মানুষের দেহকোষ ঝরে না পড়লে কী হতো

প্রতিদিন অসংখ্য মৃতকোষ তৈরি হচ্ছে আমাদের দেহে।ছবি: সংগৃহীত

সবারই জানা, আমাদের দেহ অগণিত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কোষের সমন্বয়ে গঠিত। এসব কোষ শরীরের সুনির্দিষ্ট কাজে নিয়োজিত। কিন্তু প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে আমাদের অজান্তে প্রতিদিনই কিছু কোষের কার্যক্ষমতা নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। সেগুলোকে বলা হয় মৃতকোষ।

প্রতিদিন অসংখ্য মৃতকোষ তৈরি হচ্ছে আমাদের দেহে। অর্থাৎ মারা যাচ্ছে। তবে এর সঠিক পরিমাণ নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে মতভেদ আছে। কেউ বলেন, প্রতিদিন প্রায় ১০ লাখ কোষ মারা যাচ্ছে। আবার কেউ কেউ বলেন, এর পরিমাণ আরও বেশি। ১০ লাখে কোষের হিসাব সঠিক বলে মেনে নিলে প্রতিদিন প্রায় ১ দশমিক ২ কেজি কোষ অকেজো হয়ে যাচ্ছে। মৃতকোষ ধীরে ধীরে দেহ থেকে খসে পড়ে। ঘরে প্রতিদিন যত ময়লা বা ধুলোবালি জমে, তার অনেকাংশই থাকে এসব মৃতকোষ। তবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কারণ, মৃতকোষের সেই শূন্যস্থান নতুন সজীব কোষে পূরণ হচ্ছে।

কিন্তু কোনো কারণে যদি শরীরের সজীব কোষ মৃতকোষে পরিণত না হতো, তাহলে কী হতো?

আরও পড়ুন

ধরা যাক, কারো ওজন ৫০ কেজি। তার শরীরের পুরাতন কোষ না মরলে ওজন প্রতিদিন শতকরা এক ভাগ কমার বদলে বাড়তে থাকবে। অর্থাৎ তার শরীরের ভর প্রতিদিন প্রায় আধা কেজি করে বাড়বে। এভাবে তার ভর চক্র বৃদ্ধি হারে বাড়তে বাড়তে ৮০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে হয়ে যাবে দ্বিগুণ। কাজেই মাত্র এক বছর পর তার ভর হবে প্রায় ৬০০ কেজি, দুই বছরে প্রায় ৭ হাজার কেজিরও বেশি এবং তিন বছর পর এই ভর বেড়ে দাঁড়াবে ৮৬ হাজার কেজির বেশি! এভাবে তার বয়স ৭০ হতে হতে ওজন হয়ে যেত হিমালয় পর্বতের চেয়েও বেশি। তখন শুধু রূপকথার বইয়ের পাতায় বা সিনেমার পর্দায় নয়, বাস্তবেই দেখা যেত দৈত্য-দানব।

এই দানবাকৃতির মানুষের পদভারে পৃথিবীর কী করুণ অবস্থা দাঁড়াত, একবার চোখ বন্ধ করে ভেবে দেখতে পারেন! পৃথিবী এসব দানবের কজনের খাদ্য জোটাতে পারত, সেটাও ভেবে দেখার বিষয়। কাজেই আমাদের দেহকোষ যে প্রতিদিন মৃতকোষে পরিণত হয়ে দেহ থেকে ঝরে পড়ছে, তাতে দুঃখ না পেয়ে এবার খুশি হতে পারেন।

লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, বিজ্ঞানচিন্তা

আরও পড়ুন