ইন্টারনেট ব্যবহারে কি পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ে?

সারাবিশ্বে প্রতিবছর চারশ কোটি টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গত হয়। এর ৪ শতাংশই আসে ইন্টারনেটসহ বিভিন্ন ডিজিটাল প্রযুক্তির (যেমন—মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, গেমিং কনসোল ইত্যাদি) ব্যবহার থেকে

কার্বন ফুটপ্রিন্ট বলতে কোন ব্যক্তি, সংগঠন কিংবা প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে পরিবেশে নির্গত গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনের পরিমাণকে বোঝায়। খাবার উৎপাদন ও গ্রহণ, রাস্তাঘাট, বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী ও দালান নির্মাণ, যাতায়াতে ব্যবহৃত যানবাহন, ইন্টারনেট ব্যবহারসহ নানা উপায়ে আমরা পরিবেশে ক্রমাগত কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন করছি। কীভাবে আমরা এই কার্বন নির্গমন হ্রাস করতে পারি?

প্রথমেই জানিয়ে রাখি, ইন্টারনেট ব্যবহারের কারণে পরিবেশে গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গত হয়। ইন্টারনেট ব্যবহার করে আমরা যেসব কন্টেন্ট (নিউজ, অডিও, ভিডিও ইত্যাদি) অ্যাক্সেস করি, তার কোনোটাই আমাদের ডিভাইসে সাধারণত স্টোর করা থাকে না। এসব বিভিন্ন সার্ভারে স্টোর করা থাকে। এ জন্য অবশ্য সার্ভারে প্রচুর পরিমাণে বিদ্যুৎ সরবরাহের দরকার হয়। এই বিদ্যুৎ যদি অনবায়নযোগ্য উৎস (যেমন—কয়লা বা গ্যাস বিদ্যুৎ) থেকে আসে, তাহলে তা পরিবেশে বিভিন্ন গ্রিন হাউজ গ্যাস বিশেষ করে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন করে। যখন কোনো সার্ভার ব্যবহৃত হয়, তখন এর বিভিন্ন যন্ত্রাংশ গরম হয়। সার্ভারের কর্মদক্ষতা ঠিক রাখতে এসব যন্ত্রাংশের তাপ নিয়ন্ত্রণ করা গুরুত্বপূর্ণ। তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতেও ব্যবহৃত হয় বিদ্যুৎ।

প্রতিদিন ইউটিউব গড়ে ৬০০ কোটি গ্রাম কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ করে

সারাবিশ্বে প্রতিবছর চারশ কোটি টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গত হয়। এর ৪ শতাংশই আসে ইন্টারনেটসহ বিভিন্ন ডিজিটাল প্রযুক্তির (যেমন—মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, গেমিং কনসোল ইত্যাদি) ব্যবহার থেকে। বিশ্বের তাপমাত্রা যে ক্রমাগত বাড়ছে তা আমরা সবাই বুঝতে পারি। তবে একটু স্মার্টলি প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা কার্বন নির্গমন কমাতে পারি।

একটি ইমেইল পাঠাতে গড়ে ৪ গ্রাম কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গত হয়। আমারা প্রতিদিন কী পরিমাণ ওয়েবসাইটে অ্যাকাউন্ট খুলি এবং নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করি, তা হয়ত আমরা নিজেরাও সঠিকভাবে জানি না। এগুলো থেকেই নিয়মিত আমাদের ইনবক্সে আসে শত শত মেইল। এমন অনেক মেইল আছে যা আমরা এখনো খুলেও দেখিনি। এভাবে আমাদের অজান্তেই পরোক্ষভাবে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন করছি। সুতরাং আমাদের সচেতন হওয়া উচিৎ। অপ্রয়োজনীয় নিউজলেটার আনসাবস্ক্রাইব করে রাখাই উত্তম।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো ইউটিউবে গান শোনা। প্রায়ই আমরা কম্পিউটার একটি ট্যাবে গান চালিয়ে আরেক ট্যাবে অন্য কোন কাজ করি। ফলে ভিডিও দেখা আর হয় না। হয়ত শুধু গান শোনা এবং অন্য কাজ হয়। কিন্তু ভিডিও চালাতে অডিওর চেয়ে অনেক বেশি ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করা হয়। প্রতিদিন ইউটিউব গড়ে ৬০০ কোটি গ্রাম কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ করে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ গান শোনার জন্য এখনো অনেক বেশি ইউটিউব নির্ভর। সেক্ষেত্রে যাদের শুধু গান শোনা দরকার, ভিডিও মুখ্য নয়, তাঁরা ভিডিও রেজুলেশন একেবারে কমিয়ে ১৪৪ পিক্সেল করে গান শুনতে পারেন। এতে আপনার গান শোনাও হবে আবার পরিবেশের ক্ষতির পরিমাণও কিছুটা কমবে। এছাড়াও প্রয়োজন ছাড়া মোবাইল, কম্পিউটারের ডিসপ্লের উজ্জ্বলতা যথাসম্ভব কমিয়ে রাখা ভালো। ডিভাইসে চার্জ হয়ে গেলে চার্জার খুলে রাখলে অন্তত কিছুটা কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমানো সম্ভব।

লেখক: শিক্ষার্থী, গণিত বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান