আঙুলের ছাপ বা ফিঙ্গারপ্রিন্ট মানুষের জন্মগত পরিচয়পত্র। প্রতিটি মানুষের আঙুলের ছাপ আলাদা। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে প্রায় ১৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এটি ব্যবহৃত হচ্ছে। বর্তমানে স্মার্টহোম বা অফিসসহ বিভিন্ন ডিজিটাল প্রযুক্তি পণ্যে ব্যবহারকারীর পরিচয় শনাক্ত করতেও ব্যবহৃত হচ্ছে আঙুলের ছাপ।
কোষ বিভাজনের কারণে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের দেহে আসে নানা পরিবর্তন। মানুষ ছোট থেকে বড় হয়, মস্তিষ্ক বিকাশিত হয়, এমনকি কন্ঠস্বরেও আসে পরিবর্তন। এই সব পরিবর্তনের মাঝে আঙুলের ছাপও কি পড়ে? আঙুলে ছাপ কি আসলে বদলাতে পারে?
আঙুলের ছাপ হলো আমাদের আঙুলের সামনে বা তালুর অংশে থাকা ঢেউয়ের মতো আঁকাবাঁকা সুক্ষ্ম দাগের সমষ্টি। আঙ্গুল ছাড়া হাত ও পায়ের তালুর চামড়ায় দাগগুলো স্পষ্ট দেখা যায়। এগুলোকে ডার্মাল রিজও বলা হয়।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, ডার্মাল রিজ বা ফিঙ্গারপ্রিন্ট গঠনের পিছনে একক কোন কারণ নেই। আমাদের জেনেটিক বৈশিষ্ট্য এবং পরিবেশগত নানা ফ্যাক্টর অনন্য ফিঙ্গারপ্রিন্ট তৈরি করে।
ফিঙ্গারপ্রিন্টের মূল ডিজাইনটা আসে জেনেটিকভাবে। প্রায় সময়ই মা-বাবার আঙ্গুলের ছাপে যে প্যাটার্ন থাকে, কিছুটা সে ধরনের প্যাটার্ন দেখা সন্তানের আঙ্গুলে। মাতৃগর্ভে আসার ছয় মাসের মধ্য মানুষের আঙ্গুলের ছাপ পুরোপুরি তৈরি হয়ে যায়। প্রক্রিয়াটা শুরু হয় মোটামুটি গর্ভধারণের ১০ সপ্তাহের মাথায়।
ঠিক কীভাবে আঙ্গুলের ছাপ তৈরি হয় তার পুরো ব্যাখ্যা বিজ্ঞানীদের জানা নেই। গর্ভে থাকার সময় ত্বকের বাইরের স্তর বা ডার্মিস এবং ভিতরের স্তর বা এপিডার্মিসের মধ্যে ঘর্ষণজনিত কারণে একধরনের চাপ তৈরি হয় বলে মনে করেন তাঁরা। মা-বাবার জেনেটিক সংকেত আর এই চাপের কারণে উভয় ত্বকেই ছোট ছোট ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়। এটাই আমরা আঙ্গুলের ছাপ হিসেবে দেখি। মায়ের গর্ভের চারপাশের পরিবেশ সবসময় এক থাকে না। তাই আইডেন্টিক্যাল টুইন বা একই রকম দেখতে জমজের বেলাতেও আঙ্গুলের ছাপ ভিন্ন হয়।
আঙ্গুলের ছাপ যেহেতু তালুর ত্বকের দুইস্তরেরই বৈশিষ্ট্য, তাই এটি অপরিবর্তিত থাকে। বয়স বাড়ার সঙ্গে আঙুলের ছাপ শুধু একই প্যাটার্নে বড় হয়। ইট ভাঙা বা এ ধরনের ভারী কাজ করার জন্য অনেক সময় দেখা যায় হাতে আঙ্গুলের ছাপ পাওয়া যায় না। বাইরের ত্বক ক্রমাগত ক্ষয়ে যাওয়ার কারণে এমনটা হয়। কিছুদিন হাতের তালু বিশ্রামে রাখলে আবারও আগের আঙ্গুলের ছাপই ভেসে উঠে।
স্বাভাবিকভাবে তাই মানুষের আঙ্গুলের ছাপ বদলায় না। তবে, দুর্ঘটনার কারণে আঙ্গুলের ছাপ সাময়িক বা আংশিকভাবে মুছে যেতে পারে।
লেখক: শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা
সূত্র: সায়েন্স ফোকাস