পাখি কীভাবে ওড়ে?

প্রাণিজগতের একেক সদস্যের আছে একেকরকম দক্ষতা। কেউ পানির নিচে থাকতে পারে, কেউ আবার বিশাল সব গাছের এ ডাল থেকে ও ডালে দোল খেয়ে বেড়ায়, কেউ বা আবার দিব্যি উড়ে বেড়ায় আকাশে। এর মধ্যে মানুষের জন্য অন্যতম আকর্ষণীয় বোধ হয় পাখির আকাশে ওড়ার ক্ষমতা।

আমরা ভূমিতে বাস করি। চাইলে পানিতে সাঁতার কেটে ভেসে থাকতে পারি কোনো যন্ত্র ছাড়াই। কিন্তু স্বাভাবিকভাবে আকাশে বিচরণের ক্ষমতা আমাদের নেই। অর্থাৎ, প্রাকৃতিকভাবে আমরা জল ও স্থলে সীমাবদ্ধ। কিন্তু পাখির সীমানা আকাশজুড়ে।

আমরা আকাশে উড়তে পারি না, সেটার একটা কারণ অবশ্যই ডানা। কিন্তু এটাই একমাত্র কারণ নয়। হুট করে ডানা গজালেও কি আমরা উড়তে পারতাম পাখির মতো? চলুন, পাখি কীভাবে ওড়ে, সেটা আগে দেখে নেওয়া যাক।

পাখির শরীরের প্রতিটি অংশ কোনো না কোনোভাবে ওড়ার সঙ্গে সম্পর্কিত। তাই দেখা যায় পাখির প্রায় সব অঙ্গই বিশেষভাবে তৈরি। স্তন্যপায়ী প্রাণীর তুলনায় এদের হৃৎপিণ্ড বেশ বড় ও শক্তিশালী। ওড়ার পেশিগুলো ঠিকভাবে কাজ করার জন্য প্রয়োজন হয় এ অতিরিক্ত শক্তির। অন্যদিকে বুকের হাড় বড় হওয়ায় এর সঙ্গে বেশি পরিমাণ ফ্লাইট মাসল বা ওড়ার উপযোগী পেশী যুক্ত থাকতে পারে। শুধু তা-ই নয়, পাখির হাড়গুলোও বেশ ফাঁপা ও হালকা ধরনের। এই হালকা ও কম ওজনের হাড় পাখির জন্য বলা চলে আশীর্বাদ। এ কারণে পাখির শরীরে অক্সিজেনের প্রবাহ ভালো থাকে। একই সঙ্গে পাখির হাড় ওড়ার ধকল নেওয়ার মতো যথেষ্ঠ শক্তিশালী। মজার ব্যাপার হলো, পাখির হাড় এত হালকা যে পাখির সব পালকের চেয়ে এর কঙ্কালের ওজন কম।

পৃথিবীতে প্রায় ১০ হাজার প্রজাতির পাখির দেখা পাওয়া যায়।

পাখির পালক কেরাটিন নামে একধরনের জৈব রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে তৈরি। বিজ্ঞানীদের মতে, ডাইনোসর থেকে ধীরে ধীরে বিকাশিত হয়েছে পাখির পালক। পালকের প্রতিটি তন্তু একটি আরেকটির সঙ্গে পাতলা পর্দা দিয়ে যুক্ত থাকে। ফলে এসব পালক বাতাসকে আটকে ফেলতে পারে। ডানা ঝাপটানোর মাধ্যমে পাখি পেছন দিকে ধাক্কা দিতে পারে বাতাসকে। তাই বায়ু-গতিবিদ্যা বা অ্যারোডাইনামিকস নিয়ে পড়াশোনা না থাকলেও পাখি উড়ে বেড়াতে পারে আকাশজুড়ে।

পৃথিবীতে প্রায় ১০ হাজার প্রজাতির পাখির দেখা পাওয়া যায়। এসব পাখির আকার প্রায় সাত সেন্টিমিটার থেকে ১.৮ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। আকারে যেমন বৈচিত্র আছে, তেমনি ওড়ার কৌশলেও ব্যাপক পার্থক্য দেখা যায় প্রজাতিভেদে।

আকারে ছোট পাখিদের ওড়ার জন্য প্রতি সেকেন্ডে ৪০ বারের বেশি ডানা ঝাপটাতে হয়। আবার চিল বা ঈগলের মতো লম্বা ডানার পাখি 'লো গ্লাইডিং'-এর কারণে কোনোরকম ডানা না ঝাপটেই দিব্যি ভেসে থাকতে পারে আকাশে।

গবেষণায় দেখা গেছে, ছোট ডানার পাখিরাও ডানার ঝাপটানোর মাঝে সংক্ষিপ্ত বিরতি দিয়ে ভেসে থাকতে পারে। ভেসে থাকার সময় তাদের হৃদস্পন্দনের গতি নেমে আসে অর্ধেকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পাখি বাসায় থাকলে যে পরিমাণ শক্তি খরচ করে, গ্লাইডিং অর্থাৎ বাতাসে অলস ভেসে থাকার সময়েও প্রায় সে পরিমাণ শক্তি খরচ হয়।

বুঝতেই পারছেন, পাখির ওড়ার জন্য শুধু পাখা নয়, এর সঙ্গে আরও নানা বিষয় জড়িত। আমাদের পাখা গজালেও হয়তো উড়তে পারতাম না হাড়ের জন্য। স্তন্যপায়ী প্রাণী হিসেবে মানুষের হাড় নিরেট বা মজ্জা সমৃদ্ধ। ওজনও তাই অনেক বেশি।

প্রাকৃতিকভাবে মানুষের ওড়ার ক্ষমতা না থাকলেও আছে বুদ্ধি। এই বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে বহুদিন আগেই মানুষ আকাশে বিচরণ করতে শিখে গেছে। উষ্ণ বাতাস ভর্তি বেলুন, উড়োজাহাজ, প্যারাসুট, উইংসুট, গ্লাইডিং উইংসহ আরও নানা যন্ত্রের সাহায্যে আকাশে উড়েছে মানুষ, উড়ছে আজও। আর রকেট দিয়ে তো পেরিয়ে গেছে পৃথিবীর সীমানা, পা রেখেছে চাঁদে।

তবু যখন ইচ্ছে উড়ে বেড়ানোর জন্য ডানার স্বপ্ন আমরা বোধ হয় সবাই দেখি।

লেখক: শিক্ষার্থী, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা

সূত্র: হাউইটওয়ার্কস ম্যাগাজিন