ভাবুন তো, আপনার দেহে এমন একটা অঙ্গ আছে, যেটার কথা বিজ্ঞানীদেরও এত দিন জানা ছিল না। এই ছোট্ট অঙ্গটা এত দিন লুকিয়ে ছিল আপনার নাকের পেছনেই গলার ওপরের দিকে। গড়ে ৩.৯ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যের এই অঙ্গটি আসলে একটা লালাগ্রন্থি। গলবিলের ওপর যেখানটায় কান থেকে ইউস্টেশিয়ান নালি এসে মিশেছে, সেখানের চারপাশে একটা উঁচু শ্লেষ্মাঝিল্লি আছে, যার নাম টরাস টিউবারিয়াস। আগে ভাবা হতো এখানে ছড়ানো-ছিটানো কিছু আণুবীক্ষণিক লালাগ্রন্থি আছে। আমাদের মুখে মূলত তিন জোড়া বড় লালাগ্রন্থি। যেগুলোর এক জোড়া জিহ্বার নিচে, এক জোড়া চোয়ালের নিচে, অন্য জোড়া চোয়ালের পেছনে কানের কাছে। এ ছাড়া মুখের ভেতর আরও হাজারখানেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লালাগ্রন্থি ছড়িয়ে আছে। বিজ্ঞানীরা এর বাইরে যে আরও একটা বড় লালাগ্রন্থি আছে, সেটা কখনো ভেবেই দেখেননি। কিন্তু নতুন আবিষ্কার হওয়া গ্রন্থিটা প্রায় ৩.৯ সেন্টিমিটারজুড়ে ঠিক নাকের পেছনেই ছিল এত দিন।
এই ছোট্ট অঙ্গটা এত দিন লুকিয়ে ছিল আপনার নাকের পেছনেই গলার ওপরের দিকে। গড়ে ৩.৯ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যের এই অঙ্গটি আসলে একটা লালাগ্রন্থি।
গলবিলের ওপর দিকটায় এই গ্রন্থিটা খুঁজে পেয়েছেন নেদারল্যান্ডস ক্যানসার ইনস্টিটিউটের একদল গবেষক, ২০২১ সালে। এটি খুব সম্ভবত গলবিলকে পিচ্ছিল ও আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে। প্রস্টেট ক্যানসার নিয়ে গবেষকেরা কাজ করতে গিয়ে হঠাৎ করেই আবিষ্কার করে বসেন এই অঙ্গটিকে। ক্যানসারের চিকিৎসায় মুখ ও নাকে যখন তেজস্ক্রিয় রশ্মি প্রয়োগ করা হয় তখন চিকিৎসকেরা চেষ্টা করেন এগুলো যেন লালাগ্রন্থিকে উদ্দীপ্ত না করে, কারণ তা রোগীর শরীরে সমস্যা তৈরি করতে পারে। আবিষ্কারক চিকিৎসক দল প্রোস্টেট ক্যানসার নির্ণয়ের জন্য PSMA-PET-CT স্ক্যান করতে গিয়ে এটিকে খুঁজে পান। প্রোস্টেট ক্যানসার হলে PSMA নামের একটা প্রোটিন বেড়ে যায়। আবার লালাগ্রন্থিতেও এই প্রোটিনটি থাকে। তাই প্রোটিনটিকে উদ্দীপ্ত করে সিটি স্ক্যান করার সময় হুট করে এই গবেষক দল এত বড় একটা লালাগ্রন্থির খোঁজ পান। এরপর গবেষক ভোগেল এবং তাঁর দল এক শ জন রোগীর সিটি স্ক্যান করে সবার দেহে এই অঙ্গটির উপস্থিতি নিশ্চিত করেন। পরে তাঁরা দুটি মরদেহের ওপর গবেষণা চালিয়েও এই অঙ্গের এবং এর নালিটির অস্তিত্ব নিশ্চিত করেন।
লেখক: শিক্ষার্থী, খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সূত্র: হাউ ইট ওয়ার্কস