বোবায় ধরা আসলে কী?

প্রচণ্ড দুঃস্বপ্ন দেখে ধড়মড়িয়ে উঠতে যাবেন, হঠাৎ খেয়াল করলেন হাত-পা কোনো কিছু আপনার কথা শুনছে না। পুরোপুরি অবশ হয়ে আছে যেন। শত চেষ্টাতেও একচুল নাড়াতে পারছেন না। চিৎকার করতে গিয়ে দেখলেন, আরও সর্বনাশ! গলা দিয়ে কোনো আওয়াজও বেরোচ্ছে না! একসময় মনে হতে পারে, বুকের ওপর কিছু একটা চেপে বসেছে। এমনকি সেই কিছু একটার বিকট মূর্তিও দেখতে পারেন চোখের সামনে।

এমন অভিজ্ঞতা কখনো হয়েছে কি? হলেও ভয় পাবেন না। এটা অতিলৌকিক কিছু নয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এই অবস্থাকে বলা হয় স্লিপ প্যারালাইসিস। বাংলায় অনেকে বলেন, বোবায় ধরা। পৃথিবীর প্রায় ৮ শতাংশ মানুষ কখনো না কখনো এই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন। ঘুমের মাঝে অথবা ঘুম থেকে ওঠার সময় মাংসপেশির নিয়ন্ত্রণ হারানোর কারণে এমন অবস্থা হয়।

মাংপেশির নিয়ন্ত্রণ হারানোর ব্যাপারটির আরেক নাম অ্যাটোনিয়া (Atonia)। ঘুমের স্বাভাবিক অংশ এটি। গভীর ঘুমের র‍্যাপিড আই মুভমেন্ট বা রেম পর্যায়ে সাধারণত অ্যাটোনিয়া ঘটে। সেই সঙ্গে স্বপ্নের প্রতিক্রিয়া হিসেবে আপনার হাত-পা নড়তে পারে। ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। আপনাকে নিরাপদ রাখতে মস্তিস্ক এ সময় মাংপেশির নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেয়।

ঘুমের রেম পর্যায়ের বাইরে অ্যাটোনিয়া কাজ করলে মানুষ স্লিপ প্যারালাইসিসের সম্মুখীন হন। বেশিরভাগই স্লিপ প্যারালাইসিসের সময় হ্যালুসিনেশনের শিকার হন। চোখের সামনে দেখতে পারেন অতিপ্রাকৃত নানা কিছু। বুকের ওপর ভারী কিছু চেপে বসা বা দম বন্ধ হয়ে আসার মতো মারাত্মক অভিজ্ঞতা হতে পারে এ সময়। ব্যক্তিভেদে এসব ঘটনা বিপদজনকও হতে পারে।

স্লিপ প্যারালাইসিসের কারণ কী?

ঘুমের বদঅভ্যাস থেকে স্লিপ প্যারালাইসিস হতে পারে। স্লিপ অ্যাপনিয়া, পিটিএসডি এবং ইনসোমোনিয়ার মতো ডিসঅর্ডার বা রোগের ফলে এটা দেখা যায় অনেকসময়। হতাশা, ক্লান্তি এবং বাইপোলার ডিসঅর্ডারও স্লিপ প্যারালাইসিসের কারণ হতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। যেকোনো বয়সী মানুষই স্লিপ প্যারালাইসিসের মুখোমুখি হতে পারেন। সাধারণত ১৪ থেকে ১৭ বছরের মধ্য এটা শুরু হয়।

স্লিপ প্যারালাইসিস হলে কী করা উচিত?

বোবায় ধরা বা নিদ্রাজনিত অসাড়তার ব্যাপারটি যদি খুব ভয়ংকর হয় অথবা বেশ ঘনঘন হয়, তাহলে দেরী না করে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ এবং প্রয়োজনে চিকিৎসা নেওয়া উচিৎ। ঘুমের অভ্যাস এবং স্লিপ সাইকেল বা ঘুম-চক্র পর্যবেক্ষণের মাধ্যেমে সাধারণত স্লিপ প্যারালাইসিসের ধরন নির্ণয় করেন ডাক্তারেরা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঘুমের অভ্যাস বদল, দৈনন্দিন জীবন যাপনের ধরন পরিবর্তনের মাধ্যমে সমস্যাটি সম্পূর্ণভাবে দূর করা সম্ভব। তবে কতটুকু কীভাবে পরিবর্তন করতে হবে, তা একমাত্র বিশেষজ্ঞরাই জানাতে পারবেন।

স্লিপ প্যারালাইসিসসহ ঘুমের অন্যান্য জটিলতা এড়াতে বিশেষজ্ঞরা সাধারণত শীতল ও নরব ঘরে ঘুমানোর পরামর্শ দেন। এছাড়া ঘুমের অন্তত তিনঘন্টা আগে কোনো ভারী খাবার খাওয়া উচিৎ নয়। ঘুমানোর দেড় ঘন্টা আগে থেকে মোবাইল ফোন বা কম্পিউটারের মতো ডিভাইসের স্ক্রিন থেকে দূরে থাকা উচিৎ বলেও মনে করেন অনেক বিশেষজ্ঞ। এসব ছোট ছোট অভ্যাস বদলে নিয়ে যদি এ ধরনের সমস্যা এড়ানো যায়, তাহলে চেষ্টা করতে সমস্যা কী, বলুন?

লেখক: শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা

সূত্র: ওয়ান্ডার পোলিস, লাইভ সায়েন্স