আজকের দিনটি পৃথিবীর

সকাল থেকে যাঁরাই গুগলে ঢুকেছেন, একটু ভিন্ন ধরনের ডুডলটি হয়তো আপনাদের চোখে পড়েছে। আলাদা করে খেয়াল করেছেন হয়তো, হয়তো কাজের চাপে চোখ এড়িয়ে গেছে। ডুডলটিতে উঠে এসেছে পৃথিবীর নানা স্থানের কিছু স্যাটেলাইট ছবি। এসব ছবিতে গুগল নিজেদের নামটি ফুটিয়ে তুলেছে। কারণ—আজকের দিনটি পৃথিবীর।

ওয়ার্ল্ড আর্থ ডে বা বিশ্ব ধরিত্রী দিবস—আজ ২২ এপ্রিল, সোমবার পালিত হচ্ছে বিশ্বজুড়ে। মানুষকে পৃথিবী, প্রাণ ও প্রকৃতির প্রতি সচেতন করে তুলতেই পালন করা হচ্ছে দিনটি।

চলতি বছরের বিশ্ব ধরিত্রী দিবসের মূল প্রতিপাদ্য ‘পৃথিবী বনাম প্লাস্টিক’। ইংরেজিতে ‘প্ল্যানেট ভার্সেস প্লাস্টিক’—এভাবে লেখা হয়েছে। এর মাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে, ২০৪০ সালের মধ্যে পৃথিবী, প্রাণ ও প্রকৃতিকে বাঁচাতে সব ধরনের প্লাস্টিকের ব্যবহার ৬০% কমিয়ে আনতে।

গুগলের এই বিশেষ ডুডলে ইংরেজি জি (G) ফুটিয়ে তোলা হয়েছে টার্কস অ্যান্ড কাইকোস আইল্যান্ডের ছবির মাধ্যমে। মেক্সিকোর স্করপিয়ন রিফ ন্যাশনাল পার্কের মাধ্যমে প্রথম ইংরেজি ও (O), দ্বিতীয় ইংরেজি ও (O) আইসল্যান্ড ভ্যাটনাজোকুল ন্যাশনাল পার্কের মাধ্যমে, দ্বিতীয় জি (G) ব্রাজিলের জাউ ন্যাশনাল পার্কের মাধ্যমে, নাইজেরিয়ার গ্রেট গ্রিন ওয়ালের মাধ্যমে এল (L) এবং অস্ট্রেলিয়ার পিলবারা আইল্যান্ড ন্যাশনাল রিজার্ভের মাধ্যমে ই (E) ফুটিয়ে তুলেছে গুগল।

এ উপলক্ষ্যে বিশেষ পোস্টার প্রকাশ করেছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসাও।

‘আর্থ ডে: ওয়াটার টাচের এভরিথিং’, অর্থাৎ পানি ছুঁয়ে দেয় সব—এই ধারণা সামনে রেখে পোস্টারটি বানিয়েছে তারা। পৃথিবীর মোট পানির প্রায় ৯৭ শতাংশই সমুদ্রের বুকে। পৃথিবীর প্রায় ৭০% জুড়ে আছে এই সমুদ্র। জাতিসংঘের তথ্যানুসারে নাসা জানাচ্ছে, পৃথিবীর প্রায় ৫০-৮০% প্রাণের আবাসস্থলও এই সমুদ্র। অর্থাৎ সমুদ্র থেকে বহুদূরে যাঁরা আছেন, তাঁদের জীবনেও সমুদ্রের প্রভাব অপরিসীম।

গত তিন বছরে নাসা ও তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো সোট (SWOT), পেইস (PACE) ও সেন্টিনেল-৬ মাইকেল ফ্রেইলিচ (Sentinel-6 Michael Freilich) নামে তিনটি কৃত্রিম উপগ্রহ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এগুলো থেকে সংগৃহীত তথ্যে দেখা গেছে, ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন ও শৈবালের মতো খুদে অণুজীবদের বড় ভূমিকা আছে সূর্যের আলো, অক্সিজেন ও পুষ্টিকে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় খাদ্যে পরিণত করার পেছনে। এরাই খুদে জুওপ্ল্যাঙ্কটন বা শেলফিশ থেকে শুরু করে তিমি, পাখির মতো প্রাণীদের খাদ্য সরবরাহ করে। এ ছাড়াও অক্সিজেন উৎপাদন, কার্বন ডাই-অক্সাইড শুষে নেওয়ার পেছনের এদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে।

ন্যাশনাল আর্থ ডে-তে নাসার পোস্টার

সমুদ্র, উপকূল, ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনের কলোনি ইত্যাদি নিয়ে ৭টি ছবি প্রকাশ করেছে নাসা। এই ছবিগুলো নাসার টেরা, অ্যাকুয়া ও ল্যান্ডসেট স্যাটেলাইট মিশনের সত্যিকার ছবি। আসুন, সেগুলো দেখে নেওয়া যাক একনজরে।

ব্ল্যাক সির ওপরে মেঘের দলের এই ছবিটি তোলা হয়েছে অ্যাকুয়া স্যাটেলাইটের মাধ্যমে। ছবিটি ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে তোলা

আর্জেন্টাইন সমুদ্রে ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনের কারখানা দেখা যাচ্ছে এখানে। গ্রীষ্ম ও বসন্তে সঠিক পরিবেশে ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন এমনই ছড়িয়ে পড়ে, যেন সৌন্দর্যের বিস্ফোরণ ঘটেছে, মেঘের মতো করে ছড়িয়ে পড়েছে এসব অণুজীব। ল্যান্ডসেট-৮ ও টেরা স্যাটেলাইট দিয়ে তোলা হয়েছে ছবিটি।

কানাডার গ্রোসওয়াটার বে থেকে ল্যান্ডসেট-৮ এর তোলা ছবি। বায়ুমণ্ডল বরফ ও পানির সঙ্গে মিশে তৈরি করেছে সুন্দর এই নকশা।

কানাডার ম্যাকেঞ্জি নদীর এই ছবি তোলা হয়েছে ল্যান্ডসেট-৮ স্যাটেলাইট দিয়ে। কানাডার দীর্ঘতম ও বৃহত্তম এই নদী সমুদ্রে বিপুল পরিমাণ বিশুদ্ধ মিঠা পানি ও পলি সরবরাহ করে।

দক্ষিণ কোরিয়ার ছেঝু ডো (Cheju Do) দ্বীপের এই ছবিটি তুলেছে টেরা স্যাটেলাইট। দ্বীপটের ওপরে মেঘে মেঘে প্রকৃতি এঁকেছে শুভ্র আলপনা।

চুকছি (Chukchi) সমুদ্রে, আলাস্কা উপকূলের কাছে পানিতে ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনের বর্ণিল ঘূর্ণি। যেন সমুদ্রে রং গুলে দিয়েছে কেউ, এক্ষুণি তুলি ভিজিয়ে ছবি আঁকতে বসবেন শিল্পী। ল্যান্ডসেট-৮ এর তোলা ছবি।

রাশিয়ার কামচাটকা পেনিনসুলা ও সাইবেরিয়ার মাঝখানে সি অব ওখোস্কের এই ছবিতে বিস্তীর্ণ বরফজমি। ২০০৭ সালে ছবিটি তোলা হয়েছে টেরা স্যাটেলাইট দিয়ে।

১৯৭০ সাল থেকে পালিত হচ্ছে বিশ্ব ধরিত্রী দিবস। আর্থডে ডটঅর্গ (সাবেক নাম ছিল আর্থ ডে নেটওয়ার্ক) নামের একটি সংগঠন বিশ্বজুড়ে দিনটি পালনের বিষয়গুলো সমন্বয় করে। বিশ্বের ১৯৩টি দেশে দিনটি পালনের মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

সূত্র: গুগল, আর্থডে ডটঅর্গ, নাসা, উইকিপিডিয়া