ডাইনোসর কেন এত বড় হতো

ছবি: সংগৃহীত

ডাইনোসর কথাটা শুনলে চোখে দানবীয় শিকারী প্রাণীর ছবি ভেসে ওঠে। টিভি, স্থিরচিত্র বা চলচ্চিত্রের কল্যাণে টাইরানোসোরাস রেক্স (টি-রেক্স) নামের মাংসাশী ডাইনোসরের ছবি গেঁথে গেছে আমাদের মস্তিষ্কে। মাথা থেকে পা পর্যন্ত একটি পূর্ণবয়ষ্ক টি-রেক্সের আকার হতো প্রায় ৪০-৫০ ফুটের মতো। পাশাপাশি সরোপোডা নামের ডাইনোসরও কমবেশি সবাই দেখেছি। মাথা থেকে লেজ পর্যন্ত এদের দৈর্ঘ্য হতো প্রায় ১৩০-২০০ ফুট। ওজন ১০০-১৫০ টনের মতো। পাহাড়ের মতো তৃণভোজী এ ডাইনোসর দেখে সমীহ জাগে মনে। কখনো কি ভেবে দেখেছেন, এই ডাইনোসরগুলো কেন এত বড় হতো?

শিল্পীর কল্পনায় টি-রেক্স
ছবি: সংগৃহীত

পৃথিবীতে ডাইনোসর দাপিয়ে বেড়াত ট্রায়াসিক, জুরাসিক এবং ক্রিটেশিয়াস যুগে। সে সময় পৃথিবীর জলবায়ু ছিল বেশ উষ্ণ। বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ ছিল বর্তমানের চার গুণ। শুনে সুখকর মনে না হলেও গাছপালা ও অন্যান্য প্রাণের জন্য সেটা ছিল দারুণ পরিবেশ। প্রচুর লতাপাতা, গাছপালা জন্মেছিল সে সময়। সব মিলিয়ে তৃণভোজী ডাইনোসরদের খাবারের কোনো অভাব ছিল না। প্রচুর খাদ্যগ্রহণের ফলে ধীরে ধীরে বড় হতো এসব প্রাণীর দেহ। এ ছাড়া আকারে বড় হওয়ায় গায়ে শক্তিও থাকত বেশি। ফলে শিকারী প্রাণীর কবলে পড়ে ঘায়েল হতো না সহজে। বেশি সময় বাঁচত। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেশি খাবার খেয়ে বড় হতো আরও।

শিল্পীর কল্পনায় সরোপড ডাইনোসর
ছবি: সংগৃহীত

টি-রেক্স এবং স্পিনোসোরাসের মতো মাংসাশী ডাইনোসরদের থেকে নিরাপদ থাকতে প্রচুর খাবার খেতে হতো সরোপড ডাইনোসরদের। অন্যদিকে মাংসাশী ডাইনোসরেরাও টিকে থাকার তাগিদে বড় হতে শুরু করে। তা ছাড়া বিশাল আকারের শিকারকে পরাস্ত করা মানে বিপুল পরিমাণ খাবার। মাংশাসী ডাইনোসরের বৃদ্ধির পেছনে এটাও একটা কারণ।

তৃণভোজী ডাইনোসরেরা ছিল শীতল রক্তবিশিষ্ট প্রাণী। ফলে বিশাল আকার এদের দেহের তাপমাত্রা ধরে রাখতে সাহায্য করত বলেও মনে করেন অনেকে। তবে এ তত্ত্বে কিছু সমস্যা আছে। কারণ, মাংসাশী ডাইনোসরগুলো ছিল উষ্ণ রক্তের প্রাণী। এ তত্ত্ব সত্যি হলে, একই পরিবেশে দুটি ভিন্ন বিপাকীয় ব্যবস্থার প্রাণীর পাশাপাশি বিকশিত হতে হবে। সেটা অসম্ভব নয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে উষ্ণ রক্তের প্রাণীর আকার বেড়ে যাওয়ার পেছনে তেমন ব্যাখ্যা পাওয়া না।

শিল্পীর কল্পনায় মাইক্রোর‍্যাপ্টর
ছবি: উইকিমিডিয়া

মজার বিষয় হলো, সব ডাইনোসর কিন্তু বিশাল আকৃতির ছিল না। অনেক ছোট ছোট ডাইনোসরও চড়ে বেড়াত পৃথিবীর বুকে। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ছোট যে ডাইনোসরের জীবাশ্ম পাওয়া গেছে, তার নাম, মাইক্রোর‍্যাপ্টর। পাখির মতো দেখতে এ ডাইনোসরটির ওজন ছিল মাত্র ১ কেজির মতো।

আর সবচেয়ে ছোট টাইরানোসোরাসের ডাইলং প্যারাডক্সাস (Dilong paradoxus) প্রজাতির ওজন ছিল মাত্র ১১ কেজির মতো। পূর্ণবয়স্ক অবস্থায় এরা আনুভূমিকভাবে প্রায় ৬.৬ ফুট লম্বা হতো!

যাই হোক, প্রসঙ্গে ফিরি। খাবার গ্রহণ ও উপযুক্ত পরিবেশকেই ডাইনোসরদের এত বড় হওয়ার পেছনের কারণ বলে মনে করেন বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞ। তবে এতদিন পর শুধু ফসিল থেকে এ বিষয়ে একেবারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

লেখক: প্রদায়ক, বিজ্ঞানচিন্তা

সূত্র: সায়েন্স ফোকাস, উইকিপিডিয়া, থট ডট কো