জিনবিজ্ঞানের বিচিত্র জগতে

পাশ্চাত্য ধ্রুপদী সঙ্গীতের এক বিখ্যাত নাম নিকোলো প্যাগানিনি। হাতের আঙ্গুলগুলো অদ্ভুতভাবে বাঁকিয়ে বেহালার চার তারে তিনি আশ্চর্য সুর তুলতেন। এত বেশি বেঁকে যেত তার আঙ্গুল, লোকে ভাবত তিনি শয়তানের উপাসনা করেন। তাঁর মৃত্যুর দেড় শ বছর পরে এ রহস্যের সমাধান করে বিজ্ঞান। জানা যায়, তিনি আক্রান্ত ছিলেন মরফান সিনড্রোমে। এই রোগে আক্রান্তদের হাতের আঙ্গুলের গিঁট ও অন্যান্য সংযোজক কলা খানিকটা লম্বা হয়ে যায়। আঙ্গুল অদ্ভুতভাবে বাঁকিয়ে ফেলার রহস্য ছিল এই।

শুধু প্যাগানিনি নন, আরও অনেক বিখ্যাত মানুষের জীবনের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে এমন বিভিন্ন রোগ। রামানুজন যে অটিজমে আক্রান্ত ছিলেন কিংবা আইনস্টাইন বা নিউটনের যে অ্যাসপার্গাস সিনড্রোম ছিল, সে কথা অনেকেই জানেন। এসবের পেছনে দায়ী মূলত একটি জিনিস-ই—ডিএনএ। চার অক্ষরের বিভিন্ন বিন্যাসে গঠিত জীবনের নীল নকশা।

প্যাগানিনির গল্প থেকে যে যাত্রা শুরু, তার দ্বিতীয় অধ্যায়ে উঠে এসেছে বহুল জিজ্ঞাসিত একটি প্রশ্নের উত্তর—আমরা কেন বাবা-মায়ের মতো? উত্তরটা দিয়েছি একটু আগেই—ডিএনএ। এই ডিএনএ আমরা পাই বাবা-মার সূত্রে। কীভাবে পাই, কীভাবে এটি কাজ করে, তার নাম বংশগতিবিদ্যা। দ্বিতীয় অধ্যায়ের আলোচ্য বিষয়ও তাই, বংশগতিবিদ্যার অ-আ-ক-খ।

জেনেটিক্স: বংশগতিবিদ্যার সহজ পাঠ ।। আরাফাত রহমান ।। প্রকাশক: দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (ইউপিএল) ও প্রকৃতি-পরিচয় ।। প্রচ্ছদ: সব্যসাচী হাজরা ।। পৃষ্ঠা: ২০৭ ।। মূল্য: ৪৩০ টাকা

বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখার তুলনায় জেনেটিকস বা বংশগতিবিদ্যার উদ্ভব ও বিস্তৃতি ঘটেছে অনেক পরে। বিভিন্ন গবেষণার হাত ধরে বিজ্ঞানের এ শাখাটি কীভাবে গড়ে উঠল, এ নিয়েই তৃতীয় অধ্যায়ের আলোচনা।

চতুর্থ অধ্যায়ে লেখক পাঠককে নিয়ে যাবেন বংশগতিবিদ্যার গভীরে। জিনোম, জিনের গঠন ও নিয়ন্ত্রণ, বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের বৈচিত্র্য ইত্যাদি উঠে এসেছে এ অধ্যায়ে।

জীবের বৈশিষ্ট্যে এই বিচিত্রতা আসে মিউটেশনের মাধ্যমে। এই মিউটেশন বা জিনগত পরিবর্তনের নানা দিক আলোচিত হয়েছে বইটির পঞ্চম অধ্যায়ে।

এভাবে পরের তিনটি অধ্যায়ে একে একে আলোচিত হয়েছে এপিজেনেটিক্স, আধুনিক জিনবিজ্ঞানের বহুল আলোচিত প্রযুক্তি, জৈব কাঁচি ক্রিসপারের বিভিন্ন দিক, জিনগত প্রভাবের পাশাপাশি জীবের বৈশিষ্ট্যের ওপর সামাজিক প্রভাব ইত্যাদি।

জীববিজ্ঞান এমনিতেই বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখার তুলনায় একটুখানি জটিল। মহাবিশ্বের অন্যতম জটিল বিষয়—জীববিজ্ঞানের এ শাখার আলোচ্য বিষয়। তবু লেখক যথাসম্ভব সহজভাবে, মজার বিভিন্ন উপমা দিয়ে সহজে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন বিষয়গুলো। পুরোপুরি রঙিন ছবি আছে পাতায় পাতায়। বলা হয়, একটা ছবি একাই দশ পাতার গল্প বলতে পারে। রঙিন ছবিগুলো তাই পাঠকের বেশ কাজে লাগবে, বলা বাহুল্য।

বইটি বাংলায় বিজ্ঞান বইয়ের জগতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। লেখক আরাফাত রহমান নিজে পিএইচডি গবেষক ও শিক্ষকতার সঙ্গে জড়িত। তাই বিষয়গুলোর গভীরে ঢোকার পাশাপাশি সহজভাবে ব্যাখ্যার উপায় তাঁর জানা৷ বইয়ের পাতায় পাতায় এর প্রমাণ পাওয়া যাবে।

বইটি প্রকাশ করেছে ইউপিএলের সহযোগী প্রকাশনা, প্রকৃতি-পরিচয়। পাওয়া যাবে বইমেলায় ইউপিএলের প্যাভিলিয়নে, প্রকৃতি-পরিচয়ের স্টলে ও অফলাইন-অনলাইন বিভিন্ন বইয়ের দোকানে।