চলতি বছর চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছেন জাপানের গবেষক শিমন সাকাগুচি। তাঁর সঙ্গে যৌথভাবে এই পুরস্কার পেয়েছেন আরও দুই মার্কিন বিজ্ঞানী ফ্রেড র্যামসডেল এবং মেরি ব্রুনকো। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে ‘পেরিফেরাল ইমিউন টলারেন্স’ নিয়ে গবেষণার জন্য তাঁরা এই পুরস্কার পেয়েছেন। মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিয়ে মৌলিক গবেষণা করেছেন তাঁরা।
নোবেল কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, শিমন সাকাগুচি নানা জটিল রোগের চিকিৎসার নতুন উপায় খুঁজে বের করেছেন। আমাদের শরীরের প্রতিরক্ষাতন্ত্রের প্রান্তীয় সহনশীলতার কৌশল আবিষ্কারের জন্য তিনি এই পুরস্কার পান। নোবেল পাওয়ার খবরটি পেয়ে তিনি নোবেল প্রাইজ অর্গানাইজেশনের অ্যাডাম স্মিথকে একটি সাক্ষাৎকার দেন। সাক্ষাৎকারে তিনি নিজের আনন্দ ও বিস্ময়ের কথা জানান। তবে তাঁর চেয়েও বেশি বলেছেন তাঁর গবেষণার পেছনের গল্প। দুই দশকের বেশি সময় ধরে তিনি একটি প্রশ্নকে কেন্দ্র করে গবেষণা করেছেন। সেই গবেষণা আমাদের নিজেদের শরীরের প্রতিরক্ষাতন্ত্র সম্পর্কে ধারণাই বদলে দিয়েছে। বিজ্ঞানচিন্তার পাঠকদের জন্য সেই সাক্ষাৎকার অনুবাদ করেছেন শতাব্দী রায়।
অ্যাডাম স্মিথ: হ্যালো, আমি কি অধ্যাপক শিমন সাকাগুচির সঙ্গে কথা বলছি?
শিমন সাকাগুচি: হ্যাঁ, আমিই বলছি।
অ্যাডাম স্মিথ: আমি অ্যাডাম স্মিথ। নোবেল কমিটির সেক্রেটারি অধ্যাপক টমাস পার্লম্যান সম্ভবত আমার এই ফোনকলের ব্যাপারে আপনাকে আগেই জানিয়েছেন।
শিমন সাকাগুচি: হ্যাঁ, আমি ফোনকলটির অপেক্ষায়ই ছিলাম।
অ্যাডাম স্মিথ: ধন্যবাদ। শুরুতেই নোবেল পুরস্কার পাওয়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক অভিনন্দন!
শিমন সাকাগুচি: অনেক ধন্যবাদ।
অ্যাডাম স্মিথ: আপনি তো এখন জাপানে আছেন। আমার মনে হচ্ছে, খবরটি আপনি অফিসে থাকার সময়েই পেয়েছেন?
শিমন সাকাগুচি: হ্যাঁ, আমি মাত্রই একটি কনফারেন্স থেকে ফিরলাম। তখনই এই সারপ্রাইজ পেলাম! আমি সত্যিই ভীষণ আনন্দিত।
অ্যাডাম স্মিথ: আমি কিছুটা ধারণা করতে পারছি। খবরটা পাওয়ার ঠিক পরেই আপনার প্রথম ভাবনা কী ছিল?
শিমন সাকাগুচি: এটা একইসঙ্গে ভীষণ আনন্দ এবং বিস্ময়ের ছিল। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে ইমিউনোলজিতে আমাদের এই অবদান স্বীকৃতি পেয়েছে। দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার সহনশীলতা নিয়ে আমাদের কাজকে সম্মান জানানো হয়েছে। আমি অনেক বেশি খুশি।
অ্যাডাম স্মিথ: আমার মনে হয় প্রথম মুহূর্তটা এমনই হয়, তাই না? কেবলই আনন্দ আর পরিতৃপ্তি।
শিমন সাকাগুচি: ঠিক তাই। প্রতিবছর এই সময়ে আমার সহকর্মীরা মজা করে বলতেন, ‘হয়তো আপনার জন্য কোনো চমক অপেক্ষা করছে’। কিন্তু আমার উত্তর সবসময় একটিই ছিল—আমাদের আবিষ্কার যেদিন সরাসরি কোনো রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হবে, সেদিনই হয়তো এর যথার্থ স্বীকৃতি মিলবে। তার আগ পর্যন্ত আমাদের কাজ চালিয়ে যেতে হবে।
অ্যাডাম স্মিথ: আপনাদের এই পথ তো অনেক দীর্ঘ ছিল? সেই ১৯০০ সালের দিকে জার্মান বিজ্ঞানী পল আরলিক প্রথম এই বিষয়টি নিয়ে ভেবেছিলেন। আমাদের শরীরের প্রতিরক্ষাতন্ত্র কীভাবে নিজের এবং বাইরের কোষকে আলাদা করে? এই প্রশ্নের উত্তর অনেকেই খুঁজেছেন। কিন্তু আপনি হাল ছাড়েননি। এই দীর্ঘ গবেষণার পেছনে আপনার মূল অনুপ্রেরণা কী ছিল?
শিমন সাকাগুচি: স্বাভাবিক টি কোষগুলোই যে একটি নতুন রোগের উদ্ভব প্রতিরোধ করতে পারে, এই আবিষ্কারটুকুই আমাকে গবেষণায় ধরে রাখার জন্য যথেষ্ট ছিল। অন্য ইমিউনোলজিস্টরা যা-ই ভাবুন না কেন, আমি আমার পর্যবেক্ষণ ব্যাখ্যা করতে পারছিলাম। এটাই ছিল এই দীর্ঘ গবেষণা চালিয়ে যাওয়ার মূল অনুপ্রেরণা।
অ্যাডাম স্মিথ: বেশ! বিভিন্ন আবিষ্কার কীভাবে মানুষকে অপ্রত্যাশিত উপায়ে এক সূত্রে গেঁথে দেয়…ব্যাপারটা বেশ সুন্দর! কিন্তু…।
শিমন সাকাগুচি: হ্যাঁ, অসংখ্য বিজ্ঞানী নানাভাবে দেখিয়েছেন, কীভাবে এই তত্ত্বটা কাজ করে। সবারই উদ্দেশ্য ছিল চিকিৎসাবিজ্ঞানে এর প্রয়োগ নিশ্চিত করা। বিজ্ঞান আসলে মহাকালজুড়ে ঘটে চলা অসংখ্য প্রচেষ্টার সম্মিলিত ফল। আমি খুশি যে আমি নিয়ন্ত্রক টি কোষ নির্ভর এই কৌশল আবিষ্কারের একদম শুরুতে কিছু অবদান রাখতে পেরেছি। অবশেষে আজকের দিনটা এসেছে! আমারও বয়স বাড়ছে। এমন অবস্থায় আমার জন্য এটা সত্যিই ভীষণ আনন্দের।
এই স্বীকৃতি চিকিৎসকদের অনেক বেশি উদ্বুদ্ধ করবে। তাঁরা নানা ধরনের ইমিউনোলজিক্যাল রোগের চিকিৎসায় নিয়ন্ত্রক টি কোষ ব্যবহার করতে আগ্রহী হবেন।
অ্যাডাম স্মিথ: এই নোবেল পুরস্কার ইমিউনোলজির ক্ষেত্রে কীরকম প্রভাব ফেলবে বলে আপনার মনে হয়?
শিমন সাকাগুচি: আমি বিশ্বাস করি, এই স্বীকৃতি চিকিৎসকদের অনেক বেশি উদ্বুদ্ধ করবে। তাঁরা নানা ধরনের ইমিউনোলজিক্যাল রোগের চিকিৎসায় নিয়ন্ত্রক টি কোষ ব্যবহার করতে আগ্রহী হবেন। এটি ক্যান্সার ইমিউনিটি এবং নিরাপদ অঙ্গ প্রতিস্থাপনেও ভূমিকা রাখবে।
অ্যাডাম স্মিথ: অনেক ধন্যবাদ। আপনাদের এই গবেষণা বিজ্ঞানের নিরন্তর পথচলার এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ। এর মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি, কীভাবে সময়ের পরিক্রমায় প্রকৃতির গভীর থেকে গভীরতর কৌশল এবং তার মাঝে লুকিয়ে থাকা সৌন্দর্য আমাদের হাতে ধরা দেয়। আপনার সঙ্গে এভাবে কথা বলতে পারাটা আমার জন্য রীতিমতো চমৎকার অভিজ্ঞতা! আপনাকে আবারও অনেক ধন্যবাদ।
শিমন সাকাগুচি: স্বাগত!
অ্যাডাম স্মিথ: …সেই সঙ্গে আবারও অভিনন্দন!
শিমন সাকাগুচি: ধন্যবাদ। আপনার সঙ্গে কথা বলে ভালো লাগল। এখনকার মতো বিদায়।
অ্যাডাম স্মিথ: বিদায়।