কার্বন নির্গমন কমাবে কৃত্রিম গাছ

দিন দিন বাড়ছে পৃথিবীর জনসংখ্যা। সঙ্গে বাড়ছে প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহারের চাহিদা। সেই চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। শুধু শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমেই প্রতি সেকেন্ডে পরিবেশে বাড়ছে দূষণের পরিমাণ। কার্বন ডাই–অক্সাইড গ্রহণের মাধ্যমে সেই দূষণ কমানোর নিরন্তর প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে উদ্ভিদ। তবে দূষণের পরিমাণ দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় গাছের জন্য কাজটি ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে।

দূষণ রোধে গাছের ভূমিকা যথেষ্ট না হলে তৈরি হবে নানা রকম সমস্যা। আবহাওয়া বিরূপ হয়ে যাবে। সমুদ্রের উচ্চতা বেড়ে যাবে। অ্যাসিড বৃষ্টি হবে। বিলুপ্তির মুখে পড়বে হাজার হাজার প্রজাতি। মানুষের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কারণে আট লাখ বছর ধরে কার্বন ডাই–অক্সাইডের মাত্রা কিন্তু বেড়েই চলেছে।

সমাধানের উপায় বের করতে হবে মানুষকেই। এ কাজে আরও একবার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে বিজ্ঞান গবেষণা। এখানে ভাবনাটা হলো কৃত্রিম গাছ। কাজটি শুরু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের লেনফেস্ট সেন্টার ফর সাসটেইনেবল এনার্জি প্রতিষ্ঠানে। গাছ যেভাবে বায়ুকে নির্মল করে তোলে, এ কৃত্রিম গাছগুলোও সেই কাজ করবে। রাতারাতি গাছ পাওয়া সম্ভব না হলেও এ কৃত্রিম গাছ বানিয়ে নিতে সময় লাগবে খুব কম।

গাছগুলো শক্তি সংগ্রহ করবে দুটি উৎস থেকে। ‌ওপরের সূর্য থেকে পাবে আলো ও তাপশক্তি। আর নিচের বিশেষভাবে নির্মিত মেঝে থেকে পাবে গতিশক্তি। এই ট্রি-পডগুলোও এর আশপাশের বায়ু থেকে ক্ষতিকর উপাদান দূর করতে পারে। এদের কাজের প্রক্রিয়াটির নাম হিউমিডিটি সুইং বা আর্দ্রতা স্পন্দন। এ প্রক্রিয়ায়ও কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষিত হয়। নির্গত হয় শ্বাসযোগ্য অক্সিজেন। শুধু তা–ই নয়, কাজটি ঘটে সাধারণ গাছের এক হাজার গুণ দ্রুতগতিতে। গাছের আশপাশে মানুষের সংখ্যা বেড়ে গেলে গাছের কর্মক্ষমতাও বাড়বে। কারণ, মানুষের উপস্থিতির ফলে যে নড়াচড়া হবে, সেটা থেকে গতিশক্তি পাবে এই কৃত্রিম গাছগুলো।

প্রকৃতিতে কার্বন ডাই-অক্সাইড থেকে অক্সিজেন বানানোর কাজে নিয়োজিত আছে ৬০ হাজার প্রজাতির গাছ। যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন শহরের জন্য নির্মিত কৃত্রিম গাছগুলো বানানো হয়েছে ড্রাগন ব্লাড ট্রির আদলে। গাছগুলোর অনেক দারুণ বৈশিষ্ট্য আছে। এদের ডালপালা অনেক ছড়ানো–ছিটানো। ফলে এদের থেকে অধিক পরিমাণ রেজিন (আঠালো রজন পদার্থ) নির্গত হতে পারে। এ ছাড়া গাছগুলোর রয়েছে নিজস্ব ছাঁকনপদ্ধতি।

আবার এদের ছাতার মতো আকৃতির কারণে বেশি পরিমাণ সোলার প্যানেল বসানো যায়। ফলে সর্বোচ্চ পরিমাণ ক্ষেত্রফলে সূর্যের শক্তি গ্রহণ করা সম্ভব। এভাবে একটি গাছই হাজার গাছের কাজ করতে সক্ষম হবে।