পৃথিবীজুড়ে প্রতিবছর যে পরিমাণ গাছ কাটা হয়, তার ৩৫ শতাংশই ব্যবহার করা হয় কাগজ তৈরিতে। এতে শুধু কাগজের জন্যই প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার বর্গকিলোমিটার জায়গার বন উজাড় হয়।
‘রিসাইক্লেবল’ বা ‘পুনর্ব্যবহারযোগ্য’ কথাটার অর্থ হলো, একটা জিনিসকে বারবার ব্যবহার করা। কোনো কিছু রিসাইকেল করা গেলে নতুন করে তৈরি করা লাগে না। পুরানো জিনিসটাকেই ভেঙে-গড়ে আবার কাজে লাগানো যায়। তবে কোনো কিছু রিসাইকেল বা পুনর্ব্যবহার করা গেলেই কিন্তু সেটা করা হয় না সবসময়। নতুন তৈরির তুলনায় পুনর্ব্যবহারে পরিবেশ দূষণের হার কমছে কি না, খরচ কম লাগছে কি না, রিসাইকেলের পর পণ্যের গুণগত মান কেমন থাকছে—এরকম বেশ কিছু বিষয় হিসাবে রেখে তবেই কোনো কিছু রিসাইকেল করা হয়। সবসময় যে সব নীতি মেনে রিসাইকেল করা হয়, তা নয়। অনেক ক্ষেত্রে হয়তো মুনাফার দিকে মনোযোগ দিতে গিয়ে পরিবেশের ক্ষতি করে ফেলে কলকারখানাগুলো।
সচারাচর আমরা যেসব জিনিস রিসাইকেল করে ব্যবহার করি, এর মধ্যে কাগজ অন্যতম। কিন্তু কাগজের রিসাইক্লিং কি পরিবেশের জন্য ভালো?
পৃথিবীজুড়ে প্রতিবছর যে পরিমাণ গাছ কাটা হয়, তার ৩৫ শতাংশই ব্যবহার করা হয় কাগজ তৈরিতে। এতে শুধু কাগজের জন্যই প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার বর্গকিলোমিটার জায়গার বন উজাড় হয়। এটা প্রতিবছরের গড় হিসাব।
কাগজ রিসাইকেল করলে এ সমস্যা কিছুটা কমানো যায়। কম গাছ কাটা পড়ে, তাই রোপণ করতে হয় তুলনামূলক কম। এই তো গেল একেবারে সহজ হিসাব। এবার একটু অন্যভাবে দেখা যাক।
ভালো দিক হলো, গাছ নবায়নযোগ্য জিনিস। গাছের অভাব গাছ লাগিয়ে পূরণ করা যায়। তবে তাতে সময়ের প্রয়োজন। কাগজ তৈরিতে ব্যবহৃত প্রায় ৯ শতাংশ গাছ আসে পুরাতন বন থেকে। এসব গাছের বয়স কয়েক দশক পর্যন্ত হয়। অর্থাৎ এসবের বদলে নতুন গাছ লাগালেও সময়ের দৌড়ে তা পরিবেশে কাজে লাগতে অনেকটাই ব্যর্থ।
কাগজ রিসাইকেল করলে এ সমস্যা কিছুটা কমানো যায়। কম গাছ কাটা পড়ে, তাই রোপণ করতে হয় তুলনামূলক কম। এই তো গেল একেবারে সহজ হিসাব। এবার একটু অন্যভাবে দেখা যাক।
একেবারে শূন্য থেকে কাগজ তৈরিতে যে পরিমাণ শক্তি খরচ হয়, তার মাত্র ৪০ শতাংশ শক্তি কম লাগে রিসাইকেল করার জন্য। আধুনিক কাগজকলগুলো শক্তির চাহিদা পূরণ করে গাছের ফেলে দেওয়া অংশ পুড়িয়ে। কিন্তু রিসাইকেল প্ল্যান্টগুলোতে গাছের আবর্জনা তেমন একটা পোড়ানো হয় না। এসব কারখানার শক্তি আসে বিদ্যুৎ ও জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে।
কাগজকলগুলো টলুইন, মিথানল ও ফর্মালডিহাইডের মতো বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করে কাগজ তৈরিতে। ফলে আশপাশের পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের এনভায়রনমেন্টাল প্রটেকশন এজেন্সির মতে, দেশটির পরিবেশ দূষণকারী শিল্পগুলোর অন্যতম হলো কাগজকল।
ডিজিটাল এ যুগে কাগজের চাহিদা দিন দিন কমার কথা। কিন্তু ঘটছে উল্টো ঘটনা। পরিসংখ্যানবিষয়ক জার্মান ওয়েবসাইট স্ট্যাটিস্টার পূর্বাভাস বলছে, ২০৩২ সাল নাগাদ বিশ্বজুড়ে কাগজের চাহিদা বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ৪৭৬ মিলিয়ন মেট্রিক টন।
রিসাইকেল করার সময় এ দূষণের পরিমাণ কিছুটা কমে। দেখা গেছে, কাগজ তৈরির তুলনায় রিসাইকেল করার সময় পানি দূষণ কমে প্রায় ৩৫ শতাংশ, আর বায়ু দূষণ কমে প্রায় ৭৪ শতাংশ।
আবার কাগজ মাটিতে পচে যায়, এ কথা ঠিক। কিন্তু পচে যাওয়ার সময় তৈরি হয় শক্তিশালী গ্রিনহাউস গ্যাস—মিথেন। পুরো পৃথিবীর জলবায়ুর জন্য এটি বড় হুমকি। এসব দিক খেয়াল করলে বলা যায়, নতুন করে কাগজ তৈরির চেয়ে রিসাইক্লিং করা এখন পর্যন্ত পরিবেশের জন্য ভালো। কিন্তু তা একেবারে দূষণমুক্ত নয়।
ডিজিটাল এ যুগে কাগজের চাহিদা দিন দিন কমার কথা। কিন্তু ঘটছে উল্টো ঘটনা। পরিসংখ্যানবিষয়ক জার্মান ওয়েবসাইট স্ট্যাটিস্টার পূর্বাভাস বলছে, ২০৩২ সাল নাগাদ বিশ্বজুড়ে কাগজের চাহিদা বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ৪৭৬ মিলিয়ন মেট্রিক টন। বর্তমানে সংখ্যাটা প্রায় ৪২০ মিলিয়ন মেট্রিক টন। প্লাস্টিকের মতো ভয়াবহ না হলেও, কাগজের জন্যও দূষিত হয় পরিবেশ। রিসাইক্লিং-এর মাধ্যমে এর পরিমাণ যদি কিছুটা কমানো যায়, ক্ষতি কী?