মাইটোকন্ড্রিয়নের গল্প

বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সংকট হওয়ার পর থেকে ‘পাওয়ার হাউজ’ শব্দটা অনেক শোনা যাচ্ছে। আমরা এর গুরুত্ব ভালোভাবেই উপলব্ধি করতে পারি। একটা বিশাল পাওয়ার হাউজ যেমন একটা নির্দিষ্ট অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে, তেমনি আমাদের কোষের ভেতরেও আছে পাওয়ার হাউজ। এর নাম মাইটোকন্ড্রিয়ন। কোষের দরকারি শক্তির বড় অংশ আসে এই সাইটোপ্লাজমীয় অঙ্গাণু থেকে।

কোষে শক্তি তৈরি হয় শ্বসন প্রক্রিয়ায়। প্রকৃত কোষে শ্বসন সম্পন্ন হয় চারটা ধাপে। এর তিনটা ধাপই সম্পন্ন হয় মাইটোকন্ড্রিয়ায়। সুতরাং প্রকৃত জীবের শ্বসনের জন্য এটি একটি অত্যাবশ্যকীয় অঙ্গাণু। যদি কোনো কারণে এই অঙ্গাণুটির কাজে ব্যাঘাত ঘটে, তার প্রভাব পড়ে পুরো কোষের ওপর। আর এর প্রভাব মারাত্মক হলে অনেক সময় তা টিস্যু বা অঙ্গ পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে।  

মাইটোকন্ড্রিয়ার অ আ ক খ

সাধারণত বৈদ্যুতিক পাওয়ার হাউজগুলো এলাকা জুড়ে অবস্থান করে। কোষের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা কিছুটা সেরকম। কোষের সামগ্রিক আয়তনের প্রায় ২০ ভাগ মাইটোকন্ড্রিয়ার দখলে। এই গুরুত্বপূর্ণ কোষীয় অঙ্গাণুটি কন্ড্রিওজোম, প্লাজমোজোম এবং সারকোজোম (ঐচ্ছিক পেশির মাইটোকন্ড্রিয়ন) নামেও পরিচিত।

মাইটোকন্ড্রিয়া পর্যবেক্ষণ ও নামকরণে যারা ভূমিকা রেখেছেন তাঁদের মধ্যে তিন জার্মান বিজ্ঞানী ডব্লিউ ফ্লেমিং, রিচার্ড অল্টম্যান এবং কার্ল বেন্ডা। আমরা সে লম্বা ইতিহাসে যাবো না। তবে এটুকু জেনে রাখা দরকার যে, তাঁরা রাতারাতি মাইটোকন্ড্রিয়ার আকৃতি বা গুরুত্ব জানতে পারেননি। আজ আমরা মাইটোকন্ড্রিয়া সম্পর্কে যা-ই জানি, তার পেছনে রয়েছে প্রায় দেড় শ বছরের ইতিহাস।

মাইটোকন্ড্রিয়ার উৎপত্তি ঘটে প্লাজমা মেমব্রেন বা নিউক্লিয়ার মেমব্রেন থেকে। এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামেরও রয়েছে বিশেষ ভূমিকা। উৎপত্তির পর এই অঙ্গাণুটি সংখ্যাবৃদ্ধি করে ফিশন প্রক্রিয়ায়। তবে সবক্ষেত্রে সংখ্যাবৃদ্ধি হয় না। আবার কিছু ক্ষেত্রে সংখ্যাবৃদ্ধি বা অন্য কোনো কারণে কোষে প্রচুর মাইটোকন্ড্রিয়ন জমা হয়।

একটি কোষে সাধারণত ৩০০-৪০০টি (মতান্তরে ২০০-৪০০টি) মাইটোকন্ড্রিয়া থাকতে পারে। কিন্তু যকৃৎ কোষে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৬০০টি মাইটোকন্ড্রিয়া থাকে। তবে কিছু অপরিপক্ক ডিম্বাণু কোষে তিন লাখ মাইটোকন্ড্রিয়া থাকতে পারে। সংখ্যাটা কত বড়, সেটা নিশ্চয়ই আন্দাজ করতে পারছেন!

এত বিপুল সংখ্যক মাইটোকন্ড্রিয়া কোষের ভেতর মোটেও গোছানো থাকে না। এরা সাইটোপ্লাজমে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে বিক্ষিপ্তভাবে। আবার অনেক সময় কোষকঙ্কালের ফাঁক-ফোকড়ে আটকে থাকে। দেখতে কোনোটা সাবমেরিনের মতো, কোনোটা ত্যাড়া-ব্যাঁকা, আবার কোনোটা সূত্রাকার। কিছু কিছু আছে গোলাকার, আবার কোনোটা বুলেটের শেলের মতো। পাঠ্য বইয়ে মাইটোকন্ড্রিয়াকে যতটা ভদ্রলোকের মতো মনে হয়, সে ততটা ভদ্র নয়।

তবে বাইরের দিকে যেমনই হোক, মাইটোকন্ড্রিয়ার ভেতরটাই হলো আসল। তাহলে চলুন দেখা যাক, কী আছে আপনার আমার মাইটোকন্ড্রিয়া?

মাইট্রোকন্ড্রিয়ার ভেতরে

আমরা এখন মাইটোকন্ড্রিয়নের ভেতরে ঢুকবো— তা যেদিক দিয়েই ঢুকি না কেন, সেদিকেই আছে দুটি পর্দা। প্রতিটি পর্দা লাইপোপ্রোটিনের তৈরি এবং ৬০ থেকে ৭৫ অ্যাংস্ট্রম পুরু।

বাইরের পর্দায় কোনো ভাঁজ নেই, গঠনটা মোটামুটি সাদামাটা। তবে ভেতরের দিকের পর্দাটায় ভাঁজ আছে। ভাঁজ খাওয়া পর্দার অংশটাকে বলা হয় ক্রিস্টি। এর গায়ে এটিপি সিন্থেজ, অক্সিজোম (আধুনিক গবেষণা বলছে, এই অক্সিজোম এটিপি সিন্থেজ এর একটি বর্ধিত অংশ) এবং ইলেকট্রন ট্রান্সপোর্ট চেইন বিদ্যমান। তবে প্রতিটা ক্রিস্টির মাঝে ফাঁকা জায়গা থাকে, যাকে আন্তঃক্রিস্টি গহ্বর বলে।

এখন মাথায় একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে পারে। এই দুটো পর্দা কি একসঙ্গে লাগানো নাকি মাঝে ফাঁকা জায়গা আছে? পর্দা দুটির মাঝে কো-এনজাইম সমৃদ্ধ তরল পদার্থে দ্বারা পূর্ণ প্রকোষ্ঠ থাকে। একে বহিঃপ্রকোষ্ঠ বা মাইটোকন্ড্রিয়াল স্পেস বলে। এর মাঝে ব্যবধান ৬ থেকে ৮ ন্যানোমিটার। অর্থাৎ দুটি পর্দা অতিক্রম করতে অনেক জায়গা পাড়ি দিতে হয়। অনেক জায়গা বলার কারণ, কোষের ক্ষেত্রে এই দূরুত্বকে মোটামুটি বড়-ই বলা যায়!

মাইটোকন্ড্রিয়ার ত্রিমাত্রিক ছবি

যাহোক, কোনোভাবে যদি ভেতরের পর্দাটাও পার হওয়া যায়, তাহলে আরেকটা প্রকোষ্ঠ পাওয়া যাবে। একে অন্তঃপ্রকোষ্ঠ বলে। এর ভেতরে থাকে দানাদার অর্ধতরল ম্যাট্রিক্স।

ইতিমধ্যে আমরা বেশ খানিকটা দূরত্ব অতিক্রম করেছি। কারণ এই ম্যাট্রিক্সেই দেখা মিলবে ডিএনএ ও রাইবোজোমের। এই দুটিকে দেখলে মাঝে-মধ্যে মনে হয় এগুলো ছড়ায়ে ছিটায়ে আছে, আবার কখনো মনে হয় হাবুডুবু খাচ্ছে ম্যাট্রিক্সে। এখানকার রাইবোজোম ৭০s প্রকৃতির। দেখুন, আপনার-আমার কোষ কিন্তু সুগঠিত। সেই হিসেবে কোষে থাকে ৮০s রাইবোজোম। আবার মাইটোকন্ড্রিয়নের ভেতরে থাকে এক্সট্রা রাইবোজোম, যা ৭০s ধরণের। তাহলে কাহিনিটা কী? এ প্রশ্নের উত্তর একটু পরে দিচ্ছি। যাহোক, এই রাইবোজোমে কিন্তু বিভিন্ন ধরণের প্রোটিন সংশ্লেষণের কাজ চলে।

মাইটোকন্ড্রিয়নের গঠন একে বিশেষ সুবিধা দেয়। যেমন, বাইরের দিকের পর্দাটা ভেতরের অংশগুলোকে রক্ষা করে। এই পর্দায় আবার পোরিন নামে প্রোটিন থাকে।

মাইটোকন্ড্রিয়ায় যে DNA থাকে, তাকে বলা হয় মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ (সংক্ষেপে mtDNA)। ১৯৬৩ সালে এর অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়। একটা মাইটোকন্ড্রিয়ায় সাধারণত ২টি থেকে ২০টি mtDNA থাকে। এগুলো দেখতে বৃত্তাকার বা চক্রাকার। এই ডিএনএর কারণেই মাইটোকন্ড্রিয়া স্বপ্রজননশীল। মানুষের mtDNA তে থাকে প্রায় ৩৭টি জিন। তবে একটা বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, আমরা মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ মায়ের কাছ থেকে পাই।

এতক্ষণ পাওয়ার হাউজের যা যা দেখলাম ও জানলাম, তা হলো ভৌত গঠন। কিন্তু এর রাসায়নিক গঠন আরও বৈচিত্র্যময়। যদি গড় হিসাবের কথা বলি, তাহলে একটি মাইটোকন্ড্রিয়নের শুষ্ক ওজনের ৬৫ ভাগ প্রোটিন, ২৯ ভাগ গ্লিসারাইড, ৪ ভাগ লেসিথিন ও সেফালিন এবং প্রায় ২ ভাগ কোলেস্টেরল। তবে এই পরিমাণটা মোটেও ধ্রুবক নয়। উনিশ-বিশ হতেই পারে। মাইটোকন্ড্রিয়ায় ফসফোলিপিডি, ভিটামিন, লাইপোপ্রোটিন, নিউক্লিক এসিড (RNA ও DNA), এনজাইম, কো-এনজাইম ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বিদ্যমান। প্রত্যেকটা যৌগই ব্যস্ত থাকে নিজ নিজ কাজে। আর এতে মাইটোকন্ড্রিয়নের স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।

মাইটোকন্ড্রিয়নের গঠন একে বিশেষ সুবিধা দেয়। যেমন, বাইরের দিকের পর্দাটা ভেতরের অংশগুলোকে রক্ষা করে। এই পর্দায় আবার পোরিন নামে প্রোটিন থাকে। এই প্রোটিন সাইটোসোল এবং মাইটোকন্ড্রিয়নের ভেতরে বিভিন্ন জিনিসের আদান-প্রদান সম্পন্ন করতে ভূমিকা রাখে। প্রোটিনের কারণেই এটিপি সাইটোসোলে আসে এবং বিপাকে ভূমিকা রাখে।

আবার বাইরের পর্দাটা অক্সিজেনের জন্য ভেদ্য। আর তাই অক্সিজেন সঠিকভাবে পরিমিত মাত্রায় এর ভেতরে প্রবেশ করতে পারে এবং সবাত শ্বসন চালু রাখতে ভূমিকা রাখে।

সুকেন্দ্রিক কোষে বিশাল ডিএনএ অনুলিপনে সবচেয়ে বেশি শক্তি খরচ হয়। মাইটোকন্ড্রিয়া ছাড়া প্রকৃত কোষের পক্ষে তা কোনোভাবে সম্ভব নয়।

মাইটোকন্ড্রিয়ার কাজ কী? 

কোষের ভেতর মাইটোকন্ড্রিয়ার অনেক কাজ। শ্বসনের কথাই ভাবা যাক। অ্যাসিটাইল কোষ তৈরি, ক্রেবস চক্র, ইলেক্ট্রন ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম—এর সবই মাইটোকন্ড্রিয়ায় সম্পন্ন হয়। এটি শ্বসনের যাবতীয় এনজাইম ও কো-এনজাইম ধারণ করে।

সুকেন্দ্রিক কোষে বিশাল ডিএনএ অনুলিপনে সবচেয়ে বেশি শক্তি খরচ হয়। মাইটোকন্ড্রিয়া ছাড়া প্রকৃত কোষের পক্ষে তা কোনোভাবে সম্ভব নয়। পাওয়ার হাউজ না থাকলে বিদ্যুৎ সরবরাহের অভাবে যেমন ফ্রিজ-ওভেন চালানো যেত না, তেমনি মাইটোকন্ড্রিয়া না থাকলে এত জটিল প্রকৃত কোষ টিকতেই পারত না। এটা বরং আরও সাংঘাতিক। প্রত্যক্ষ বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকলেও আইপিএস দিয়ে বেশ খানিকটা কাজ চালিয়ে নেওয়া যায়, কিন্তু মাইটোকন্ড্রিয়া ঠিক না থাকলে আমাদের কোষের কোনো গতিই নেই।

এখানেই শেষ নয়, এই গুরুত্বপূর্ণ সাইটোপ্লাজমিক অঙ্গাণুটি বিভিন্ন ধরনের আয়ন (Mn2+, Ca2+) ধারণ করে। এটি শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর গঠনে এবং শুক্রাণুর চলনে ভূমিকা রাখে। বিজ্ঞানীরা বলছেনন  রক্তকণিকা ও হরমোন উৎপাদনেও এর অবদান রয়েছে। শুধু তা-ই নয়, এটি নিউরোট্রান্সমিটার, স্নেহজাতীয় পদার্থের বিপাকেও ভূমিকা রাখে।

মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ (mtDNA) থাকায় এটি ভূমিকা রাখে সাইটোপ্লাজমিক ইনহেরিটেন্সে। এই অঙ্গাণুটি স্টেরয়েড জাতীয় পদার্থের জৈব সংশ্লেষণ এবং অ্যামোনিয়া নির্বীষকরণেও ভূমিকা রাখে বলে বিজ্ঞানীরা মত প্রকাশ করেছেন। এছাড়াও এটি পটাশিয়াম ও ক্যালসিয়ামের মতো বেশ কিছু পদার্থের সক্রিয় পরিবহনের কাজ করে থাকে।

এতক্ষণ মাইটোকন্ড্রিয়ার প্রশংসা শুনে খুশিতে গদগদ হয়ে গেছেন? এই অঙ্গাণুর কিন্তু নেতিবাচক ভূমিকাও রয়েছে। তবে এই নেতিবাচকতার পুরো দায়ভার এই অঙ্গাণুর ওপর দেওয়া যায় না। যদিও অক্সিডেটিভ ফসফোরাইলেশন বিষাক্ত অক্সিজেনকে পানিতে রূপান্তর করে, কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন ধরণের রিঅ্যাক্টিভ স্পিসিস উৎপন্ন হয়। বেশি বেশি রিঅ্যাক্টিভ স্পিসিস উৎপন্ন হলে এরা প্রোটিন, স্নেহদ্রব্য এবং ডিএনএকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ফলে কোষীয় মৃত্যুর সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

আবার mtDNA-তে মিউটেশন ঘটার ফলে মাইটোকন্ড্রিয়াল ব্যধি দেখা দিতে পারে। আলঝেইমার, টাইপ-১ ডায়াবেটিস, পারকিনসন’স ডিজিজ, মেটাবোলিক স্ট্রোকস ইত্যাদির সাথে এই ব্যধির একট সম্পর্ক আছে। এ সকল কারণেই মাইটোকন্ড্রিয়া  হলো বৈচিত্র্যের সাগর!

রাইবোজোম থাকায় ব্যাকটেরিয়াদের মতোই মাইটোকন্ড্রিয়া প্রোটিন সংশ্লেষণে এবং ডিএনএ থাকায় প্রজননে সক্ষম।

কোষীয় অঙ্গাণু নাকি কোষ?

মনে আছে, আমি ৭০s আর ৮০s রাইবোজোমের কথা বলেছিলাম? সাথে এটাও বলেছিলাম যে সেই রহস্যের সমাধান করবো। এখন সেটা নিয়ে কথা বলার সময়। মাইটোকন্ড্রিয়ায় দুটো বিস্ময়কর জিনিস রয়েছে—একটি হলো ৭০s রাইবোজোম এবং অন্যটি mtDNA। যতদিন বিজ্ঞানীরা এর রহস্য উদঘাটন করতে পারেননি, ততদিন এটি যতটা রহস্যময় ছিল, পরে গিয়ে ব্যাপারটা ততটাই রোমাঞ্চকর হয়ে যায়।

খেয়াল করুন, মাইটোকন্ড্রিয়ায় ৭০s রাইবোজোম আর গোলাকার বা বৃত্তাকার ডিএনএ থাকে। সাধারণত আদিকোষীদের (যেমন ব্যাকটেরিয়া, আর্কিব্যাক্টেরিয়া) এরকম রাইবোজোম আর গোলাকার ডিএনএ থাকে। বিস্ময়ের শেষটা এখানেই নয়। এই অঙ্গাণুটিতে সব ধরণের আরএনএ বিদ্যমান, এর সঙ্গে ঝিল্লীতে রয়েছে পোরিন প্রোটিন ও শক্তি উৎপাদনকারী সিস্টেম। এগুলো একদম আদিকোষী জীবদের খাঁটি বৈশিষ্ট্য।

রাইবোজোম থাকায় ব্যাকটেরিয়াদের মতোই মাইটোকন্ড্রিয়া প্রোটিন সংশ্লেষণে এবং ডিএনএ থাকায় প্রজননে সক্ষম। আবার ব্যাকটেরিয়ার মেসোজোমের সঙ্গে মাইটোকন্ড্রিয়ার ক্রিস্টির রয়েছে আশ্চর্যজনক মিল। একদম ব্যাকটেরিয়ার মতোই এর কার্যকলাপ। এ কারণে গবেষকেরা শেষমেষ সিদ্ধান্ত নিলেন, মাইটোকন্ড্রিয়া আসলে ব্যাকটেরিয়াই!

কথাটা শুনে নিশ্চয়ই অবাক হলেন। তার চেয়েও বেশি অবাক হওয়ার কথা এটা ভেবে যে, মাইটোকন্ড্রিয়া যদি ব্যাকটেরিয়াই হয়, তাহলে কোষের ভেতরে ঢুকলো কেমন করে?

বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী নেচার-এ ‘দ্য অরিজিন অব মাইটোকন্ড্রিয়া’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি নিবন্ধ বলছে, মাইটোকন্ড্রিয়া ১.৪৫ বিলিয়ন বছর আগে একটি এন্ডোসিমবায়োটিক পদ্ধতিতে উদ্ভূত হয়েছিল। ধারণা করা হয়, হঠাৎ কোনো এক দিন মাইটোকন্ড্রিয়ার পূর্বপুরুষ (সেটা একটা স্বাধীন জীব ছিল) কোনো এক প্রকৃতকোষীকে আক্রমণ করে বসে। এক্ষেত্রে ওই মাইটোকন্ড্রিয়ন ছিল সংক্রমণকারী এবং প্রকৃতকোষীটি ছিল হোস্ট।

যাহোক, এরপর মাইটোকন্ড্রিয়ায় একটা ভালো আশ্রয় পেলো। আর সংক্রমিত কোষটিও পেয়ে গেলো শক্তি উৎপাদনের একটি সিস্টেম। তারপর থেকে ওই কোষটি বংশাণুক্রমে মাইটোকন্ড্রিয়ায় বিভাজিত হয়ে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বাহিত হতে থাকল। আর এখন সেটা পরিণত হয়েছে আমাদের কোষের স্থায়ী বাসিন্দায়।

লেখক: সেক্রেটারি, জীববিজ্ঞান, বোসন বিজ্ঞান সংঘ, টাঙ্গাইল

সূত্র: মাইটোকন্ড্রিয়া-ন্যাশনাল হিউম্যান রিসার্চ ইনস্টিটিউট, দ্য অরিজিন অব মাইট্রোকন্ড্রিয়া, জীবকোষ তা নয়, যা তুমি ভাবছো, সৌমিত্র চক্রবর্তী