জোনাকি দেখতে কেমন? জোনাকি কি সত্যিই জোনাকির মাংস খায়?
জোনাকি পরিচিতি: পর্ব ১
কাক কাকের মাংস খায় না—প্রবাদটি হয়তো আমাদের জানা। কিন্তু জোনাকি কি জোনাকির মাংস খায়? হ্যাঁ, খায়। কথাটা আসলেই সত্যি!
গ্রামের মানুষ এদিক দিয়ে খুব ভাগ্যবান। সেখানে শহরের মতো টিউবলাইট কিংবা সোডিয়াম বাতির জৌলুশ নেই। বাঁশবন আর ঝোপঝাড়ে আটকে থাকে জমাট অন্ধকার। দূরের মাঠ থেকে শেয়ালের হাঁক ভেসে আসে। তক্ষক আর ঝিঁঝি পোকার ঐকতান মনে অন্য রকম অনুভূতির জন্ম দেয়। সেই মায়াবী অন্ধকার রাতে যেন আকাশ থেকে নেমে আসে খুদে পরির দল। লাল পরি, হলুদ পরি, সবুজ পরি!
কেউ কেউ বলে ওরা পরি নয়, নীল আকাশের তারা। পরিই হোক আর তারাই হোক, গ্রামবাংলার আঁধার রাতে স্বর্গ এনে দেয় ওই খুদে প্রাণীর দল। গ্রীষ্ম কিংবা শরতের অন্ধকার রাতে বড্ড গরম পড়ে। ছেলেমেয়েরা লেখাপড়ার পাঠ চুকিয়ে নেমে আসে উঠোনে। খেজুরপাতার মাদুর পেতে রূপকথার গল্প শোনে। কিন্তু বারবার ছেদ পড়ে সেই গল্পে। ওই যে নিমপাতার আড়ালে একটা জোনাকি খেলছে! পেছনে তার আশ্চর্য বাতি। জ্বলে আর নেভে। পুকুরপাড়ের বুনো ঝোপজঙ্গল। তার ভেতর শত শত জোনাকির মিছিল। তখন হয়তো কারও কারও কবিতার সেই কাজলা দিদির কথা মনে পড়ে যায়।
গ্রামের মানুষ এদিক দিয়ে খুব ভাগ্যবান। সেখানে শহরের মতো টিউবলাইট কিংবা সোডিয়াম বাতির জৌলুশ নেই। বাঁশবন আর ঝোপঝাড়ে আটকে থাকে জমাট অন্ধকার।
জোনাকি দেখতে কেমন
জোনাকি নিয়ে কত কাব্য, কত গল্প লেখা হয়েছে—তা গুনে শেষ করা যাবে না। কিন্তু যার সৌন্দর্যে আমরা মুগ্ধ হই, রাতের সেই বন্ধুকে কতটুকু চিনি আমরা? শহরের অধিকাংশ ছেলেমেয়ে জোনাকি দেখেনি। কিন্তু গাঁয়ের ছেলেমেয়েরা তো দেখেছে। তারা নিশ্চয়ই চেনে?
মজার ব্যাপার হলো, বেশির ভাগ ছেলেমেয়েই চেনে না! এটাই আসল সত্যি। শুধু ছেলেমেয়েরা কেন, বড়রাও চেনে না। তবে কেউ কেউ অবশ্য চেনে।
কিন্তু কেন কেউ দিনের বেলা জোনাকি চেনে না? কারণ, দিনের বেলা জোনাকির আলো জ্বলে না। দিনে একে দেখলে তখন সাধারণ একটা গুবরে পোকা বলেই মনে হয়। হুবহু জোনাকির মতো দেখতে আরও কয়েক রকম বিটল বা গুবরে পোকা আছে। তাই বেশির ভাগ মানুষই জানে না, দিনের বেলা জোনাকি দেখতে আসলে কেমন।
দিনের বেলা জোনাকির আলো জ্বলে না। দিনে একে দেখলে তখন সাধারণ একটা গুবরে পোকা বলেই মনে হয়। হুবহু জোনাকির মতো দেখতে আরও কয়েক রকম বিটল বা গুবরে পোকা আছে।
জোনাকি পরিচয়
জোনাকি পোকাকে ইংরেজিতে বলা হয় ফায়ারফ্লাই বা লাইটেনিং বাগ। আসলে এরা বিটল বা গুবরে পোকাদেরই একটি প্রজাতি। এদের বৈজ্ঞানিক নাম ল্যাম্পাইরিডি।
বিশ্বের প্রায় সব জায়গাতেই জোনাকিদের দেখা যায়। তবে যেসব অঞ্চলের আবহাওয়া উষ্ণ, সেখানেই জোনাকিরা বাস করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। জোনাকিরা শীত পছন্দ করে না। তাই অ্যান্টার্কটিকা ও উত্তর মেরুর তুষারবৃত্ত এলাকায় এদের দেখা পাওয়া যায় না।
এ পর্যন্ত ২ হাজার ২০০ এর বেশি প্রজাতির জোনাকি শনাক্ত করেছেন বিজ্ঞানীরা। এর মধ্যে শুধু যুক্তরাষ্ট্র আর কানাডাতেই প্রায় ১৬৫টি প্রজাতির জোনাকির দেখা মেলে। তবে জোনাকির প্রজাতিসংখ্যা প্রতিবছরই বাড়ছে। কারণ, নতুন নতুন প্রজাতির জোনাকি আবিষ্কার করছেন বিজ্ঞানীরা।
বাংলাদেশে আগে ৪ প্রজাতির জোনাকি দেখা যেত। এখন মাত্র একটা প্রজাতিই টিকে আছে। বাংলাদেশে সারা বছরই কমবেশি জোনাকি দেখা যায়। সাধারণত অন্ধকার রাতে জোনাকি বেশি চোখে পড়ে। জোছনা রাতে জোনাকি তুলনামূলক কম দেখা যায়। শীতকালেও জোনাকি তেমন দেখা যায় না। তবে দিনের বেলায় ঝোপঝাড়ে খুঁজলে সারা বছরই জোনাকি পোকা দেখা যায়।
চলবে…