অক্সিজেন ছাড়া কতক্ষণ বাঁচা সম্ভব

মস্তিষ্কে সম্পূর্ণ অক্সিজেন চলাচল বন্ধ হলে কয়েক মিনিটের মধ্যে এর সব কোষ মারা যাবেছবি: সংগৃহীত

বেচেঁ থাকার জন্য মস্তিষ্ক কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা বোধ হয় আলাদা করে বলার প্রয়োজন নেই। অক্সিজেন ছাড়া কতক্ষণ বাঁচা সম্ভব, সেটা জানতে তাই মস্তিষ্ক কত সময় সুস্থ থাকবে, তা প্রথমে খুঁজে বের করতে হবে। কারণ, মস্তিষ্ক যতক্ষণ সুস্থ থাকবে, আমরাও ততক্ষণ বাঁচব।

মানুষের মস্তিষ্ক অত্যন্ত জটিল ও নাজুক। এর সচল থাকা নির্ভর করে অক্সিজেনযুক্ত রক্তের প্রবাহের ওপর। অক্সিজেন ছাড়া মস্তিষ্কের কোষগুলো শরীরের অন্য কোনো অঙ্গে সংকেত পাঠাতে পারে না। কারণ অক্সিজেন ছাড়া নিউরন অচল। নিউরনকে বলা যায় মস্তিষ্কের গাঠনিক একক। তাই অক্সিজেনকে এককথায় বলা যায় মস্তিষ্কের জ্বালানি। কিন্তু ঠিক কতক্ষণ এই জ্বালানি ছাড়া চলতে পারবে আমাদের মস্তিষ্ক? 

মানুষের মস্তিষ্কে অন্য যেকোনো অঙ্গের চেয়ে বেশি শক্তি প্রয়োজন। ২০২১ সালে জার্মানির ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন জার্নালে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে দেখা গেছে, মানুষের শরীরের মোট ওজনের মাত্র ২ ভাগ হলো মস্তিষ্ক। কিন্তু এটি হৃৎপিণ্ড থেকে আসা অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তের প্রায় ২০ ভাগ ব্যবহার করে।

বিভিন্ন কারণে মস্তিষ্কে অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। যেমন স্ট্রোক হতে পারে। মাথার পেছনে আঘাত লাগলেও বন্ধ হতে পারে অক্সিজেন চলাচল।

মূলত ইলেকট্রোলাইটগুলোর সূক্ষ্ম ভারসাম্য বজায় রাখতে মস্তিষ্কের এই বিপুল পরিমাণ অক্সিজেন সরবরাহ প্রয়োজন। কথা হলো, ইলেকট্রোলাইট কী? আমাদের শরীরে বেশ কিছু রাসায়নিক পদার্থ—যেমন খনিজ ও লবণ রয়েছে। এগুলো বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কাজের জন্য প্রয়োজনীয়। স্নায়ু ও মাংসপেশির কাজকর্ম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য এগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ। এগুলোই ইলেকট্রোলাইট। সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম হলো প্রধান ইলেকট্রোলাইট। এই ইলেকট্রোলাইটগুলোর ভারসাম্যহীনতার কারণে মস্তিষ্কের নিউরন দেহের অন্য অঙ্গে সঠিকভাবে সংকেত পাঠাতে পারে না। কারণ এগুলো ঝিল্লির ভেতরে ও বাইরে প্রবাহিত সোডিয়াম ও পটাশিয়ামের ওপর নির্ভর করে। 

বিভিন্ন কারণে মস্তিষ্কে অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। যেমন স্ট্রোক হতে পারে। মাথার পেছনে আঘাত লাগলেও বন্ধ হতে পারে অক্সিজেন চলাচল। এ ছাড়া হৃৎপিণ্ডের কার্যকারিতা বন্ধ হলেও মস্তিষ্কে অক্সিজেন পৌঁছাতে পারে না। স্ট্রোকের কারণে অবশ্য এর কোষগুলো তাৎক্ষণিক মারা যায় না। তবে অক্সিজেনের অভাবে মস্তিষ্কের কোষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। মস্তিষ্কে অক্সিজেন চলাচল যত বেশি সময় বন্ধ থাকবে, কোষের ক্ষতি হবে তত বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোলজিক্যাল ডিসঅর্ডারস অ্যান্ড স্ট্রোক-এর তথ্যানুসারে, মস্তিষ্ক পাঁচ মিনিটের মধ্যে অক্সিজেন সরবরাহ ফিরে না পেলে মানুষ কোমায় চলে যেতে পারে। এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। তবে স্ট্রোকের পরে দ্রুত চিকিৎসা করলে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ফিরিয়ে আনা যায়। 

মস্তিষ্কে সম্পূর্ণ অক্সিজেন চলাচল বন্ধ হলে কয়েক মিনিটের মধ্যে এর সব কোষ মারা যাবে।

যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনার ফিনিক্সের ব্যারো নিউরোলজিক্যাল ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ও ভাস্কুলার নিউরোলজিস্ট ড্যানি গঞ্জালেজ। তিনি বলেন, ‘মস্তিষ্কে সম্পূর্ণ অক্সিজেন চলাচল বন্ধ হলে কয়েক মিনিটের মধ্যে এর সব কোষ মারা যাবে। রক্তপ্রবাহ বন্ধ হওয়ার মাত্র ১০ থেকে ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে অকেজো হয়ে যাবে সবকিছু।’

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনের মেডলাইনপ্লাস জার্নালে এ সম্প্রর্কিত একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয় ২০১৬ সালে। ওই প্রবন্ধে বলা হয়েছে, কোনো ব্যাক্তির মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ বন্ধ হওয়ার ৪ মিনিটের মধ্যে মৃত্যু হতে পারে।

তবে ড্যানি গঞ্জালেজের মতে, ব্যক্তিভেদে সময় কম বেশি হতে পারে। যাদের রক্তচাপ, কোলেস্টেরলের ঝুঁকি আছে এবং যারা ধূমপান করেন, তাদের মস্তিষ্ক ৪ মিনিটের আগেই ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে মৃত্যু হতে পারে। 

লেখক: সদস্য, সম্পাদনা দল, বিজ্ঞানচিন্তা

সূত্র: লাইভ সায়েন্স, মেডলাইনপ্লাস