ম্যানগ্রোভ ফটোগ্রাফি অ্যাওয়ার্ডস ২০২৫
ম্যানগ্রোভ বন পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই বনের অপরূপ সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্যের কারণে সারা বিশ্বের আলোকচিত্রীদের কাছে এক আকর্ষণীয় স্থান। ম্যানগ্রোভ বনের গুরুত্ব তুলে ধরতে প্রতিবছর ‘ম্যানগ্রোভ অ্যাকশন প্রজেক্ট’ নামে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি সংস্থা ‘ম্যানগ্রোভ ফটোগ্রাফি অ্যাওয়ার্ডস’ আয়োজন করে। এই সংস্থাটি বিশ্বব্যাপী ম্যানগ্রোভ বন রক্ষা ও উন্নয়নে কাজ করে। এটা এই প্রতিযোগিতার ১১তম বছর। এ বছর ৭৮টি দেশ থেকে ৩ হাজারের বেশি ছবি জমা পড়ে। সম্প্রতি এই প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। সেখান থেকে বাছাই করা সেরা ৭টি ছবি বিজ্ঞানচিন্তার পাঠকদের জন্য এখানে প্রকাশ করা হলো।
পাখির চোখে শিকারী ও শিকার
সাগরের পানিতে শিকার করছে হাঙর। তা ওপর থেকে দেখছে এক ঝাঁক রোজিয়েট স্পুনবিল পাখি। আবার ওদের ওপর থেকে ছবি তুলেছেন ফটোগ্রাফার মার্ক ইয়ান কুক। ফ্লোরিডা উপসাগরের ম্যানগ্রোভ অঞ্চলে একসময় রোজিয়েট স্পুনবিল পাখির আধিপত্য ছিল। এদের চামচের মতো দেখতে অদ্ভুত ঠোঁট আর গোলাপি পালক মুগ্ধ করত সবাইকে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন ও খাবার সংকটের কারণে সংখ্যা দিন দিন কমছে। এক সময়ের পরিচিত এই পাখি এখন সেই অঞ্চলে দুর্লভ হয়ে উঠেছে। এবারের ম্যানগ্রোভ ফটোগ্রাফি অ্যাওয়ার্ডস ২০২৫ এর সব বিভাগ মিলিয়ে সেরা ছবি হয়েছে এটি।
পরিযায়ী পাখিদের নিরাপদ আশ্রয়
সৌদি আরবের জিজান অঞ্চলে অবস্থিত ম্যানগ্রোভ বন পরিযায়ী পাখিদের জন্য একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ আশ্রয়স্থল। ইউরোপ থেকে আফ্রিকায় যাওয়ার পথে ফ্লেমিঙ্গোর মতো পরিযায়ী পাখিরা এই ম্যানগ্রোভ বনে বিশ্রাম ও খাবারের জন্য বিরতি নেয়। এই উপকূলীয় অঞ্চলের শৈবাল, ক্রাস্টেসিয়ান এবং ক্ষুদ্র প্লাঙ্কটনে ভরা। খাবারের পাশাপাশি ম্যানগ্রোভ বনের ঘন মূল এবং শান্ত পরিবেশ পাখিদের শিকারি প্রাণী ও অন্যান্য ঝামেলা থেকে সুরক্ষা দেয়। এই নিরাপদ পরিবেশে পাখিরা দীর্ঘ যাত্রার ক্লান্তি দূর করে শক্তি ফিরে পায়। ফটোগ্রাফার ইব্রাহিম আলশোয়ামিন সেই ম্যানগ্রোভ বনের উপকুল থেকে একদল ফ্লেমিঙ্গোর ছবিটি তোলেন।
পাতাললোকের প্রহরী
কুমিরটি এমন ভাবে পানিতে ভাসছে, দেখে মনে হচ্ছে শুন্যে ভাসছে। পানি বেশি স্বচ্ছ হওয়ায় এমনটা মনে হয়। ক্যামেরার আলো দেখে পানির ওপরে উঠে এসেছিল কুমির। তখন ছবিটি তুলেছেন রোডলফে গুইগার্ড।
গন্ধচিহ্ন দিতে গিয়ে বিপত্তি
সুন্দরবনের মতো জায়গায়ও বাঘের জীবন খুবই চ্যালেঞ্জিং। সেখানে প্রতি ছয় ঘণ্টা পর পর বাঘেদের এলাকা জোয়ারের পানিতে ডুবে যায়। অনেকের ধারণা, বাঘেরা এই কারণে গন্ধচিহ্ন দিয়ে এদের এলাকা চিহ্নিত করে না। কারণ পানিতে দ্রুত সেই চিহ্ন মুছে যায়। তবে এই ধারণা ভুল প্রমাণ করে ত্রিকাংশ শর্মা নামের একজন ফটোগ্রাফার। তিনি বাঘের এমন বিরল আচরণ ক্যামেরাবন্দি করার সুযোগ পেয়েছিলেন। ছবিতে দেখা যায়, একটি বাঘ ওর এলাকা চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু মজার বিষয় হলো, এই কাজটি করতে গিয়ে বাঘটির সমস্ত প্রস্রাব আরেকটি বাঘের মুখেই গিয়ে লাগে। এই ছবিটি সুন্দরবনের বাঘেদের জীবনের একটি বিরল ও মজার মুহূর্ত।
ম্যানগ্রোভের নীরব প্রহরী
২০২১ সালে সুন্দরবন বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভে নৌকা নিয়ে বাঘের খোঁজে বেরিয়েছিলেন তন্ময় দাস কর্মকার। অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও বাঘের দেখা মেলেনি। যখন বন থেকে ফিরছিলেন, ঠিক তখনই ম্যানগ্রোভের ছায়া থেকে একটি ঘুমন্ত বন বিড়াল বেরিয়ে আসে। বিড়ালটি শরীর টান টান করে আড়মোড়া ভেঙে হাই তোলার সময় ওর ধারালো দাঁতগুলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল। ঠিক তখনি ছবিটি তোলেন তন্ময় দাস কর্মকার। এরপর বন বিড়ালটি আবার ম্যানগ্রোভের ঘন জঙ্গলে অদৃশ্য হয়ে যায়।
নখরের ক্ষমতা
সূর্যাস্তের সময় কাদামাটিতে একটি পুরুষ ফিডলার কাঁকড়ার এক বিশেষ অঙ্গভঙ্গি এটা। সঙ্গীনিকে আকর্ষণ করার জন্য পুরুষ কাঁকড়া বিশাল নখটি নাড়াতে থাকে এবং বিশেষ শব্দ তৈরি করে। রাতে এই আচরণ আরও তীব্র হয় এবং অনেক সময় অন্যান্য পুরুষ কাঁকড়ার সঙ্গে একই তালে এই অঙ্গভঙ্গি করতে দেখা যায়। সেই মুহুর্তের ছবি তুলেছেন গঞ্জালেজ ডি রুয়েদা।
নাচতে থাকা গাছগুলো
ইন্দোনেশিয়ার সুম্বা দ্বীপে এমন কিছু গাছ দেখা যায়, যেগুলোর বাঁকানো ডালপালা দেখে মনে হয় যেন এরা নাচছে। এই ছবিতে সুম্বার এমন একটি নাচতে থাকা গাছকে ছবি দেখা যাচ্ছে। ছবিটি তুলেছেন ম্যাক্স টেরউইন্ড।