সপ্তাহ ধরে চোখের পলক না ফেললে কী হবে?

চোখের পলক না ফেলে সর্বোচ্চ কতক্ষণ থাকতে পারবেন? গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে এ সম্পর্কিত কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। তবে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক বিশ্ব রেকর্ড রাখার আরেক ওয়েবসাইট রেকর্ড শেটার ডট কমের মতে, মানুষের চোখের পলক না ফেলার রেকর্ড ১ ঘন্টা ৫ মিনিট ১১ সেকেন্ড। সাধারণ যে কোনো মানুষের জন্য কয়েক মিনিট ধরে চোখের পলক না ফেলার ব্যাপারটা কষ্টকর।

প্রায় প্রতি ৪ সেকেন্ডে মানুষ একবার করে চোখের পলক ফেলে। মূলত চোখ পরিষ্কার ও চোখের মনি ভেজা রাখতেই এই কাজ করি আমরা। তবে এটি মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রিত একটি স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া। অর্থাৎ চিন্তা করে কাজটি করতে হয় না আমাদের।

কিন্তু চিন্তা শক্তি আর মনের জোর খাটিয়ে কেউ যদি সপ্তাহ ধরে (আরও ঠিক করে বললে, ১৬৮ ঘন্টা) চোখের পলক না ফেলার রেকর্ড তৈরি করতে চান, তাহলে কী ঘটবে? চোখের পলক না ফেলা কেনই-বা আমাদের জন্য কষ্টকর?

আমরা যখন চোখের পলক ফেলি, তখন নতুন টিয়ার ফিল্ম বা অশ্রুস্তর নিঃসৃত হয় চোখ থেকে। এর ফলে চোখের ওপরিভাগ থাকে মসৃণ ও ভেজা। চোখে এসে পড়া আলোকে ঠিক মতো শনাক্তের জন্য এই মসৃণ ও ভেজা ওপরিভাগ খুবই প্রয়োজন। না হলে চোখের লেন্সে প্রতিসরিত আলোর ফোকাস বিন্দু এলোমেলো হয়ে যেত। যেকোনো দৃশ্য তখন হয়ে যেত ঘোলা।

চোখের কর্নিয়ায় নেই কোনো রক্তনালী। সরাসরি এই অশ্রুস্তর থেকেই অক্সিজেন শোষণ করে এখনাকার কোষগুলো। এছাড়াও এই অশ্রুস্তরে থাকে থাকে চোখের জন্য প্রয়োজনীয় এনজাইম। যা ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে চোখকে সংক্রমণ মুক্ত রাখে।

বুঝতেই পারছেন, চোখের পলক ফেলা কত গুরুত্বপূর্ণ। পলক না ফেললে চোখ যে শুষ্ক ও ব্যাক্টেরিয়ায় ভরে উঠবে, তা বলা বাহুল্য। প্রশ্ন হচ্ছে, কত দ্রুত চোখের সমস্যা হবে? ১৬৮ ঘন্টা টানা চোখের পলক না ফেললে ক্ষতিটাই-বা কেমন হবে?

চোখের পলক ফেলার আমাদের যে স্বাভাবিক প্রবৃত্তি, তার বিরুদ্ধে লড়াই শুরু হবে মাত্র চার সেকেন্ড পরেই। অর্থাৎ প্রথম ৪ সেকেন্ডে কোনো সমস্যা না হলেও, এর পর থেকে মনের জোর খাটাতে হবে। ধীরে ধীরে যত সময় গড়াবে, ততই অশ্রুস্তরের অভাবে শুকিয়ে যেতে থাকবে চোখের সামনের অংশ। চোখের রক্তনালীগুলোও প্রসারিত হতে থাকবে প্রতি সেকেণ্ডে। ফলে, ধীরে ধীরে লাল হয়ে যাবে চোখ। আরও বেশি ইচ্ছে করবে পলক ফেলতে।

এ সময় অক্ষিগোলকের সামনের অংশ শুকিয়ে যাবার কারণে ধীরে ধীরে সেখানে জমবে ধুলিকণা। তৈরি হবে অসম পৃষ্ঠ। ফলে দৃষ্টি ঘোলা হতে শুরু করবে। সঙ্গে শুরু হবে জ্বালাপোড়া। কয়েক মিনিটের মধ্যেই চোখের পলক ফেলার জন্য অদম্য এক চাপ দিতে শুরু করবে মস্তিষ্ক।

সত্যি বলতে কি, সমস্যা এখনও তেমন শুরু হয়নি। ধরা যাক, মনের তীব্র জোর খাটিয়ে চোখ খোলা রাখা গেল। কিন্তু ২৪ ঘন্টা পার হওয়ার আগেই আপনার ঘুমের তীব্র প্রয়োজন অনুভূত হবে।

পৃথিবীর মাত্র ২০ শতাংশ মানুষ চোখ খোলা রেখে ঘুমাতে পারে। আপনি যদি সেই দলের একজন হন, তাহলে হয়তো কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু চোখ খোলা রেখে ঘুমানোর ক্ষমতা যদি আপনার না থাকে, তাহলে চোখের যন্ত্রণার সঙ্গে শুরু হবে তীব্র মাথা ব্যাথা। একটা সময় অসাড় হয়ে যাবে চেতনা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘ সময় ধরে চোখে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ও কর্নিয়ায় প্রয়োজনীয় অক্সিজেন জোগানের অভাবে মরে যেতে পারে এই কোষগুলো। সপ্তাহ জুড়ে চোখের পলক না ফেলার ফলাফল হতে পারি স্থায়ী অন্ধত্ব।

মজার ব্যাপার হলো, বিশেষজ্ঞরা বলেন, কেবল মনের শক্তির জোরে ১৬৮ ঘন্টা চোখের পলক না ফেলে থাকা মানুষের জন্য অসম্ভব। অর্থাৎ কাজটি যদি কেউ করতে চায়, তাহলে যন্ত্রের সাহায্য নিতে হবে। যন্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে জোর করে চোখ খোলা রাখতে হবে। কিন্তু সেটার চেষ্টা করা মোটেও উচিত নয়। চোখের পলক ফেলা আমাদের জন্য কত দরকারি, তা বোঝার জন্যই মূলত মানস পরীক্ষার (থট এক্সপেরিমেন্ট) মাধ্যমে বিষয়টির একটি ছবি আঁকার চেষ্টা করা হয়েছে এই লেখায়।

লেখক: শিক্ষার্থী, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা

সূত্র: উইকিপিডিয়া, হোয়াট ইফ শো, ইউপিআই ডট কম, রেকর্ড শেটার ডট কম