মানুষের শরীরের অঙ্গ ৭৮টি নাকি অসীম
হাজার বছর ধরে মানুষ নিজের শরীরের ভেতরটা বোঝার চেষ্টা করছে। প্রাচীন মিশরীয়রা মৃতদেহ সংরক্ষণের সময় ভেতরের অঙ্গ বের করে পরীক্ষা করত। চীনের একটি প্রাচীন সমাধি থেকে পাওয়া চিকিৎসা দলিলকে মানবদেহ নিয়ে লেখা সবচেয়ে পুরোনো শারীরস্থানিক নথি হিসেবে ধরা হয়। এত সময় পেরিয়ে আজ কি আমরা জানি, মানুষের দেহে মোট কতটি অঙ্গ আছে?
অঙ্গ হলো বিভিন্ন টিস্যুর সমষ্টি যা একসঙ্গে কাজ করে একটি নির্দিষ্ট কাজ সম্পন্ন করে। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব কলোরাডোর স্কুল অব মেডিসিনের প্রফেসর লিসা এম জে লি বলেন, ‘প্রতিটি অঙ্গই কোনো না কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে।’
তবে সব অঙ্গ বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য নয়। মাত্র পাঁচটি অঙ্গ—মস্তিষ্ক, হৃৎপিণ্ড, যকৃৎ, অন্তত একটি কিডনি এবং অন্তত একটি ফুসফুস—বেঁচে থাকার জন্য যথেষ্ট। এর যেকোনো একটির সম্পূর্ণ কার্যক্ষমতা হারালে মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, মানুষের দেহ অনেক অঙ্গ ছাড়া বেঁচে থাকতে পারে। আবার কোনো অঙ্গ বিকল হলে চিকিৎসার মাধ্যমে কৃত্রিম উপায়ে তার কাজ করানো যায়।
মানুষের শরীরে মোট কতটি অঙ্গ
এ প্রশ্নের উত্তর নির্ভর করে আপনি কাকে জিজ্ঞেস করছেন, আর তিনি কীভাবে গণনা করছেন। সাধারণভাবে মানুষের শরীরে ৭৮টি অঙ্গ থাকার কথা। এ তালিকায় আছে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ—জিহ্বা, পেট, থাইরয়েড, ইউরেথ্রা, অগ্ন্যাশয় ও অন্যান্য অঙ্গ। সব কটি হাড়কে একটি অঙ্গ ও সব কটি দাঁতকে একটি অঙ্গ হিসেবে গণনা করা হয়।
শারীরস্থানবিদদের মধ্যে অঙ্গ গণনা নিয়ে ভিন্নমত আছে। টিস্যু নিয়ে কাজ করা মাইক্রোস্কোপিক স্তরের বিজ্ঞানীরা (যেমন প্রফেসর লি) বেশি অঙ্গ গণনা করেন। আবার শুধু খালি চোখে দেখা যায় এমন অংশগুলো গণনা করলে তালিকা ছোট হয়।
২০১৭ সালে বিজ্ঞানীরা মেসেন্টারিকে (যা অন্ত্রকে পেটের দেয়ালের সঙ্গে যুক্ত রাখে) একটি অঙ্গ ঘোষণা করেন। যদিও বিষয়টি নিয়ে খুব বেশি বিতর্ক ছিল না, কারণ অনেক বিশেষজ্ঞই আগে থেকেই এটিকে কার্যত অঙ্গ হিসেবে দেখতেন। তবে এমন কোনো সংস্থা নেই, যারা আনুষ্ঠানিকভাবে ঠিক করবে মোট কতটি অঙ্গ আছে বা কোনটি অঙ্গ হিসেবে গণ্য হবে।
প্রতিটি দাঁত আলাদা করে গণনা করলে তালিকা বেড়ে ৩১৫টি অঙ্গ হয়ে যায়! এ ছাড়া লিগামেন্ট, টেন্ডন—এসবকে আলাদা অঙ্গ ধরলে সংখ্যাটি আরও অনেক বেড়ে যাবে।
মাইক্রোস্কোপিকভাবে দেখলে সংখ্যাটা কত
প্রফেসর লির মতে, বিভিন্ন ধরনের টিস্যু একসঙ্গে মিলেমিশে যদি একটি নির্দিষ্ট কাজ করে, তাহলে সেটিই একটি অঙ্গ। এই যুক্তিতে তিনি নখ বা নখের কাঠামোকেও অঙ্গ বলতে পারেন। এমনকি প্রতিটি দাঁতকে আলাদা একটি অঙ্গ হিসেবে ধরা যায়। কেননা একেক দাঁতের একেক কাজ।
তিনি বলেন, ‘আমি প্রতিটি হাড়কেই আলাদা অঙ্গ বলব, আর সব মিলিয়ে ২০৬টি হাড় আবার একটি অঙ্গতন্ত্র।’ যেহেতু ৭৮টির তালিকায় হাড়কে একবার গণনা করা হয়েছে, সেহেতু প্রতিটি হাড় আলাদা করে ধরলে সংখ্যায় আরও ২০৫টি যোগ হবে। মোট দাঁড়াবে ২৮৩টি অঙ্গ।
প্রতিটি দাঁত আলাদা করে গণনা করলে তালিকা বেড়ে ৩১৫টি অঙ্গ হয়ে যায়! এ ছাড়া লিগামেন্ট, টেন্ডন—এসবকে আলাদা অঙ্গ ধরলে সংখ্যাটি আরও অনেক বেড়ে যাবে। বলা যায়, এই গণনা শেষ হওয়ার নয়। অঙ্গ ৭৮টির তালিকায় স্নায়ুকে একবার ধরা হয়েছে, অথচ শরীরে স্নায়ুর সংখ্যা ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন।
বিষয়টি যতই জটিল বা বিভ্রান্তিকর হোক, প্রফেসর লি তাঁর শিক্ষার্থীদের বলেন—এ ধরনের অস্পষ্টতা মেনে নিতে শেখা উচিত। তিনি আরও বলেন, ‘যেভাবেই অঙ্গ গুনুন না কেন, এগুলোকে ভালোভাবে যত্ন নেওয়াটাই আসল কথা। আমি ক্রমেই শিখছি, শরীরে কী দিচ্ছেন, কী খাচ্ছেন, শরীরকে কর্মক্ষম রাখছেন কি না, তা আপনার কোষ, টিস্যু এবং অঙ্গগুলোর ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। আর সংখ্যার চেয়ে সেটিই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’