বন উজাড়করণ বন্ধে একমত বিশ্বনেতারা

বন উজাড়করণ বন্ধ করার লক্ষ্যে সমঝোতায় পৌঁছেছেন ১১৪টি দেশের নেতারা। আমাজনের ক্ষতির জন্য বহুল সমালোচিত ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট বলসোনারোও এতে স্বাক্ষর করেছেন। কপ২৬-এ এটিই প্রথম সমঝোতা বিশ্বনেতাদের মাঝে।

জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন (কপ২৬) ২০২১ চলছে। চারদিন পর এ সম্মেলন থেকে অর্জন কতটুকু?

প্রথমেই এবারের দুটো মূল প্রতিপাদ্য নিয়ে কথা বলা যাক। এর একটি ২০৫০ সালের মধ্যে নেট জিরো অর্জন। আরেকটি হলো, বিশ্বের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রির মধ্যে রাখা। এখন আর ‘যদি-কিন্তু-তবে’ বলে অবহেলার জায়গা নেই। বড় ঝুঁকিতে আছে বাংলাদেশসহ আরও বেশ কিছু দেশ। আসলে, ঝুঁকিতে আছে পুরো পৃথিবীই।

নেট জিরোটা কী? প্রতিটি বাড়ি, প্রতিটি কারখানা, অর্থাৎ পুরো দেশ যে পরিমাণ শক্তি খরচ করবে, এর সবটা আসতে হবে নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস থেকে। সেক্ষেত্রে বন্ধ হয়ে যাবে গ্রিনহাউস গ্যাস উৎপাদন ও নিঃসরণ। এই লক্ষ্যটি বিশ্বের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রির মধ্যে আটকে রাখার জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। সমস্যা হলো, চীন ও ভারত যে ঘোষণা দিয়েছে, তাতে একটি বিষয় নিশ্চিত। অন্যান্য দেশ আরও বেশি পরিমাণে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ না কমালে ২০৫০ সালে নেট জিরো লক্ষ্য অর্জিত হবে না। বিশ্বের শীর্ষ গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণকারী দেশ চীনের লক্ষ্য ২০৬০ সালে নেট জিরোতে পৌঁছা। বাংলাদেশের মতো শীর্ষ বিপদাপন্ন দেশগুলোর জন্য এটি খুবই খারাপ খবর। ভারত ঘোষণা দিয়েছে, তাদের নেট জিরোতে পৌঁছানোর লক্ষ্য ২০৭০ সালে। এটাও খারাপ খবর বাংলাদেশের জন্য।

এসব মন্দের মাঝে ভালো খবর হলো, বন উজাড়করণ বন্ধ করার লক্ষ্যে সমঝোতায় পৌঁছেছেন ১১৪টি দেশের নেতারা। আমাজনের ক্ষতির জন্য বহুল সমালোচিত ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট বলসোনারোও এতে স্বাক্ষর করেছেন। কপ২৬-এ এটিই প্রথম সমঝোতা বিশ্বনেতাদের মাঝে।

আরেকটি বড় উদ্যোগ হলো, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ কার্বন ডাই-অক্সাইড উৎপাদনে শীর্ষে থাকা বেশ কিছু দেশ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, জীবাশ্ম জ্বালানীতে তারা আর অর্থায়ন করবে না। তবে জ্বালানী খাতে শীর্ষ বিনিয়গকারী দেশ চীন ও জাপান এ বিষয়ে একমত হয়নি। এটিও একটি খারাপ খবর।

তবে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা দেড় ডিগ্রির মধ্যে রাখার লক্ষ্যে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছে বিশ্বের আর্থিক সম্পদের ৪০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণকারী চার শ কোম্পানি। পাশাপাশি, ক্রীড়াঙ্গনে ২০৪০ সালের মধ্যে নেট জিরো অর্জন এবং সেজন্য ২০৩০ সালের মধ্যে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ অর্ধেকে নামিয়ে আনার কথাও ঘোষণা করা হয়েছে।

তবে পরিবেশবাদীরা বলছেন, এসবই শুধু কথার কথা। গ্রেটা থুনবার্গ বেশ ক্ষুদ্ধ এ নিয়ে। তাঁর মতে, এ সবই বিশ্বনেতাদের ভান। তাঁরা মোটেও আন্তরিক নন।

কপ২৬ বাংলাদেশের জন্য এখন সত্যি সত্যি বাঁচা-মরার প্রশ্ন। এবারে যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে এবং প্যারিস চুক্তির সময় যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, তা সঠিকভাবে অর্জিত না হলে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে বাংলাদেশ। ঋতু ওলট-পালট হয়ে যাওয়া, খরা, বন্যা, ঝড় ও বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইতিমধ্যেই প্রবলভাবে দেখা যাচ্ছে দেশে। সেজন্য কপ২৬ যেন সফল হয় ও এর লক্ষ্যগুলো যেন অর্জিত হয়, এটাই হতে পারে বাংলাদেশের চাওয়া।