথা এসেছে। এমনিতে ব্রাকা ওয়ান, ব্রাকা টু বা এ ধরনের টেস্টগুলো বেশ খরুচে। আপনারা যেটা করছেন, এটা কি সবার সাধ্যের মধ্যেই থাকবে?
সেঁজুতি সাহা: ভালো একটা প্রশ্ন করেছেন। এই টেস্টগুলো করার জন্য যে সরঞ্জাম, যেসব যন্ত্র দরকার, সেগুলো বেশ দামি। তাই টেস্টগুলো বেশ খরুচে হয়ে যায়। এ জন্যই আমরা সময় নিয়েছি যে কীভাবে খরচটা কমিয়ে আনতে পারি। আমরা একটা নন-প্রফিট অর্গানাইজেশন। আমাদের ওই চাপ নেই যে লাভ করতে হবে। কোনো ব্যক্তিগত লাভও নেই। তাতে টেস্টের দামটা এমনিতেই অনেকখানি কমে যায় রোগীদের জন্য। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, যেহেতু এখন জিনোমিকসে আমাদের অনেক অভিজ্ঞতা আছে, অনেক বিশেষজ্ঞ মিলে আমরা কাজটা করছি। মেকানিজমগুলো বুঝে নিয়েছি, কীভাবে যন্ত্রগুলো ব্যবহার করতে হয়। এটা যত বুঝব, আমরা তত অপটিমাইজ করতে পারব টেস্টগুলোকে। আমরা বিশ্বের বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে কথা বলছি। কীভাবে কোথায় কোন রিএজেন্ট দিয়ে টেস্টগুলো হয়, খরচ কী রকম। কোন যন্ত্রে রেজাল্ট কী রকম আসে ইত্যাদি। আমরা তো মানের সঙ্গে আপস করতে পারব না, তাই না? তাই আমরা সত্যিই চেষ্টা করছি যে কত কম খরচে মানুষের কাছে এই টেস্টগুলো পৌঁছে দিতে পারি। আরেকটা বিষয় হচ্ছে একটা ল্যাবে যত বেশি টেস্ট হয়, আমরা যত বেশি রিএজেন্ট কিনব, যত বেশি টেস্ট একসঙ্গে করব, খরচ তত কমবে। আমরা আশাবাদী, দুই বছরের মধ্যে আরও বড় পরিসরে কাজগুলো করতে পারব। আমরা আশা করি, দেশের নমুনাগুলো দেশেই থাকবে। টেস্টিংয়ের জন্য আমাদের খরচ আস্তে আস্তে আরও কমে যাবে তখন। ফলে রোগীদের খরচ কমবে।
বিজ্ঞানচিন্তা: এটি আসলে খুব ভালো উদ্যোগ। ক্যানসারের টেস্টের বিষয়টি। বাংলাদেশে ক্যানসার নিয়ে বেশ কিছু উদ্যোগ শুরু হয়েছে। সচেতনতাটা বাড়ছে ধীরে ধীরে। সংশ্লিষ্ট আরেকটি প্রশ্ন করি। জেনেটিক কাউন্সেলিংয়ের তো একটা বিষয় আছে। আমাদের দেশে বিষয়টি তেমন প্রচলিত নয়। ক্যানসারের কথা বলি বা পরিবার পরিকল্পনার কথা বলি, এগুলো নিয়ে ভাবনা কম। জেনেটিক কাউন্সেলিং নিয়ে ভবিষ্যতে আপনাদের কি কোনো পরিকল্পনা আছে? আপনারা কি এটা নিয়ে ভবিষ্যতে কোনো ক্যাম্পেইন করবেন?
সেঁজুতি সাহা: আপনাদের প্রশ্নগুলো আমার অসম্ভব পছন্দ হচ্ছে। একদম বাস্তব প্রশ্নগুলো করছেন। বাংলাদেশে শুধু এই টেস্টগুলো করলেই হবে না, টেস্টের রেজাল্টগুলো মানুষকে বোঝাতে হবে। মানুষের জন্য কাউন্সেলিং অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ। তার আগে টেস্টগুলো কেন করা দরকার, ক্যানসার টেস্টগুলো কারা করবেন, কে রেফার করবেন, কেন করবেন—এসব বিষয়ও বোঝাতে হবে। রেজাল্ট পাওয়ার পর পজিটিভ হোক বা নেগেটিভ, আমরা আউটকামটা কীভাবে বোঝাব? এটা আমরা পারব না, আমরা ল্যাবে কাজ করি। আমরা এ নিয়ে কথা বলেছি। সব সময় টেস্টগুলো করব ডাক্তারের রেফারেন্সে। ডাক্তারকে রেজাল্টগুলো দেব। ডাক্তার এর দায়িত্ব নেবেন। তিনি নিশ্চিত করবেন যেন রেজাল্টগুলো ঠিকভাবে ব্যবহৃত হয়। রোগীদের তথ্য যেন গোপন থাকে, সেই সঙ্গে যথাযথ প্রক্রিয়া ও সেবা যেন নিশ্চিত করা যায়। যথাযথ প্রক্রিয়া যেন মানা হয়। কিন্তু একই সঙ্গে কাউন্সেলিংয়ের জন্য আলাদা একটা স্ট্রিম তৈরি করতে হবে। জেনেটিক কাউন্সিলররা ভিন্ন একটা দল। এটা ভিন্ন একটি বিষয়, এতে আলাদাভাবে বিশেষজ্ঞ হতে হয়। এখন অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং আছে। আমি জানি না, জেনেটিক কাউন্সেলিং পড়ানো হয় কি না। কিন্তু ও রকম বিশেষজ্ঞ আমাদের তৈরি করতে হবে। সেজন্য উদ্যোগ নিতে হবে। টেস্টের রেজাল্টগুলো ঠিকভাবে ইন্টারপ্রেট করে রোগীদের সামনে তুলে ধরতে হবে।
বিজ্ঞানচিন্তা: আপনি দেশে বসে বিশ্বমানের গবেষণা করছেন। এ বিষয়ে দুটি জিনিস জানতে চাই। আমাদের তো প্রযুক্তি বা ফান্ডিংয়ের একটা অভাব আছে। আবার প্রযুক্তিগুলো নিয়ে আসতে শুল্কও বেশি। এ ধরনের কিছু ঝামেলা আছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে গবেষণার ভবিষ্যৎ কেমন দেখেন? ভবিষ্যতে কতটুকু কী করা সম্ভব হবে?
সেঁজুতি সাহা: প্রথমত, সরঞ্জাম পাওয়াই কষ্ট। আমাদের এখানে প্রযুক্তির একটা অভাব আছে। সরঞ্জাম, যন্ত্রপাতি আনাটা খুব কঠিন। খরচ আমাদের বেশি হয় দুই কারণে। যেমন যাদের কাছ থেকে আমরা মেশিনগুলো কিনি। আমাদের কাছে সিকোয়েন্সিংয়ের মেশিন আছে। এই মেশিন বানায় ইলুমিনা। পিসিআর যন্ত্র আছে। এগুলো বিভিন্ন কোম্পানি বানায়। কোম্পানিগুলো কিন্তু আমাদের কাছে সরাসরি বিক্রি করে না। আমাদের দেশে ডিস্ট্রিবিউশনের জন্য অনেক কোম্পানি আছে। ওদের মাধ্যমে আমাদের কাছে আসে। সরাসরি আমাদের কাছে যদি বিক্রি করত, তাহলে কিন্তু আমাদের খরচ কম পড়ত। মাঝের ওই পথ দিয়ে আমাদের কাছে আসত না। আমরা সরাসরি কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে কিনে নিতাম।
আবার আমাদের অনেক অনেক বেশি ট্যাক্স দিতে হয়। যেমন ১০০ টাকার কোনো জিনিস আমার হাতে আসতে আসতে ২০০ টাকা খরচ হয়ে যায়। এটা একটা বড় সমস্যা গবেষণার জন্য। আমরা তো গবেষণা করছি, দেশের জন্য কাজ করছি। লাভ করছি না। গবেষণার ক্ষেত্রে ট্যাক্স মওকুফ করায় তাই সরকারের সহযোগিতা জরুরি। এই সবকিছুই আসলে ফান্ডিং, তহবিল, অনুদান। নীতিনির্ধারকেরা তো কত কিছু ব্যালান্স করেন। আমাদের দেশে কত কাজ হচ্ছে—নতুন রাস্তা থেকে শুরু করে কত কত উদ্যোগ। ভালো কাজ হচ্ছে আসলে। সবার জন্য স্কুল নিশ্চিত করা, খাদ্য নিশ্চিত করা। অনেক অনেক প্রায়োরিটি। তা ছাড়া গবেষণা তো এখন বিশাল একটা দিক। সবকিছু ব্যালান্স করতে গিয়ে আমরা প্রয়োজনীয় টাকাটা বরাদ্দ করতে পারি না। বাংলাদেশে গবেষণায় যে অনেক কম টাকা, তা কিন্তু নয়। গত দুই বছর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনেক উদ্যোগ নিয়েছেন। বারবার বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে বলেছেন, গবেষণা কতটা জরুরি। এর জন্য আলাদা ফান্ড বরাদ্দ দিয়েছেন। দেখা যায়, আমরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গবেষণার জন্য ফান্ডিং বা বরাদ্দ পাচ্ছি। কিন্তু ওটার অতটা অপটিমাল ব্যবহার হয় না। দেখা যাচ্ছে, মেশিন কেনার জন্য ফান্ড আসছে। মেশিনটা আমরা শেষ পর্যন্ত কিনছি। কিন্তু মেশিনটা ব্যবহার করার জন্য যে বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন, সেটা নেই। আবার দেখা যায়, আমরা এক কোটি টাকা দিয়ে মেশিনটা কিনছি, সেটা এক বছর অতটা কাজে লাগল না। ব্যবহৃত হলো না। ওই এক বছর মেশিনটার মেইনটেন্যান্সের জন্য লাগল ১০ লাখ টাকা। পুরো বছর ধরেই মেশিনটা মেইনটেইন করতে হবে। প্ল্যানটা যাওয়ার আগেই তাই চিন্তা করতে হবে যে কার কাছে গ্র্যান্ট যাবে। যার কাছে যাবে, তার ট্র্যাক রেকর্ড আছে কি না। তার কি সক্ষমতা আছে? সময় শেষ হওয়ার পর দেখতে হবে, যেসব কারণে অনুদান দেওয়া হয়েছিল, সেটা কি তারা সম্পূর্ণ করতে পেরেছে? তৃতীয়ত, যে মেশিনটা দেওয়া হচ্ছে, মেশিনটা সার্ভিসিং করার জন্য সাহায্য করা। যেন মেশিনটা সক্রিয় থাকে। এই বিষয়গুলো খুব জরুরি। আমাদের বাংলাদেশে মেশিনের অভাব নেই। অসাধারণ সব ল্যাব আছে। কিন্তু মেশিনগুলো ব্যবহার করার জন্য আমাদের দক্ষ জনবল কম। মেশিনগুলো মেইনটেইন করার জন্য তাই একটা বাজেট লাগবে।
বিজ্ঞানচিন্তা: আপনারা স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন ওয়ার্কশপ করেন, বিভিন্ন স্কুলে যান। স্কুলের ছেলেমেয়েরা আপনাদের এখানে আসে। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যদি আপনার প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্ন করতে চায় বা আপনাদের সঙ্গে কাজ করতে চায়, তাহলে তাদের প্রস্তুতিটা কী রকম হওয়া উচিত?
সেঁজুতি সাহা: আমাদের একটা প্রোগ্রাম আছে। নাম হলো ‘গড়ব বিজ্ঞানী সাজাব বাংলাদেশ’। ইংরেজি নাম হলো ‘বিল্ডিং সায়েন্টিস্টস ফর বাংলাদেশ’। এখানে তিনটি ধারা আছে। প্রথম ধারাটি হলো স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য। ক্লাস টুয়েলভ পর্যন্ত। দ্বিতীয়টি কারিগরি শিক্ষার জন্য। একদম হাতে-কলমে কাজ। এটা ইউনিভার্সিটি থেকে শুরু করে যেকোনো বয়স পর্যন্ত। প্রথম দুটি ধারার মধ্যে প্রথম ধারায় বিজ্ঞানকে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য আমরা স্কুলে ক্যাম্প করি। সায়েন্স ডিসকাশন করি। দ্বিতীয় ধারাটি হচ্ছে মানুষকে বিজ্ঞানের কাছে নিয়ে আসা। যেকোনো স্কুল থেকে আমাদের এখানে অ্যাপ্লাই করতে পারবে। এর মধ্যে আবার অনেক ছোট ছোট প্রোগ্রাম আছে অ্যাপ্লাই করার জন্য। ‘এক দিনের বিজ্ঞানী’, ‘তিন দিনের জীবাণুর গোয়েন্দা’, ‘দুই সপ্তাহের রোটেশন প্রোগ্রাম’—এ রকম ছোট ছোট প্রোগ্রামে অ্যাপ্লাই করে আসতে পারে। এর জন্য প্রস্তুতির একেবারেই কিছু নেই। ভালোবাসা থাকলেই আসতে পারবে। আমরা কারও স্কুলের রেজাল্ট দেখি না। কে কোন স্কুলে পড়ে, তা-ও দেখি না। শুধু অ্যাপ্লাই করতে হবে ও নিশ্চিত করতে হবে যে ওই শিক্ষার্থী বিজ্ঞানে আগ্রহী। কেউ যদি আগ্রহ দেখায়, কৌতূহল দেখায়, তাহলেই অংশগ্রহণ করতে পারে আমাদের এখানে এসে থাকার জন্য, আমাদের সঙ্গে ঘোরার জন্য।
আমাদের ওয়েবসাইটে অ্যাপ্লাই করা যায়। chrfbd.org-তে গেলেই একটা জায়গায় লেখা আছে, ‘বিল্ডিং সায়েন্টিস্টস ফর বাংলাদেশ’। ওখানে ক্লিক করলেই সব প্রোগ্রাম চলে আসবে, সব ধারা পাওয়া যাবে। যেকোনো প্রোগ্রামে ঢুকে বা যেকোনো ধারায় ঢুকে যেকোনো প্রোগ্রামে ইচ্ছেমতো অ্যাপ্লাই করা যাবে খুব সহজে। ওখানে আবেদন ফরম দেওয়া আছে। ফরম পূরণ করলেই আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কল করি। আমাদের সব কটি প্রোগ্রাম ফ্রি নয়। কিছু প্রোগ্রামে ফি আছে। আবার অনেক প্রোগ্রামে আমরা ফিন্যান্সিয়াল অ্যাসিস্ট্যান্স দিই। আমরা জানি, বাংলাদেশের কিছু শিক্ষার্থী টাকা দিয়ে এই প্রোগ্রামগুলো করতে পারবে। কিন্তু অনেক শিক্ষার্থীর ফি দিয়ে এই প্রোগ্রামগুলোতে অংশগ্রহণ করা সম্ভব নয়। তাই আমাদের ফিন্যান্সিয়াল অ্যাসিস্ট্যান্স আছে।
বিজ্ঞানচিন্তা: পাঠকদের জন্য কিছু বলবেন?
সেঁজুতি সাহা: আমরা বিজ্ঞানী হই বা যা-ই হই, যেটাই হতে চাই, বিজ্ঞানমনস্ক হতে হলে সবার আগে ভালো মানুষ হতে হবে। দেশের জন্য কাজ করতে হবে। আমরা যারা বিজ্ঞান ভালোবাসি এবং বিজ্ঞানচিন্তা পড়ি, সবাইকে যে বিজ্ঞানী হতে হবে, এমন নয়। তবে আমরা চাই যে বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীদের প্রতি আমাদের একটা সম্মান থাকতে হবে। আমাদের মনে হয়, সমাজ থেকে আমরা বিজ্ঞানীরা যে সম্মানটা পাওয়ার কথা, সেটা পাই না। দেখা যায় যে আমি এবং একজন মুভিস্টার যদি কোনো অনুষ্ঠানে যাই, তাহলে ওই স্টার অনেক বেশি অ্যাটেনশন পান। আমাদের সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি ও রকম। আমরা বিজ্ঞানকে সিরিয়াসলি নিই না। আমরা যাঁরা বিজ্ঞানচিন্তা পড়ি, সবাই মিলে চেষ্টা করব আশপাশের সবাই যেন বিজ্ঞানীদের সম্মান করেন। বিজ্ঞান ছাড়া কোনো দেশ এগোতে পারে না। এটাই বলব যে বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীদের সম্মানটা দিতে হবে। বিসিএস দিয়ে অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে যাই, অনেক অনেক বিজ্ঞানী মাইক্রোবায়োলজি পড়ে বিসিএস দেন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে ৫০ ভাগ স্টুডেন্ট আমাকে বলে যে আমি বিসিএস দিতে চাই। কোনো সমস্যা নেই। তুমি পলিসি মেকার হও। কিন্তু ওই জায়গায় বসে তুমি যেন বিজ্ঞানীদের সাপোর্ট করো। তুমি যেন মর্যাদাটা দাও।
বিজ্ঞানচিন্তা: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
সেঁজুতি সাহা: বিজ্ঞানচিন্তাকেও ধন্যবাদ।
অনুলিখন: আহমাদ মুদ্দাসসের