চিকিৎসাবিদ্যায় নোবেল ২০২৪
মাইক্রোআরএনএ আবিষ্কার ও জিন গবেষণায় বিপ্লব
আজ নোবেল পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে চলতি বছরের বিজয়ীদের হাতে। সুইডেনের রাজধানী স্টকমহোমের স্টকহোম কনসার্ট হলে ১০ ডিসেম্বর, মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময়ে রাত ৯টায় আয়োজিত হবে এ অনুষ্ঠান। চলতি বছর চিকিৎসাবিজ্ঞান বা শারীরতত্ত্বে নোবেল পেয়েছেন দুই মার্কিন বিজ্ঞানী ভিক্টর অ্যামব্রোস ও গ্যারি রাভকুন। তাঁদের নোবেলজয়ী গবেষণার আদ্যপান্ত...
২০২৪ সালে চিকিৎসাবিজ্ঞান বা শারীরতত্ত্বে নোবেল পেয়েছেন দুই মার্কিন বিজ্ঞানী ভিক্টর অ্যামব্রোস ও গ্যারি রাভকুন। মাইক্রোআরএনএ (microRNA) আবিষ্কার ও ট্রান্সক্রিপশন-পরবর্তী জিন নিয়ন্ত্রণে এর ভূমিকা নিয়ে গবেষণার জন্য তাঁরা এ পুরস্কার পান। বহুকোষী প্রাণীর দেহে কীভাবে জিন নিয়ন্ত্রণ হয়, সে বিষয়ক ধারণার খোলনলচে বদলে দিয়েছে তাঁদের এ গবেষণা।
দেহের প্রতিটি কোষে থাকা ক্রোমোজোমের তথ্যকে কোষগুলোর জন্য নির্দেশিকা বলা যেতে পারে। মানুষের শরীরের প্রায় প্রতিটি কোষেই আছে একই ক্রোমোজোম। তাই প্রতিটি কোষে আছে একই জিন, একই নির্দেশনা। এই নির্দেশনা ক্রোমোজোমের ডিএনএ থেকে মেসেঞ্জার আরএনএতে যায়। এ প্রক্রিয়াকে বলে ট্রান্সক্রিপশন। এরপর মেসেঞ্জার আরএনএর নির্দেশনা অনুযায়ী তৈরি হয় প্রোটিন। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় ট্রান্সলেশন।
দেহের বিভিন্ন অঙ্গে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের কোষ। নানা ধরনের কোষের বৈশিষ্ট্য আবার একদম আলাদা। মাংসপেশির কোষ আর স্নায়ুকোষের মধ্যে মিল খুঁজে পাওয়া কঠিন। তাহলে ঠিক কীভাবে এই পার্থক্যগুলো তৈরি হয়? এর উত্তর—জিন নিয়ন্ত্রণ। কখন কোথায় জিন থেকে আরএনএ, এরপর তা থেকে প্রোটিন তৈরি হবে, তার নিয়ন্ত্রণ জীবের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। জিন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে কোষগুলো ক্রোমোজোম থেকে শুধু তার জন্য উপযোগী নির্দেশনাগুলোই অনুসরণ করে; অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট ধরনের কোষে নির্দিষ্ট কিছু জিনই শুধু কাজ করে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, এ কারণেই শুধু অগ্ন্যাশয়ের বিটা কোষ থেকে ইনসুলিন তৈরি হয়, আর শুধু চোখের রেটিনার কোষ তৈরি করে অপসিন।
আবার দেহের ভেতর ও বাইরের পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতেও কোষের ভেতরের কোন জিনটি কাজ করবে আর কোনটি করবে না, তা নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন হয়। এই জিন নিয়ন্ত্রণ যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তাহলে ক্যানসার, ডায়াবেটিস ও বিভিন্ন অটোইমিউন রোগ হতে পারে।
গত শতকের ষাটের দশকেই বিজ্ঞানীরা ট্রান্সক্রিপশন ফ্যাক্টর সম্পর্কে জানতেন। এগুলো ডিএনএর নির্দিষ্ট অংশে যুক্ত হয়ে নির্ধারণ করে দেয় কোন কোন অংশ থেকে মেসেঞ্জার আরএনএ তৈরি হবে। এরপর হাজার হাজার ট্রান্সক্রিপশন ফ্যাক্টর আবিষ্কৃত হয়। ডিএনএতে যুক্ত হওয়া এই ট্রান্সক্রিপশন ফ্যাক্টর যেমন এককোষী প্রাণিদেহে পাওয়া যায়, তেমনি পাওয়া যায় বহুকোষী প্রাণীতেও। বিজ্ঞানীরা ভাবতেন, এটিই জিন নিয়ন্ত্রণের মূল উপায়। কিন্তু জিন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আরএনএ ও প্রোটিনের উৎপাদন নিয়ন্ত্রণের জন্য বহুকোষী প্রাণীর রয়েছে আরও নানা উপায়। সেগুলো তখনো বিজ্ঞানীদের জানা ছিল না। ১৯৯৩ সালে চলতি বছরের নোবেলজয়ী বিজ্ঞানীরা জিন নিয়ন্ত্রণের নতুন এক উপায় আবিষ্কার করেন।
জিন গবেষণায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মানুষ বা এ রকম কোনো বড় প্রাণী ব্যবহার করা সম্ভব হয় না। তাই সহজে ও কম খরচে গবেষণার জন্য ব্যবহৃত হয় বিভিন্ন ‘মডেল’ জীব। এমনই এক মডেল জীব হলো Caenorhabditis elegans (C. elegans) নামের মাত্র ১ মিলিমিটার দৈর্ঘ্যের এক গোলকৃমি। এগুলো দেখতে স্বচ্ছ, খুব কম সময়ে নতুন প্রজন্মের জন্ম দেয়, আর এদের জিনে পরিবর্তন করাও বেশ সহজ। তাই পাঁচ দশক ধরে এই গোলকৃমি ব্যবহৃত হয়ে আসছে জিন গবেষণায়। C. elegans ব্যবহার করেই আবিষ্কৃত হয়েছে কোষ বিভাজন, এর মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের কোষ সৃষ্টি এবং কোষের মৃত্যুর মতো প্রক্রিয়ায় কীভাবে বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তৈরি হয়, এর পেছনে বিভিন্ন জিনের ভূমিকা কী—এই সবকিছু।
অ্যামব্রোস আর রাভকুন তাই কাজ করছিলেন লিন-৪ মিউট্যান্ট আর লিন-১৪ মিউট্যান্ট C. elegans গোলকৃমি নিয়ে। লিন-৪ মিউটেশনযুক্ত গোলকৃমিগুলোতে দেখা যায় অনেক ধরনের কোষ, এমনকি অঙ্গও একেবারে অনুপস্থিত।
১৯৮০-এর দশকে ভিক্টর অ্যামব্রোস ও গ্যারি রাভকুন গবেষণা করছিলেন কীভাবে বিভিন্ন ধরনের কোষ তৈরি হয়, তা নিয়ে। তাঁদের গবেষণার বিষয়ও ছিল C. elegans। অনেক ছোট হলেও এই গোলকৃমিতে আছে অনেক ধরনের কোষ, যা বড় অনেক প্রাণীতেও পাওয়া যায়। অ্যামব্রোস আর রাভকুন দুটি জিন—লিন-৪ (lin-4) ও লিন-১৪ (lin-14) নিয়ে কাজ করছিলেন।*
জিন নিয়ে কাজ করার ব্যাপারটা বেশ মজার। যেকোনো জীবের দেহে অসংখ্য জিন একেকটি একেক রকম কাজ করে, আবার একটি জিনের কাজের ওপর অন্যান্য অনেক জিন বিভিন্ন রকম প্রভাবও ফেলে। তাই একটি জিনকে আলাদা করে নিয়ে তার কাজ খুঁটিয়ে দেখার সুযোগ সেভাবে নেই। সে জন্য বিজ্ঞানীরা হাঁটেন উল্টো পথে। যে জিনের ওপর কাজ করতে চান, সেই জিনের মিউটেশন হয়ে কাজ বন্ধ হয়ে গেছে (কিংবা বেড়ে গেছে), এমন নমুনা সংগ্রহ করেন তাঁরা। এই মিউটেশন প্রাকৃতিকভাবে হতে পারে, হতে পারে বিভিন্নভাবে মিউটেশন ঘটিয়ে পাওয়া। বিজ্ঞানীরা কোনো জিনের মিউটেশনযুক্ত জীব বা কোষের বৈশিষ্ট্য দেখে ওই জিনের কাজ সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার চেষ্টা করেন।
অ্যামব্রোস আর রাভকুন তাই কাজ করছিলেন লিন-৪ মিউট্যান্ট আর লিন-১৪ মিউট্যান্ট C. elegans গোলকৃমি নিয়ে। লিন-৪ মিউটেশনযুক্ত গোলকৃমিগুলোতে দেখা যায় অনেক ধরনের কোষ, এমনকি অঙ্গও একেবারে অনুপস্থিত। অথচ এই গোলকৃমিগুলো ডিম তৈরি শুরু করে দিয়েছে, যা এর দেহেই জমা হয়ে আছে। একটি জিনের মিউটেশনের কারণে এত বড় পরিবর্তন এটাই প্রমাণ করে যে C. elegans-এর বিকাশে লিন-৪ জিনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে লিন-১৪ মিউটেশনযুক্ত গোলকৃমিগুলো লার্ভা অবস্থা থেকে বের হতে পারে না, এদের বৃদ্ধিই হয় না।
এই আবিষ্কার তখনই খুব একটা সাড়া ফেলেনি। ধারণা করা হচ্ছিল, লিন-৪ আর লিন-১৪—এই জিন দুটি আসলে C. elegans অথবা গোলকৃমিদের বিশেষত্ব।
অ্যামব্রোস লিন-৪ আর লিন-১৪ মিউট্যান্ট গোলকৃমিগুলোর মধ্যে তুলনা করে বুঝতে পারেন, এগুলোর ত্রুটি বিপরীতমুখী, অর্থাৎ একটি অন্যটির বিপরীত। অর্থাৎ লিন-৪ জিন লিন-১৪-এর কাজে বাধা দেয়—এটুকু তিনি বুঝতে পেরেছিলেন। কিন্তু সেটা ঠিক কীভাবে হয়, তা তখনো ছিল অজানা।
রাভকুন আর অ্যামব্রোস এরপর লিন-১৪ জিনটির ক্লোনিংয়ের চেষ্টা শুরু করেন। জিনটি আলাদা করার পর রাভকুন প্রমাণ করতে সক্ষম হন যে লিন-১৪ প্রোটিনটি থাকে কোষের নিউক্লিয়াসে, আর এটি মূলত তৈরি হয় C. elegans-এর বিকাশের প্রথম লার্ভা পর্যায়ে। এই প্রোটিন তৈরিতে পরিবর্তন আসে লিন-৪ বা লিন-১৪ জিন দুটির যেকোনোটির মিউটেশনে।
রাভকুন লিন-১৪ জিনে আরেক ধরনের মিউটেশন দেখতে পান। এই মিউটেশন লিন-১৪ জিনের এমন অংশে, যা ট্রান্সলেট হয়ে (অর্থাৎ ট্রান্সলেশন প্রক্রিয়ায়) লিন-১৪ প্রোটিনের কোনো অংশ তৈরি হয় না। একে বলে জিনের 3’UTR অংশ। এই মিউটেশনের ফলে লিন-১৪ জিনের কাজ বরং বেড়ে যায়, প্রথম লার্ভা পর্যায়ের পরেও পাওয়া যায় লিন-১৪ প্রোটিনের উপস্থিতি। রাভকুন দেখান, এই মিউটেশনের ফলে লিন-১৪ প্রোটিনে কোনো পরিবর্তন আসে না। অর্থাৎ ট্রান্সক্রিপশন-পরবর্তী কোনো প্রক্রিয়া এই প্রোটিনের তৈরি বা এর আগের কোনো ধাপ নিয়ন্ত্রণ করছে।
লিন-১৪-এর অনেকগুলো মিউট্যান্ট পাওয়া গেলেও লিন-৪-এর ক্ষেত্রে পাওয়া যায় কেবল একটি। পরে ভিক্টর অ্যামব্রোস লিন-৪ জিন নিয়ে আরও কাজ করতে গিয়ে দেখতে পান, এটি থেকে শেষমেশ কোনো প্রোটিন তৈরি হয় না। বরং তৈরি হয় শুধু ২২ নিউক্লিওটাইড দৈর্ঘ্যের একটি ক্ষুদ্র আরএনএ। পরে এটিকে বলা হবে মাইক্রোআরএনএ।
লিন-৪ আর লিন-১৪—এ দুই জিনের সিকোয়েন্সিং হয়ে গেলেও অ্যামব্রোস আর রাভকুন তখন কাজ করেন ভিন্ন দুই ল্যাবে। ১৯৯২ সালের ১১ জুন তাঁরা এই দুই জিনের সিকোয়েন্স আদান প্রদান করেন। দুজনই খেয়াল করেন, লিন-৪ এর সঙ্গে লিন-১৪-এর 3’UTR অংশের সিকোয়েন্স অনেকখানিই পরস্পরের কমপ্লিমেন্টারি। অর্থাৎ লিন-৪ থেকে তৈরি মাইক্রোআরএনএর সঙ্গে লিন-১৪ এর 3’UTR অংশ বেজ পেয়ার গঠন করে যুক্ত হতে পারে। এই যুক্ত হওয়ার মাধ্যমেই লিন-৪ মাইক্রোআরএনএ লিন-১৪ মেসেঞ্জার আরএনএর কাজ বন্ধ করে দেয়। অর্থাৎ এখানে জিনের নিয়ন্ত্রণ ট্রান্সক্রিপশন পর্যায়ে হয় না, হয় ট্রান্সক্রিপশনের পরে। এই যুগান্তকারী আবিষ্কার তাঁরা ১৯৯৩ সালে সেল জার্নালে দুটি আর্টিকেল বা নিবন্ধে প্রকাশ করেন।
এই আবিষ্কার তখনই খুব একটা সাড়া ফেলেনি। ধারণা করা হচ্ছিল, লিন-৪ আর লিন-১৪—এই জিন দুটি আসলে C. elegans অথবা গোলকৃমিদের বিশেষত্ব। এ রকম জিন বা জিন নিয়ন্ত্রণপ্রক্রিয়া অন্য কোনো প্রাণীতে নেই। এই ধারণার পরিবর্তন আসে ২০০০ সালে। সে সময় রাভকুনের গবেষণা দল লেট-৭ (let-7) নামে নতুন একটি মাইক্রোআরএনএ আবিষ্কার করেন। আগে আবিষ্কৃত দুটি জিন শুধু ওই গোলকৃমিতে পাওয়া গেলেও লেট-৭ তেমনটা নয়। এই মাইক্রোআরএনএ (আর একে কোড করা জিন) প্রাণের অভিযোজনের ধারায় ৫০০ মিলিয়ন বা ৫০ কোটি বছর ধরে ‘সংরক্ষিত’—প্রাণিজগতের সব জায়গায়ই এটি পাওয়া যায়। এই আবিষ্কার নতুন করে মাইক্রোআরএনএ নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করে। এর ফলে মাইক্রোআরএনএ নিয়ে গবেষণা এগিয়ে চলে।
বর্তমানে আমরা জানি, মানুষের জিনোম এক হাজারের বেশি মাইক্রোআরএনএ তৈরির নির্দেশনা বহন করে। আর বহুকোষী প্রাণীদের বৃদ্ধি ও কাজে মাইক্রোআরএনএর ভূমিকা অপরিহার্য। বর্তমানে miRBase ডেটাবেজে ২৭১টি জীবের ৪৮ হাজার ৮৬০টি মাইক্রোআরএনএর সিকোয়েন্স সংরক্ষিত আছে। এমনকি বিভিন্ন ভাইরাসেও পাওয়া গেছে মাইক্রোআরএনএর জিন।
ছোট্ট এক গোলকৃমি থেকে অ্যামব্রোস আর রাভকুনের মাইক্রোআরএনএ আবিষ্কার ছিল অপ্রত্যাশিত, কিন্তু যুগান্তকারী। এই আবিষ্কার জিন নিয়ন্ত্রণ গবেষণায় নতুন দিক খুলে দিয়েছে।
বিজ্ঞানীরা শুধু নতুন নতুন মাইক্রোআরএনএ খুঁজে বের করেছেন, তা নয়; মাইক্রোআরএনএ ঠিক কীভাবে আরেকটি আরএনএতে যুক্ত হয়ে এর কাজ নিয়ন্ত্রণ করে, তা–ও বের করেছেন। এটা কীভাবে হয়? মাইক্রোআরএনএ ডাইসার (Dicer) প্রোটিনের মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাত হয়ে একটি কমপ্লিমেন্টারি আরএনএর সঙ্গে মিলে দ্বিসূত্রক আকার নেয়। এই দ্বিসূত্র আবার আরগুনয়েট প্রোটিনসহ একটি সাইলেন্সিং কমপ্লেক্স (যা নির্দিষ্ট জিনের কাজ বন্ধ করে দিতে পারে) তৈরি করে, যেখান থেকে ‘অতিরিক্ত’ মাইক্রোআরএনএটি বিদায় নেয়। এ পর্যায়ে এই সাইলেন্সিং কমপ্লেক্স তার টার্গেট জিনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তার কাজ বন্ধ করে দিতে পারে।
একটি মাইক্রোআরএনএ অনেক জিনের ওপর কাজ করতে পারে। আবার একটি জিনের ওপরও কাজ করতে পারে অনেক মাইক্রোআরএনএ। মজার ব্যাপার হলো কোনো নির্দিষ্ট ধরনের কোষে যদি কোনো মাইক্রোআরএনএ তৈরি হয়, সাধারণত সে ধরনের কোষে ওই মাইক্রোআরএনএ যুক্ত হওয়ার মতো কমপ্লিমেন্টারি সিকোয়েন্স বা ‘টার্গেট সাইট’ যুক্ত কোনো জিন দেখা যায় না। কিন্তু ওই কোষের আশপাশের অন্য ধরনের কোষগুলোতে এমন টার্গেট সাইট থাকে প্রচুর। স্পষ্টতই মাইক্রোআরএনএর উপস্থিতির কারণে একটা নির্দিষ্ট জায়গায় একই ধরনের কোষ সহজে বেড়ে উঠতে পারে, আর অন্য ধরনের কোষ বাধাপ্রাপ্ত হয়। কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন মাইক্রোআরএনএ একই ধরনের কাজ করায় মাইক্রোআরএনএ গবেষণা বেশ জটিল। তবে একই কারণে আবার মাইক্রোআরএনএ সিস্টেম বেশ বলিষ্ঠ, ভাইরাসসহ অন্যান্য আক্রমণ সহ্য করে কাজ করে যাওয়ার ক্ষমতা আছে মাইক্রোআরএনএ সিস্টেমের।
মাইক্রোআরএনএ দিয়ে জিন নিয়ন্ত্রণ, শত মিলিয়ন বছর ধরে চলে এসেছে। এই জিন নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ায় অভিযোজিত হয়েছে জটিল জটিল বহুকোষী প্রাণী। যেসব মাইক্রোআরএনএ সব ধরনের দ্বিপক্ষীয় প্রতিসাম্যযুক্ত জীবে আছে, সেগুলো কাজ করে ভ্রূণীয় অবস্থার একদম শুরুতে। আবার যেসব মাইক্রোআরএনএ শুধু স্তন্যপায়ী প্রাণীতে পাওয়া যায়, সেগুলো কাজ করে ভ্রূণদশার শেষ দিকে। অন্যদিকে যেসব মাইক্রোআরএনএ একটি প্রজাতিতে সীমাবদ্ধ, সেগুলো সাধারণত কাজ করে প্রাপ্তবয়স্ক জীবে।
বর্তমান গবেষণা থেকে আমরা জানি, মাইক্রোআরএনএ ছাড়া কোষ ও টিস্যু স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠতে পারে না। মাইক্রোআরএনএতে বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে কিডনি, থাইরয়েড, ডিম্বাশয়, সার্ভিক্স, শুক্রাশয়, মস্তিষ্ক, চোখ বা ফুসফুসের ক্যানসার, জন্মগত বধিরতা, চোখ ও হাড়ের বিভিন্ন রোগের কারণ। এ ধরনের রোগগুলো প্রায়ই দেখা যায় শিশুদের মধ্যে।
ছোট্ট এক গোলকৃমি থেকে অ্যামব্রোস আর রাভকুনের মাইক্রোআরএনএ আবিষ্কার ছিল অপ্রত্যাশিত, কিন্তু যুগান্তকারী। এই আবিষ্কার জিন নিয়ন্ত্রণ গবেষণায় নতুন দিক খুলে দিয়েছে।
* জিন বোঝাতে ইটালিক ব্যবহৃত হয়েছে। প্রোটিনের নাম ইটালিক করা হয়নি।