প্রাণিজগৎ
পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক ৭ জেলিফিশ
প্রকৃতিতে লুকিয়ে থাকা বিস্ময়কর ও সুন্দর প্রাণীগুলোর মধ্যে জেলিফিশ অন্যতম। দেখতে সাদামাটা হলেও কয়েক প্রজাতির জেলিফিশ বেশ মারাত্মক। আত্মরক্ষার জন্য টেন্টেকল বা শুঁড় থেকে বিষ ছুড়ে মারে এরা। এ বিষ শুধু সামুদ্রিক প্রাণীর জন্যই ক্ষতিকর নয়, মানুষও বিপদে পড়তে পারে। জেলিফিশের বিষ গায়ে লাগলে হালকা অস্বস্তি থেকে শুরু করে হতে পারে গুরুতর ব্যথাও। চলুন, পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক ৭ জেলিফিশের সঙ্গে পরিচিত হওয়া যাক।
১. বক্স জেলিফিশ
বক্স জেলিফিশ সাধারণত অস্ট্রেলিয়ায় পাওয়া যায়। তবে এশিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলেও দেখা মেলে এদের। এগুলো সামুদ্রিক বোলতা নামেও পরিচিত। বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক জেলিফিশ এরা। এদের বিষ শরীরে লাগার কয়েক মিনিটের মধ্যে পক্ষাঘাত বা হার্ট ফেল হতে পারে। তাৎক্ষণিক চিকিৎসা না পেলে হতে পারে মৃত্যুও। এরা এত বিষাক্ত যে ওই আক্রান্ত অঞ্চলের মানুষ সাঁতার কাটতে বিশেষ স্যুট পড়েন। এদের বৈজ্ঞানিক নাম কাইরোনেক্স ফ্লেকেরি (Chironex fleckeri)। সবচেয়ে বিষাক্ত এই জেলিফিশ সবচেয়ে শক্তিশালী প্রজাতির মধ্যেও অন্যতম।
২. ইরুকান্দজি জেলিফিশ
এই জেলিফিশ আকারে অনেক ছোট। বক্স জেলিফিশের মতো সহজে দেখা মেলে না। তাই এরা আরও বেশি ভয়ংকর। হঠাৎ এসে আক্রমণ করতে পারে। শরীরে অসহনীয় ব্যথার পাশাপাশি বমি বমি ভাব ও রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে এদের আক্রমণে। অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, হাওয়াই ও যুক্তরাজ্যে পাওয়া যায়। এদের আক্রমণে প্রতিবছর কিছু মানুষ আক্রান্ত হন, হাসপাতালেও ভর্তি হতে হয়। এদের বৈজ্ঞানিক নাম কারুকিয়া বার্নেসি (Carukia barnesi)।
৩. লায়ন্স মানে জেলিফিশ
দেখতে সিংহের কেশরের মতো বলে এমন নামকরণ। বিশ্বের সবচেয়ে বড় জেলিফিশ এই লায়ন্স মানে। এদের টেন্টেকল ১২০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। হলুদ বা লালচে বাদামি রঙের, জ্বলজ্বল করে অন্ধকারে। তা ছাড়া অতিরিক্ত বড় হওয়ায় এদের সহজেই দেখা যায়। প্রশান্ত মহাসাগর, উত্তর আটলান্টিক ও আর্কটিক সাগরের মতো শীতল পানিতে দেখা যায় সাধারণত। বৈজ্ঞানিক নাম সায়ানিয়া ক্যাপিলাটা (Cyanea capillata)। সাধারণত এসব অঞ্চলে বেশি মানুষ মাছ শিকারে যায় না। ফলে এদের বংশবৃদ্ধি হচ্ছে অবাধে। বক্স জেলিফিশের মতো মারাত্মক না হলেও এদের বিষে দেহে মারাত্মক ব্যথাসহ অ্যালার্জি হতে পারে। এরা ছোট মাছ, প্ল্যাঙ্কটন এবং অন্যান্য ছোট জলজ প্রাণী খায়।
৪. সি নেটেল
উষ্ণ ও শীতল—দুই ধরনের পানিতেই পাওয়া যায় এদের। তবে উত্তর আমেরিকার পূর্ব উপকূল ও মেক্সিকো উপসাগরে বেশি পাওয়া যায়। এদের টেন্টেকল সরু। সোনালি বা লালচে বাদামি রঙের এসব জেলিফিশ ২-৩ মিটার লম্বা হতে পারে। এদের বিষ গায়ে লাগলে জ্বালাপোড়া হতে পারে দেহে। সাধারণত শিকারকে প্যারালাইজ করতে এরা টেন্টেকল থেকে বিষ ছুড়ে মারে। এদের প্রিয় খাবার ছোট মাছ ও প্ল্যাঙ্কটন। বৈজ্ঞানিক নাম ক্রিসাওরা কুইনকুইসিরা (Chrysaora quinquecirrha)।
৫. ফ্লাওয়ার হ্যাট জেলিফিশ
এই প্রজাতির জেলিফিশ দেখতে অনেক সুন্দর। এদের বৈজ্ঞানিক নাম ওলিনডিয়াস ফরমোসা (Olindias formosa)। ছোট মাছ ও প্ল্যাঙ্কটন খেয়ে বেঁচে থাকে এরা। ৬-৭ সেন্টিমিটার ব্যাসার্ধের এই জেলিফিশ বাঁচে ৬ মাস থেকে ১ বছর। জাপান ও ব্রাজিলের উপকূলে পাওয়া যায়। তবে এদের রঙিন রূপ দেখে বোকা হবেন না। এদের রয়েছে শক্তিশালী টেন্টেকল, যার আঘাতে শরীর অবশ হয়ে যেতে পারে।
৬. মুন জেলিফিশ
আটলান্টিক, প্রশান্ত এবং ভারত মহাসাগরসহ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে আছে মুন জেলিফিশ। সাধারণত সব জায়গায় যেসব জেলিফিশ পাওয়া যায়, এটি তাদের মধ্যে অন্যতম। তবে তালিকার অন্যান্য জেলিফিশের মতো এটা অত মারাত্মক নয়। এদের টেন্টেকলও অন্যগুলোর চেয়ে হালকা। বিষ শরীরে লাগলে হালকা অস্বস্তি হতে পারে। এদের বৈজ্ঞানিক নাম অরেলিয়া অরিতা (Aurelia aurita)। ২৫-৪০ সেন্টিমিটার ব্যাসের এই জেলিফিশও ৬ মাস থেকে ১ বছর পর্যন্ত বাঁচে। এদের শরীর সাধারণত স্বচ্ছ হলেও আলো বা খাদ্যের প্রভাবে কিছুটা গোলাপি বা বেগুনি রঙের দেখায়।
৭. ক্যাননবল জেলিফিশ
নামের সঙ্গে চেহারার দারুণ মিল আছে। এদের দেহ শক্ত, কামানের গোলার মতো গোলাকার বলে এমন নামকরণ। আটলান্টিক মহাসাগর, মেক্সিকো উপসাগর ও বিশেষভাবে দক্ষিণ-পূর্ব যুক্তরাষ্ট্রের উপকূলীয় অঞ্চলে পাওয়া যায়। ২৫-৩৫ সেন্টিমিটার ব্যাসের এই জেলিফিশের বৈজ্ঞানিক নাম স্টোমোলোফাস মেলিয়াগ্রিস (Stomolophus meleagris)। সাদা বা স্বচ্ছ রঙের ওপর কিছুটা বাদামি বা নীল দাগ থাকতে পারে। এদের জীবনকাল মাত্র ৩-৬ মাস। এদের টেন্টেকলও হালকা। মানুষের জন্য তেমন বিপজ্জনক না হলেও কারো কারো এতে অ্যালার্জি হতে পারে।
