মানুষের স্মৃতি কি ফুরিয়ে যেতে পারে

মস্তিষ্কের প্রতীকী ছবিছবি: সংগৃহীত

অমরত্বের প্রধান সমস্যা কী বলতে পারেন? ধরুন, আপনি কোনোভাবে অমরত্বের সুযোগ পেলেন। যাই হোক মারা যাবেন না। বিষয়টা কি আপনার জন্য সুখকর হবে, নাকি অভিশাপ? কল্পবিজ্ঞানে প্রায়ই এ ধরনের দ্বন্দ্ব দেখা যায়। চিরজীবী মানুষেরা অনেক সময় নিজের শৈশবের স্মৃতি ভুলে যায়। আবার হয়ত নির্দিষ্ট সময় পর পর স্মৃতি মুছে তৈরি হয় নতুন জীবনের স্মৃতি। কেউ হয়ত ২০০ বছর পরও নিজের শৈশব মনে করতে পারেন, কিন্তু পরিচিত সব মানুষ হারিয়ে যাওয়ায় বেদনায় ভারাক্রান্ত হন।

যুগে যুগে মানুষ অমরত্বের পেছনে ছুটেছে। এখনও বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে যাচ্ছেন। কিন্তু দীর্ঘজীবনের স্মৃতি কি মস্তিষ্ক ধারণ করতে পারে? এর চেয়ে বড় কথা হলো, মস্তিষ্কের স্মৃতি রাখার জায়গা কি কখনো ফুরিয়ে আসতে পারে?

একদিক থেকে এ প্রশ্নের উত্তর, হ্যাঁ। মানুষের স্মৃতি রাখার জায়গা ফুরিয়ে আসতে পারে। স্মৃতি ব্যাপারটা নির্ভর করে নতুন নিউরাল সংযোগ তৈরির ওপর। যত নিউরাল সংযোগ তৈরি হবে স্মৃতির পরিমাণ তত বাড়বে। উল্টোভাবেও কথাটা সত্যি। মস্তিষ্কে নিউরনের সংখ্যা অসীম নয়। নিউরন হলো মস্তিষ্কের কোষ। প্রতিটি নিউরনের প্রান্তে থাকে অ্যাক্সন নামে অঙ্গাণু। এর মাধ্যমে নিউরন একটি অন্যটির সঙ্গে যুক্ত হয়। এ সংযোগকে বলা হয় নিউরাল সংযোগ।

আবার মস্তিষ্কের খুলিও সীমাবদ্ধ। মানে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মস্তিষ্কের খুলি বড় হয় না। তাই অসীম সংখ্যক নিউরন সংযোগ তৈরি হওয়া সম্ভব নয়। যদিও অন্য এক গবেষণা বলছে, স্বাস্থ্যকর মস্তিষ্ক কখনোই শেখা থামায় না।

অনেক বিজ্ঞানী বলেন, মেমরি বা স্মৃতি বলে কিছু নেই। আমরা যখন কোনো কিছু স্মৃতি হিসেবে মস্তিষ্কে সংরক্ষণ করি অথবা কোনো কিছু ঘটে আমাদের সঙ্গে, তখন মস্তিষ্কের নিউরন কোষে সংযোগ তৈরি হয়। স্মৃতি আসলে এ সংযোগ ছাড়া আর কিছু না। একই নিউরন একাধিক নিউরনের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। কোনো ঘটনা মনে করলে ওই নিউরনের সংযোগগুলো উদ্দীপ্ত হয়। উদ্দীপ্ত সংযোগের সংখ্যা হতে পারে এক বা একাধিক।

আমাদের বয়স বাড়লে স্মৃতির পাল্লা ভারী হয়। নিউরনের সংযোগগুলো বা নিউরাল নেটওয়ার্ক জটিল থেকে জটিলতর হয়ে ওঠে। ফলে বয়স বাড়ার সঙ্গে বাড়ে দ্বিধাদ্বন্দের পরিধি। সহজে কোনো কিছু মনে করতে পারি না। মনে করার কাজটি কঠিন হয়ে যায়। মনে হয় স্মৃতি ফুরিয়ে আসছে। কিন্তু বিষয়টি এমন নয়। বিজ্ঞানীদের মতে, মস্তিষ্কে কখনোই আমাদের স্মৃতির কোটা ফুরিয়ে যায় না। অন্তত আমাদের সীমাবদ্ধ জীবনের ক্ষেত্রে এ কথা সত্য। কারণ মস্তিষ্কে একের পর এক নিউরন সংযোগ তৈরি হতে থাকে। অসুস্থতা বা বয়সজনিত কারণে স্মৃতি খুঁজে পেতে সমস্যা হতে পারে বড় জোড়।

অমর জীবনের ক্ষেত্রে স্মৃতি হারিয়ে যাবে কিনা, তা নিয়ে কোনো সদুত্তর পাওয়া যায় না। তবে মানুষ অমরত্ব আবিষ্কার করতে পারলে ভবিষ্যতে নিশ্চয়ই এ রহস্য সমাধান হবে।

লেখক: প্রদায়ক, বিজ্ঞানচিন্তা

সূত্র: সায়েন্স ফোকাস