ভীতিকর রোগগুলোর অন্যতম হলো টাইফয়েড। সংক্রমিত ব্যক্তির মলমূত্র এবং খাবার ও পানির মাধ্যমে রোগটি ছড়িয়ে পড়তে পারে। ১৮৪১ সালে নবম মার্কিন প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম হ্যারিসন এ রোগে মারা যান। মাত্র ৩২ দিন যুক্তরাষ্ট্র শাসন করে ইতিহাসে সবচেয়ে কম মেয়াদের মার্কিন শাসক হিসেবে নাম করেছেন তিনি। রোগের জীবাণুতত্ত্বের জনক লুই পাস্তুরের কথাই ধরা যাক। ফরাসি এই বিজ্ঞানীর সময়ে রোগজীবাণু সম্পর্কে জানা তাঁর চেয়ে ভালো আর কেউ ছিল না। কিন্তু তারপরও তাঁর পাঁচ সন্তানের মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয় টাইফয়েড জ্বরে। ১৮৮০ সালের দিকে জার্মান বিজ্ঞানী কার্ল জোসেফ ইবার্থ সন্দেহ করেন যে একধরনের ব্যাসিলাস ব্যাকটেরিয়া এই রোগের জন্য দায়ী। ১৮৮৪ সালে ইবার্থের এই সন্দেহ সত্য বলে প্রমাণ করেন আরেক জার্মান বিজ্ঞানী থিওডর অগাস্ট গ্যাফকি। তিনি জীবাণুটির নাম রাখেন ইবার্থের ব্যাসিলাস। এ ছাড়া আরও কিছু নামেও পরিচিত হয় জীবাণুটা। যেমন ইবার্থেলা টাইফি, গ্যাফকি-ইবার্থ ব্যাসিলাস। একসময় জীবাণুটির বৈজ্ঞানিক নাম রাখা হয় Salmonella typhi (সালমোনেলা টাইফি)।
রোগের সঙ্গে পুরোপুরি মিল না থাকলেও নামের দিক দিয়ে টাইফয়েডের সঙ্গে মিল আছে টাইফাসের। আসলে টাইফাস রোগের সঙ্গে লক্ষণে কিছুটা মিল দেখে একসময় টাইফয়েড নাম দেওয়া হয়েছিল। কারণ, টাইফয়েড মানেই ‘টাইফাসের মতো’। গ্রিক শব্দ টুফোস থেকে এসেছে টাইফাস, যার অর্থ ধোঁয়াটে বা অস্পষ্ট। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মনের অবস্থা বোঝাতেই এই শব্দ বেছে নেওয়া হয়েছিল। টাইফাসের জন্য দায়ী রিকেটশিয়া (Rickettsia bacillus) ব্যাকটেরিয়া। উকুন ও রক্তচোষা মাছির মাধ্যমে এ রোগ মানুষে ছড়ায়। এ দুই রোগের সাধারণ লক্ষণ হলো তীব্র পেটে ব্যথা, সবকিছুতে অনীহা ও বিভ্রান্তি। তবে দুটোর মধ্যে টাইফয়েড বেশি মারাত্মক। টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়েও অতি অল্পসংখ্যক মানুষের মধ্যে (২-৫%) কোনো রোগের লক্ষণ দেখা যায় না। কিন্তু রোগটি ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে তারা অসচেতন ভেক্টর বা বাহক। এ রকম বাহক হিসেবে নামকরা ছিলেন মেরি ম্যালন নামের এক রাঁধুনি ও গৃহকর্মী। বিশ শতকের গোড়ার দিকে যুক্তরাষ্ট্রে তিনি টাইফয়েড মেরি নামে কুখ্যাত হয়ে ওঠেন।