নতুন একটি মথের নামকরণ করেছেন বাংলাদেশি বিজ্ঞানী মো. জহির রায়হান ও সায়েমা জাহান। আবিষ্কারের পর ৬ মাস গবেষণা করে তাঁরা নিশ্চিত হন, এটি সম্পূর্ণ নতুন প্রজাতির মথ। তাঁরা এর নাম রেখেছেন ‘প্যারাক্সিনোয়াক্রিয়া স্পিনোসা’ (Paraxenoacria spinosa)। তাঁদের এই গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে নিউজিল্যান্ডের জুট্যাক্সা জার্নালে। এ বছরের অক্টোবর মাসে ‘আ নিউ জেনাস অ্যান্ড স্পেসিস অব পেলিওপোডিডি হজেস, ১৯৭৪ (ইনসেকটা: লেপিডোপটেরা) ফ্রম সাউথ-এশিয়া’ শিরোনামের তাঁদের লেখা নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়।
জহির রায়হান ও সায়েমা জাহান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। সেখানেই দুজনের বন্ধুত্ব হয়। একসঙ্গে বিভিন্ন সময় মথের লার্ভা খুঁজেছেন। খুঁজতে খুঁজতেই পেয়ে যান নতুন একটি গণ বা জেনাসের নতুন প্রজাতির মথ। মাসখানেক আগে তাঁরা পরস্পরকে বিয়ে করেছেন।
সায়েমা জাহানের বাড়ি চাঁদপুর। আর জহির রায়হানের বাড়ি পিরোজপুর। ২০২৩ সালে তাঁদের স্নাতক শেষ হয়। বর্তমানে জহির রায়হান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার মিউজিয়াম অন ন্যাচারাল হিস্ট্রিতে গবেষণা করছেন। আর সায়েমা বর্তমানে সুন্দরবনের বিলুপ্তপ্রায় বিশেষ এক প্রজাতি নিয়ে কাজ করছেন।
‘নতুন গণের মথ আবিষ্কারের অভিজ্ঞতা আমাদের এবারই প্রথম। এ জন্য আনন্দটাও বেশি।’সায়েমা জাহান, বাংলাদেশি বিজ্ঞানী
জহির রায়হান জানান, ‘প্রজাপতি ও মথ একই দলভুক্ত হলেও দুটি আলাদা ধরনের পতঙ্গ। সাধারণত প্রজাপতির দেখা মেলে দিনে। আর মথের দেখা মেলে রাতে। দুটোর জীবনচক্র—ডিম-শুঁয়োপোকা-পিউপা (মূককীট), তারপর পূর্ণবয়স্ক দশা—এভাবেই বিস্তার ঘটে। তবে প্রজাপতি দেখতে বেশি উজ্জ্বল।’
সায়েমা জানান, এর আগেও তাঁরা নতুন প্রজাতির মথ আবিষ্কার করেছেন। তবে এবারই প্রথম নতুন গনের মথ আবিষ্কার করলেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বিজ্ঞানচিন্তাকে জানান, ‘নতুন গণের মথ আবিষ্কারের অভিজ্ঞতা আমাদের এবারই প্রথম। এ জন্য আনন্দটাও বেশি।’
মথের নামকরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সন্তানের নাম রাখার সময় যেমন সুন্দর নাম এবং নামের অর্থ খোঁজেন, তেমনি মথের নামকরণেও অনেক কিছু চিন্তা করতে হয়। অনেকে প্রিয় মানুষের নামে নাম রাখেন। আমরাও নিজেদের নামে, বিশেষ করে জহির চাইছিল আমার নামে মথটির নামকরণ করতে। কিন্তু আমার মনে হয়েছে, তা করলে এই মথের বৈশিষ্ট্য নাম শুনে বোঝা যাবে না, আড়ালে পড়ে যাবে। তাই আমরা নিজেদের নামের সঙ্গে মিলিয়ে এর নাম রাখিনি।’
তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘এক্রিয়া’ (Estigmene acrea) নামে মথের আরেকটি প্রজাতি আছে। ওটার সঙ্গে এটির জেনাস বা গণের খানিকটা মিল আছে। আর অমিলটা হলো, ওটার সামনের ডানায় একটা বাঁক আছে, নতুন আবিষ্কৃত মথে এরকম একটি বাঁক দেখা যায় পেছনের ডানায়। এসব বৈশিষ্ট্য অনুসারেই এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘প্যারাক্সিনোয়াক্রিয়া স্পিনোসা’। সায়মা জানান, ‘“প্যারাক্সিনোয়া” কথাটির অর্থ “অদ্ভুত” বা “পিকুলিয়ার”। অর্থাৎ অদ্ভুত এক্রিয়া—এই চিন্তা থেকে এর গণের নাম দিয়েছি প্যারাক্সিনোয়াক্রিয়া।’
এই দম্পতি নতুন মথের সন্ধান চালিয়ে যেতে চান। খুঁজে বের করতে চান আরও নতুন গণ ও প্রজাতি।
মথের লার্ভা সংগ্রহ করে তা নিয়ে ল্যাবরেটরিতে গবেষণা করতে গিয়ে অনেক বাধার সম্মুখিন হয়েছেন তাঁরা। তবু দমে না গিয়ে নিজেদের বাসার ছোট্ট ল্যাবে গবেষণা করে সফল হয়েছেন।
দুজন মিলে এই প্রথম নতুন গণের মথ আবিষ্কার করলেও আগেও তাঁরা একই ধরনের কাজ করেছেন। তবে সেগুলো ছিল নতুন প্রজাতির মথ। এ সব প্রজাতির নাম অবশ্য তাঁরাই রেখেছেন। গত বছর তাঁরা একটা মথের নামকরণ করেন ‘Phragmataecia ishuqii’। চলতি বছর জুলাইয়ে আরেকটা মথের নাম দেন ‘Schistophleps kendricki’।
এই দম্পতি নতুন মথের সন্ধান চালিয়ে যেতে চান। খুঁজে বের করতে চান আরও নতুন গণ ও প্রজাতি। সমৃদ্ধ করতে চান বাংলাদেশের প্রাণিজগতের নামের তালিকা।
সূত্র: প্রথম আলো
