চোখের রঙ ভিন্ন হয় কেন?

প্রকৃতিতে বিচিত্রতা আছে জন্যই পৃথিবীটা এতো সুন্দর। প্রকৃতির অংশ হিসেবে মানুষ নিজেও বৈচিত্র্যময়। এর একটি চমৎকার উদাহরণ আমাদের চোখের রং। অক্ষিগোলকের রং সবার সাদা হলেও, আইরিস অংশের রং সবসময় এক হয় না। কালো বা বাদামী, নীলসহ নানা রঙের আইরিস দেখা যায় ব্যাক্তিভেদে। কেন এমনটা হয়? দৃষ্টিশক্তির সাথে কী এর কোন সম্পর্ক আছে?

কতগুলো রঞ্জককণা একসঙ্গে হয়ে গঠন করে মেলানিন। মেলানিন কোন কোষ বা বা অণু নয়। এটি রঞ্জককণাদের গ্রুপ। প্রাণিদেহের প্রায় অঙ্গাণুতেই এটি পাওয়া যায়। চুল ও ত্বকের রঙে ভিন্নতা দেখা যায় মেলানিনের জন্যই। আমাদের চোখও এর ব্যাতিক্রম নয়।

চোখের কর্ণিয়ার ঠিক পিছনের অংশের নাম আইরিস। আইরিশের মাঝখানে পিউপিল। চোখে আলো এসে পড়লে পিউপিলের মধ্য দিয়ে সেটা রেটিনায় গিয়ে পড়ে। রেটিনার পাঠানো সংকেত মস্তিষ্ক বিশ্লেষণ করে দেখার অনুভূতি তৈরি করে।

আলোর তীব্রতার উপর ভিত্তি করে আইরিস সংকুচিত বা প্রসারিত হয়। এতে নিয়ন্ত্রিত হয় পিউপিলে প্রবেশ করা আলোর পরিমাণ। দেখার পুরো কাজটাতে আইরিসের ভূমিকা তাই বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

চোখে মেলানিন থাকে মূলত এই আইরিস অংশে। আইরিস বেশ কয়েকটা স্তর নিয়ে গঠিত। একেবারের বাইরের দুইটি স্তরকে বলা হয় অন্টারিওর বর্ডার। মেলানোসাইট নামের বিশেষ ধরণের কোষ রয়েছে এখানে, যা মেলানিন তৈরি করে। মেলানিনের ধরন ও পরিমাণের উপর নির্ভর করে চোখের রং কেমন হবে। পরিমাণ বেশি হলে রং গাঢ় হয়।

ব্যাক্তিভেদে চোখের রঙের ভিন্নতা দেখা যায় মূলত জিনগত কারণে। মা-বাবার চোখের রং এক হলে সন্তানের চোখের রংও তাই হয়। আলাদা হলে সন্তানের চোখের রঙে পরিবর্তন আসতে পারে। চোখের রং নির্ধারণের ব্যাপারে প্রধান ভূমিকা পালন করে ক্রোমোজোম ১৫-এর একটি নির্দিষ্ট অঞ্চল।

চোখের রঙের ক্ষেত্রের বাদামী বা গাঢ় বাদামী রং সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। সঠিক পরিসংখ্যান না পাওয়া গেলেও বাদামী চোখের পরেই নীল রঙা চোখের অবস্থান। এছাড়া ধূসর, সবুজ, বেগুনী হয় চোখের রঙ। খুব দুর্লভ হলেও একাধিক রঙের মিশ্রণ দেখা যায় আইরিসে। এমনকি দুই চোখের রং দুই রকমও হতে পারে, যাকে বলা হয় হেটেরোক্রোমিয়া।

চোখের রঙের সাথে দৃষ্টিশক্তির কোন সম্পর্ক নেই। অন্তত বৈজ্ঞানিকভাবে এখনও প্রমাণিত নয়। আবার রঙের আলাদা করে কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই। চোখের রং তাই নীল বা বাদামী যাইহোক না কেন, সবই সুন্দর।

লেখক: আব্দুল্লাহ আল মাকসুদ

সূত্র: সায়েন্স ফোকাস