বায়ুদূষণ কমাবে তরল গাছ লিকুইড৩

লিকুইড৩

সম্প্রতি সার্বিয়ান বিজ্ঞানীরা লিকুইড৩ নামে একটি তরল গাছ উদ্ভাবন করেছেন। নাম দেখেই বোঝা যায়, এ গাছের সঙ্গে তরলের সম্পর্ক আছে। আসলে, এই তরল গাছ একটি ফটো-বায়োরিঅ্যাক্টর। মানে, ক্রমবর্ধমান মাইক্রো-অ্যালজি বা খুদে শৈবালের মতো অণুজীবের জন্য একধরনের বদ্ধ ট্যাঙ্ক। সালোকসংশ্লেষণের জন্য এতে খুব সামান্য শক্তি লাগে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, বায়ু পরিশোধনে এটি বেশ কাজে লাগবে।

কিন্তু এই খুদে শৈবাল কার্বন ডাই-অক্সাইড কীভাবে পাবে? এই গ্যাস সরবরাহ করা হবে একটি পাম্পের মাধ্যমে। তখন খুদে শৈবাল অক্সিজেন নিঃসরণ করবে। যত কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করবে, তত সবুজ বর্ণ ধারণ করবে এই খুদে শৈবাল

বায়ো-ফটোরিঅ্যাক্টর বিষয়টি আরও ভালো বোঝা যাবে উদাহরণ দিলে। ধরুন, একটি বড়, স্বচ্ছ সৌরবিদ্যুৎ চালিত অ্যাকুরিয়াম, বসানো হয়েছে শহরের রাস্তার পাশে, যেখানে লোকসমাগম বেশি। এর ভেতরে থাকবে সেই মাইক্রো-অ্যালজি। সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করবে। বিপরীতে ছাড়বে বিশুদ্ধ অক্সিজেন। ট্যাঙ্কে বসানো সোলার প্যানেল দিয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বায়োরিঅ্যাক্টরের ভেতরে খুদে শৈবালগুলো সারা বছর অবিরাম সালোকসংশ্লেষণ ক্রিয়া চালাতে পারবে। এটাই সেই ফটো-বায়োরিঅ্যাক্টর।

কিন্তু এই খুদে শৈবাল কার্বন ডাই-অক্সাইড কীভাবে পাবে? এই গ্যাস সরবরাহ করা হবে একটি পাম্পের মাধ্যমে। তখন খুদে শৈবাল অক্সিজেন নিঃসরণ করবে। যত কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করবে, তত সবুজ বর্ণ ধারণ করবে এই খুদে শৈবাল। এই হলো লিকুইড৩। তবে এই তরল গাছ যে শুধু বায়ু পরিশোধনের জন্য ব্যবহৃত হবে, তা নয়। বেঞ্চ হিসেবেও এটা ব্যবহার করা যাবে। প্রয়োজনে চার্জ করা যাবে মোবাইল ফোন।

মানুষের পরম বন্ধু গাছ। বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় বেশির ভাগ উপাদান আমরা গাছ ও বিভিন্ন উদ্ভিদ থেকে সংগ্রহ করি। নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঢাল হিসেবেও কাজ করে। কিন্তু মানুষের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের ফলে দিন দিন কমছে গাছের সংখ্যা। চিন্তার বিষয়, বলা বাহুল্য। এদিকে, নগরায়নের ফলে শহরে গাছের দেখা মেলা ভার। ফলে শহরের বায়ুতে দূষিত কণার ঘনত্ব দিন দিন বাড়ছে। বায়ু দূষণের কারণে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে নানা রোগে। দূষণ থেকে বাঁচতে ও সংশ্লিষ্ট সমস্যাগুলোর সমাধানেই সার্বিয়ান বিজ্ঞানীদের এই উদ্ভাবন।

এ ধরনের কণা ও দূষিত বায়ুর বিভিন্ন উপাদান হ্রাসে কাজ করবে লিকুইড৩, এমনটাই মনে করেন বেলগ্রেড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ইভান স্পাসোজেভিক। তিনি জানান, গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে ও বায়ুর গুণমান উন্নত করতেই লিকুইড৩ নামের এই তরল গাছ উদ্ভাবন করা হয়েছে

সার্বিয়ার রাজধানী বেলগ্রেডের আশপাশে দুটি বড় কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। ইউরোপিয়ান এনজিও হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট অ্যালায়েন্সের (এইচইএএল) মতে, এ জন্য সেখানে বায়ু দূষণের কারণে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু হয়। সার্বিয়ার ওই অঞ্চলে প্রতি ১০ হাজার জনের ১৭৫ জন বায়ু দূষণের কারণে মারা যান। বর্তমানে দেশটির বাতাসে পিএম২.৫ কণা প্রচুর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, এ ধরনের কণা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। পিএম২.৫ মানে, এসব কণার ব্যাস ২.৫ মাইক্রোমিটার বা তার চেয়ে ছোট। কত ছোট, তা বোঝা যাবে একটা উদাহরণ দিলে। মানুষের চুলের ব্যাস ৫০-৭০ মাইক্রোমিটারের মতো। অর্থাৎ এ কণা চুলের চেয়েও প্রায় ২০-৩০ গুণ ছোট। বাতাসে ভেসে বেড়ানো কঠিন ও তরল পদার্থের মিশ্রণে গঠিত এসব কণার মধ্যে থাকে অনেক ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক। শ্বাসের সঙ্গে এসব কণা দেহে প্রবেশ করে।

এ ধরনের কণা ও দূষিত বায়ুর বিভিন্ন উপাদান হ্রাসে কাজ করবে লিকুইড৩, এমনটাই মনে করেন বেলগ্রেড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ইভান স্পাসোজেভিক। তিনি জানান, গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে ও বায়ুর গুণমান উন্নত করতেই লিকুইড৩ নামের এই তরল গাছ উদ্ভাবন করা হয়েছে।

অবশ্য লিকুইড৩ গাছের পরিপূরক নয়। তবে একটি লিকুইড৩ ডিভাইস বা গাছ গড়পড়তা ২০ বছর বয়সী কোনো সাধারণ গাছ বা ২০০ বর্গমিটার ঘাসের সমপরিমাণ বায়ু পরিশোধন করতে পারে। অর্থাৎ একটা গাছ ২০ বছর ধরে যতটুকু কার্বন পরিশোধন করতে পারে, লিকুইড৩ তা পারবে মাত্র একদিনে। তবু এটা গাছের বিকল্প নয়। কারণ, গাছ শুধু অক্সিজেন দেয় না। গাছকে ঘিরে সৃষ্টি হয় প্রকৃতির বাস্তুসংস্থান। সেটা এই তরল গাছ দিয়ে সম্ভব নয়।

তবে ব্যস্ত শহরের যেসব জায়গায় গাছ লাগানো একদম সম্ভব নয়, সেখানে গাছের বিকল্প হিসেবে বসানো যেতে পারে এই লিকুইড৩। এভাবে হয়তো ভবিষ্যতে অনেকটাই দূষণমুক্ত হয়ে উঠবে শহরাঞ্চল।

লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ

সূত্র: লিকুইড৩, ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন, উইকিপিডিয়া