চিকিৎসাবিজ্ঞানে প্রথম নোবেলজয়ী এমিল ভন বেরিং

এমিল অ্যাডলফ ভন বেরিং নামটি খুব কম মানুষই শুনেছেন। আপনি কি জানেন, চিকিৎসা বিজ্ঞানে সর্বপ্রথম নোবেল পুরষ্কারজয়ী তিনি?

হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন। ভন বেরিং ছিলেন একজন জার্মান ব্যাকটেরিয়া-গবেষক বিজ্ঞানী এবং চিকিৎসক। ১৮৫৪ সালে ১৫ মার্চ সেকালের পশ্চিম প্রুশিয়া রাজ্যের ডায়েচ-আইলাউ এলাকার হান্সডর্ফ (বর্তমান পোল্যান্ডে অবস্থিত) গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ১৩ ভাই-বোনদের মধ্যে সবার বড় তিনি।

পরিবারের দুঃখ, কষ্ট আর অভাবের কথা ভেবে তিনি বার্লিনে অবস্থিত ফ্রিডরিখ ভিলহেল্মস ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন। ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত সেখানেই পড়ালেখা করেন। কারণ, তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার মতো সামর্থ্য ছিল না। এটি ছিল মুলত সামরিক চিকিৎসকদের একাডেমি। চিকিৎসক হিসেবে ১৮৮০ সালে স্বীকৃতি পান তিনি। তারপর তাঁকে ওহালাউ এবং পসেনে পাঠানো হয়।

১৮৮১ থেকে ১৮৮৩ সাল, এই দুই বছর তিনি 'আইডোফর্ম' নামে এক রাসায়নিক পদার্থের ক্রিয়া নিয়ে গবেষণা করেন। এর ওপর একটি গবেষণা পত্র প্রকাশ করেন ১৮৮৪ সালে। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, এটি হয়তো অণুজীবদের মেরে ফেলে না। কিন্তু তাদের মাধ্যমে বেরিয়ে আসা বিষাক্ত পদার্থকে সম্ভবত প্রশমিত করে এবং তা অ্যান্টিটক্সিন হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। তা দেখে মিলিটারি পরিচালনা পর্ষদ তাঁকে কার্ল বিনজ নামে এক ফার্মাকোলজিস্ট এবং চিকিৎসকের কাছে আরও গবেষণার জন্য পাঠায়।

১৮৮৮ সালে তাঁকে সেখান থেকে বার্লিনে ফিরে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়। ফিরে এসে স্বেচ্ছায় বিজ্ঞানী রবার্ট ককের সহযোগী হিসেবে ইনস্টিটিউট অফ হাইজিন-এ কাজ শুরু করেন তিনি। সেখানে তিনি অনেক বছর ছিলেন ককের অধীনে কাজ করেছেন।

ভন বেরিংকে সেরাম (রক্তরস) থেরাপির আবিষ্কারক বলা হয়। তিনি কিতাসাতো শিবাসাবুরোর সঙ্গে গবেষণা করে ডিপথেরিয়া প্রতিরোধের কৌশল আবিষ্কার করেন। এক্ষেত্রে তিনি দেখান, একটি আক্রান্ত প্রাণীর জীবাণুমুক্ত রক্তরস বা প্লাজমা অন্য জনের দেহে প্রয়োগ করে ডিপথেরিয়ার মতো অনক রোগ প্রতিরোধ করা যায়। এই কাজ তাঁকে নোবেল পুরষ্কার এনে দিয়েছিল। সেকালে ডিপথেরিয়ায় অনেক শিশু মারা যেত। এ প্রক্রিয়া আবিষ্কৃত হওয়ার পর ডিপথেরিয়ার প্রভাব অনেক কমে এসেছিল। তাই তাঁকে 'সেভিয়র অব চিলড্রেন' বা শিশুদের রক্ষাকর্তা নামেও ডাকা হয়। ১৯১৭ সালের ৩১ মার্চ নোবেলজয়ী এ বিজ্ঞানী মৃত্যুবরণ করেন।

লেখক: শিক্ষার্থী, অষ্টম শ্রেণি, আওয়ার লেডী অব ফাতিমা গার্লস হাই স্কুল, কুমিল্লা

সূত্র: উইকিপিডিয়া