টুথপেস্ট আবিষ্কারের আগে মানুষ কী দিয়ে দাঁত মাজত
সকালে ঘুম থেকে উঠে আমাদের প্রথম কাজ ব্রাশ করা। এই সাধারণ অভ্যাসে আমরা দারুণভাবে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। কিন্তু জানলে অবাক হবেন যে, এই আধুনিক টুথপেস্ট পৃথিবীতে এসেছে খুব বেশিদিন হয়নি। প্রশ্ন হলো, টুথপেস্ট আবিষ্কারের আগে, অর্থাৎ আজ থেকে একশ, এক হাজার, বা পাঁচ হাজার বছর আগে মানুষ দাঁত পরিষ্কার করত কীভাবে? তখন তো মিন্ট ফ্লেভারের পেস্ট ছিল না। তাহলে তারা মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে বা দাঁত সাদা করতে কী ব্যবহার করত?
উত্তরটা শুনলে আপনি হয়তো চমকে উঠবেন! কারণ, সেই তালিকায় আছে গরুর খুরের পোড়া ছাই, গুঁড়ো করা হাড়, ঝিনুকের খোলস, এমনকি কাঠকয়লাও!
দাঁতের যত্নের ইতিহাস কিন্তু অনেক পুরোনো। ধারণা করা হয়, ৫ হাজার বছর আগে প্রাচীন মিশরীয়রাই প্রথম দাঁত পরিষ্কার করার জন্য এক ধরনের ‘পাউডার’ বা গুঁড়ো তৈরি করে। তারা কী মেশাত সেই পাউডারে? মেশাত গরুর খুরের পোড়া ছাই, পোড়া ডিমের খোসা, আর পামিস পাথরের গুঁড়ো! পামিস হলো এক ধরনের আগ্নেয়শিলার পাথর, যা খুব ভালো ঘষামাজার কাজ করে। এখন আমরা যে পাথর দিয়ে পা ঘষি, তা দিয়েই হয়তো প্রাচীনকালে দাঁত পরিষ্কার করত!
মিশরের পরে আসা যাক গ্রিক ও রোমানদের যুগে। তারাও দাঁতের যত্নে খুব সচেতন ছিল। তবে তাদের পদ্ধতি ছিল আরও খসখসে! তারা দাঁত পরিষ্কার করতে ব্যবহার করত গুঁড়ো করা হাড় এবং ঝিনুক বা শামুকের খোলসের গুঁড়ো। অবশ্য শুধু পাউডার বা পেস্ট হলেই তো হবে না, তা ঘষার জন্য কিছু একটাও তো লাগবে। আধুনিক নাইলন ব্রাশ আবিষ্কারের আগে, প্রাচীন সভ্যতাগুলো ‘চিউ স্টিক’ বা চিবানোর কাঠি ব্যবহার করত। তারা গাছের নরম ডাল কেটে নিত। তারপর সেই ডালের এক মাথা চিবিয়ে ব্রাশের আঁশের মতো নরম করে ফেলত। এরপর সেটা দিয়েই দাঁত ঘষত।
আধুনিক টুথপেস্টের কাছাকাছি কিছু জিনিস আসতে শুরু করে ১৮০০ সালের দিকে। তখনো মানুষ ‘টুথ পাউডার’ বা দাঁতের মাজনই ব্যবহার করত। এই পাউডারগুলোতে সাধারণত খড়িমাটি, কাঠকয়লা বা গাছের ছাল মেশানো হতো। ১৮২৪ সালে ডক্টর পিবডি নামে একজন দাঁতের ডাক্তার প্রথম এই পাউডারে সাবান যোগ করেন, যাতে ফেনা হয়!
অবশেষে, ১৮৭৩ সালে ‘কোলগেট’ কোম্পানি প্রথমবার কাচের বয়ামে ভরে আধুনিক পেস্ট বাজারে আনে। আর আজ আমরা যে টিউবে পেস্ট দেখি, সেই টিউব বাজারে আসে ১৮৯০-এর দশকে।