নারীদের ডিপ্রেশনের ঝুঁকি কেন পুরুষের চেয়ে দ্বিগুণ

নারীদের শরীরে বিষণ্নতার সঙ্গে যুক্ত প্রায় ১৩ হাজার জিনেটিক চিহ্ন রয়েছেপিক্সেলস/ক্যানভা

চারপাশে তাকালে প্রায়ই দেখা যায়, পুরুষদের তুলনায় নারীরা বেশি ডিপ্রেশনে ভোগেন। এতদিন আমরা ভাবতাম, হয়তো পারিপার্শ্বিক চাপ বা হরমোনই এর মূল কারণ। কিন্তু বিজ্ঞানীরা এবার এর পেছনে একটি বড় জিনেটিক কারণ খুঁজে পেয়েছেন।

অস্ট্রেলিয়ার বার্গহোফার মেডিক্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষকেরা সম্প্রতি একটি বড় গবেষণা চালিয়েছেন। প্রায় ২ লাখ মানুষের ডিএনএ তন্ন তন্ন করে ঘেঁটে দেখেছেন, পুরুষদের তুলনায় নারীদের শরীরে ডিপ্রেশন তৈরির জন্য দায়ী জিনের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ!

গবেষণায় কী পাওয়া গেল

বিজ্ঞানীরা ডিএনএ বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, নারীদের শরীরে বিষণ্নতার সঙ্গে যুক্ত প্রায় ১৩ হাজার জিনেটিক চিহ্ন রয়েছে। অথচ পুরুষদের শরীরে এই সংখ্যাটা মাত্র ৭ হাজার। 

নারীদের দেহে বিষণ্নতার জিনেটিক উপাদান পুরুষদের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী
গেটি ইমেজ সিগনেচার/ক্যানভা

গবেষক জোডি থমাস বলেন, ‘নারীদের দেহে বিষণ্নতার জিনেটিক উপাদান পুরুষদের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী।’

এই জিনেটিক পার্থক্যের কারণেই পুরুষ ও নারীর ডিপ্রেশনের লক্ষণগুলোও আলাদা হয়। খেয়াল করলে দেখবেন, বিষণ্নতায় ভুগলে অনেক নারীর ওজন হুট করে বেড়ে যায় বা কমে যায়। আবার শরীর একদম শক্তিহীন হয়ে পড়ে। কারণ, ওই বাড়তি জিনগুলো সরাসরি আমাদের বিপাক প্রক্রিয়া এবং হরমোন তৈরির কারখানায় প্রভাব ফেলে।

চিকিৎসায় কেন এটা জরুরি

গবেষক ব্রিটানি মিচেল বলেন, ‘এতদিন যত ওষুধ বা চিকিৎসা আবিষ্কৃত হয়েছে, তার বেশিরভাগই পুরুষদের ওপর গবেষণা করে তৈরি। নারীদের জিনেটিক গঠন যে ভিন্ন, তা অনেক সময় উপেক্ষাই করা হয়েছে।’

ফলে অনেক সময় দেখা যায়, ডিপ্রেশনের ওষুধ পুরুষদের যতটা কাজে দেয়, নারীদের ততটা দেয় না।

জিনের ভিন্নতার কারণেই নারীরা বিষণ্নতার সঙ্গে আরও কিছু উপসর্গ অনুভব করেন
গেটি ইমেজ সিগনেচার/ক্যানভা

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সারা বিশ্বে ৩০ কোটিরও বেশি মানুষ ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশন বা গুরুতর বিষণ্নতায় ভুগছে। নেচার কমিউনিকেশনস জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণাটি চিকিৎসার জগতে নতুন দরজা খুলে দিল।

অর্থাৎ, এখন থেকে হয়তো সবার জন্য এক ওষুধ নয়, বরং জিনের গঠন অনুযায়ী নারীদের জন্য আলাদা ও পারসোনালাইজড চিকিৎসার ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে। নারীদের মনের অসুখ সারাতে এই আবিষ্কার নিঃসন্দেহে একটি বড় পদক্ষেপ।

লেখক: সহকারী শিক্ষক, গণিত বিভাগ, পদ্মা ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, শরীয়তপুর

সূত্র: সায়েন্স অ্যালার্ট