শিশুরা যা দেখে, তাই শেখে। শিখতেও পারে খুব দ্রুত। কিন্তু প্রাপ্তবয়স্করা শিশুদের মতো দ্রুত শিখতে পারেন না। সময় লাগে অনেক। প্রশ্ন হলো, শিশুরা প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় দ্রুত শেখে কীভাবে? এটা কি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া? নাকি প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুদের মস্তিষ্কের নতুন তথ্য গ্রহণের ক্ষমতা বেশি?
যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব চেস্টারের সিনিয়র লেকচারার ডেবি রেভেন্সক্রফট। তিনি বলেন, ‘শিশুদের মস্তিষ্ক স্পঞ্জের মতো, নতুন তথ্য একরকম শুষে নেয় বলা যায়। প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় তারা তাই দ্রুত নতুন জিনিস শিখতে পারে। বিজ্ঞানের ভাষায় বললে, শৈশবে শিশুদের নিউরোপ্লাস্টিসিটি থাকে অনেক বেশি। মূলত সে জন্যই তারা দ্রুত শেখে।’
নিউরোপ্লাস্টিসিটি বলতে বাচ্চাদের শেখার ক্ষমতাকে বোঝায়। এর সাহায্যে শিশুরা সবকিছু দ্রুত আয়ত্ত করতে পারে। এ ক্ষমতা কোনো শিশুর পঞ্চম জন্মদিনের আগ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। কারণ এ বয়সের শিশুরাই নতুন নতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয় বেশি।
শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে গামা-অ্যামিনোবুটারিক অ্যাসিডের (GABA) পরিমাণে পার্থক্য দেখা যায়। এটা মস্তিষ্কের মেসেঞ্জার বা বার্তাবাহক নামে পরিচিত।
রেভেন্সক্রফট আরও বলেন, ‘শৈশবে শিশুরা সাধারণত বড়দের দক্ষতাগুলো আয়ত্ত করার চেষ্টা করে। নতুন কোনো ভাষা শেখার ক্ষেত্রেও তারা বড়দের তুলনায় দ্রুত শিখতে পারে। কারণ শিশুরা তাদের স্থানীয় বা মাতৃভাষায় ব্যবহৃত ছন্দ এবং শব্দগুলোর সঙ্গে একধরনের সুর তৈরি করতে পারে। এ জন্যই অনেক শিশু দক্ষ এবং সাবলীল বক্তা হয়ে উঠতে পারে চার বছর বয়সের মধ্যে।’
কিন্তু প্রশ্ন হলো, শিশুরা ভাষা ছাড়া অন্য দক্ষতা কীভাবে এত দ্রুত শেখে? ২০২২ সালে কারেন্ট বায়োলজি জার্নালে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়, শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে গামা-অ্যামিনোবুটারিক অ্যাসিডের (GABA) পরিমাণে পার্থক্য দেখা যায়। এটা মস্তিষ্কের মেসেঞ্জার বা বার্তাবাহক নামে পরিচিত। শিশুরা ভিজ্যুয়াল প্রশিক্ষণে অংশ নিলে তাদের মস্তিষ্কে এই অ্যাসিডের পরিমাণ দ্রুত বাড়ে। কিন্তু প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে তা অপরিবর্তিত থাকে। মূলত এই অ্যাসিডের কারণে শিশুরা প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় দ্রুত নতুন জ্ঞান এবং দক্ষতা অর্জন করতে পারে।
নতুন বিষয়গুলো শেখার জন্য শিশুদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সময়। তবে তাদের শেখার গতি বাড়ানোর জন্য মোটেই তাড়াহুড়ো করা ঠিক নয়।
শিশুরা দ্রুত শিখতে পারে, কথাটা সত্যি। তবে এ কথা ভেবে তাদের খেয়াল না রাখলে ভুল হবে। তাদের প্রতি যত্নশীল হওয়ার পাশাপাশি সহানুভূতিশীল পরিবেশে বড় হওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে। না হলে তারা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে পারে। জন্ম থেকে ৫ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের সঙ্কটকালীন সময়। এ সময় তাদের মস্তিষ্ক প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় অনেক বেশি ব্যস্ত থাকে। কারণ এ সময় ক্রমাগত শিখতে থাকে শিশুরা।
নতুন বিষয়গুলো শেখার জন্য শিশুদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সময়। তবে তাদের শেখার গতি বাড়ানোর জন্য মোটেই তাড়াহুড়ো করা ঠিক নয়। সুন্দর, যত্নশীল ও সহযোগিতামূলক পরিবেশ তাদের নতুন কিছু শেখার জন্য উৎসাহিত করে, এগিয়ে নেয় সুন্দর ভবিষ্যতের পথে।
লেখক: শিক্ষার্থী, সিটি কলেজ, ঢাকা
সূত্র: লাইভ সায়েন্স