হাঙর আসলে কত দূর থেকে রক্তের গন্ধ পায়

সর্বোচ্চ প্রতি আড়াই কোটি অণুতে একভাগ যেকোনো গন্ধের অণু দ্রবীভূত থাকলে হাঙর সেই গন্ধ ভালোভাবে টের পায়ছবি: সংগৃহীত

আমরা জানি, সমুদ্রে রক্তের গন্ধ পেলেই হাঙর ছুটে আসে। কথায় কথায় অনেকে বলেন, এক মাইল দূর থেকে হাঙর একফোঁটা রক্তের গন্ধ পায়। এটা কি আসলেই সত্যি? যদি সত্যিই হয়, তবে হাঙর কীভাবে এ গন্ধ পায়?

এ জন্য প্রথমে আমাদের বুঝতে হবে, গন্ধ জিনিসটা আসলে কী? আর আমরা কীভাবে গন্ধ পাই? আমরা যখন বাতাসে কোনো কিছুর গন্ধ পাই, তখন সেটা থেকে কিছু অণু বাতাসে ভেসে ভেসে আমাদের নাকে ঢুকে পড়ে। যেমন ফুলের কথাই ধরি। ফুলের গন্ধের জন্য দায়ী বিশেষ কোন অণু বাতাসে ভেসে বেড়ায়। এসব অণু ভেসে ভেসে আমাদের নাকে ঢুকে পড়ে অনেক সময়। নাকের ভেতরে ভেজা একটা অংশ আছে। সেখানে গিয়ে এই অণুগুলো দ্রবীভূত হয়। এই অংশটির কাছেই নাকের ভেতরে রয়েছে অলফ্যাক্টরি সেন্সরি নিউরন নামে বিশেষ একধরনের সংবেদী স্নায়ু। এটা সরাসরি মস্তিষ্কের সঙ্গে যুক্ত। এটাই আমাদেরকে গন্ধের অনুভূতি দেয়। এই স্নায়ু যখন দ্রবীভূত সেই অণুর উপস্থিতি শনাক্ত করতে পারে, তখন আমরা সেই ফুলের গন্ধ পাই।

পানিতে গন্ধ পাওয়া তুলনামূলক সহজ, বিশেষ করে জলজ প্রাণীদের জন্য
ছবি: সংগৃহীত

পানিতে গন্ধ পাওয়া তুলনামূলক সহজ, বিশেষ করে জলজ প্রাণীদের জন্য। কারণ, গন্ধের অণু এক্ষেত্রে পানিতে এমনিতেই দ্রবীভূত থাকে। হাঙর এই দ্রবীভূত পানি থেকেই গন্ধ পায়।

এখন কথা হলো, হাঙর কত দূর থেকে গন্ধ পায়। সত্যি বলতে, অন্য মাছদের সঙ্গে এক্ষেত্রে হাঙরের তেমন কোনো পার্থক্য নেই। সর্বোচ্চ প্রতি আড়াই কোটি বা ২৫ মিলিয়ন অণুতে একভাগ যেকোনো গন্ধের অণু দ্রবীভূত থাকলে হাঙর সেই গন্ধ ভালোভাবে টের পায়। আর সর্বনিম্ন বা ন্যূনতম ১০ বিলিয়ন অণুতে একভাগ গন্ধের জন্য দায়ী অণু দ্রবীভূত থাকলেও তারা সেই গন্ধ পায়। এই ভিন্নতা মূলত রাসায়নিক ও হাঙরের প্রজাতির ওপর নির্ভর করে। এই যে পরিমাণটুকু বললাম, শুনে হয়তো বিষয়টা বোঝা যায় না, কত দূর থেকে হাঙর আসলে গন্ধ পাচ্ছে। আপনার বোঝার সুবিধার্থে বিবিসি সায়েন্স ফোকাস থেকে একটা উদাহরণ দিই। তাদের মতে, এটাকে তুলনা করা যায় গড়পড়তা একটা সুইমিং পুলে একফোঁটা রক্ত দ্রবীভূত থাকার মতো। অর্থাৎ সুইমিং পুলের একপ্রান্তে একফোঁটা রক্ত দ্রবীভূত থাকলে অন্যপ্রান্ত থেকে হাঙর তা টের পাবে।

বিশাল সমুদ্রের তুলনায় হাঙরকে এখন আর অত ভয়ংকর মনে হচ্ছে না, তাই না?

লেখক: সহসম্পাদক, বিজ্ঞানচিন্তা

সূত্র: বিবিসি সায়েন্স ফোকাস, উইকিপিডিয়া