মহাকাশ থেকে দেখা গেছে বিরল স্প্রাইট বজ্রপাত

নাসার নভোচারী মহাকাশ থেকে পৃথিবীর একটি দারুণ ছবি তুলেছেন। ছবিতে বজ্রঝড়ের ওপর দেখা যাচ্ছে লাল রঙের বিশাল ‘স্প্রাইট’ বজ্র। এটি দেখতে অনেকটা জেলিফিশের মতো। বিজ্ঞানীরা ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এটি নিয়ে গবেষণা করছেন। কিন্তু এখনো এই বিরল ঘটনাটি পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারেননি।

ছবিটি তুলেছেন স্পেসএক্সের ক্রু-১০ মিশনের পাইলট ও আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন ৭২ ও ৭৩ অভিযানের সদস্য নিকোল আয়ার্স। গত ৩ জুলাই, বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন যখন মেক্সিকো এবং যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ও টেক্সাসের ওপর দিয়ে যাচ্ছিল, তখন তিনি বিশাল বজ্রঝড়ের ওপর এই অসাধারণ দৃশ্যটি ক্যামেরাবন্দী করেন।

এলভস ৪০২ কিলোমিটার প্রশস্ত আলোর একটি চ্যাপ্টা ডিস্ক। এটি মাটির কাছাকাছি হওয়া বজ্রপাতের ঠিক ওপরের বায়ুমণ্ডলে দেখা যায়। এটি তৈরি হয় যখন বায়ুমণ্ডলে ইলেকট্রন কণার ধাক্কায় নাইট্রোজেন অণু উত্তেজিত হয়ে আলো ছড়ায়।

নিকোল আয়ার্স সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, ‘অসাধারণ! আজ সকালে মেক্সিকো ও যুক্তরাষ্ট্রের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় আমি এই স্প্রাইটটি দেখতে পেলাম।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘স্প্রাইট হলো টিএলই (Transient Luminous Event) অর্থাৎ ক্ষণস্থায়ী উজ্জ্বল ঘটনা। এটি মেঘের ওপরে ঘটে ও নিচের বজ্রঝড়ের তীব্র বৈদ্যুতিক কার্যকলাপের কারণে তৈরি হয়।’

টিএলই হলো বজ্রপাতের সময় আকাশের অনেক উঁচুতে ঘটে যাওয়া কিছু আলোর খেলা। এর মধ্যে কিছু নীল রঙের আলোর রেখা, যা ওপরের দিকে ওঠে। আবার কিছু আলো মেঘের মধ্যে উড়ন্ত ইউএফওর মতো আলোর বলয় তৈরি করে। এগুলোকে বলে এলভস (ELVES)। তবে এ ধরনের ঘটনাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় স্প্রাইট, যেমনটা নিকোল আয়ার্স ছবি তুলেছেন।

ছবিতে বজ্রঝড়ের ওপর দেখা যাচ্ছে লাল রঙের বিশাল ‘স্প্রাইট’ বজ্র। এটি দেখতে অনেকটা জেলিফিশের মতো

এলভস ৪০২ কিলোমিটার প্রশস্ত আলোর একটি চ্যাপ্টা ডিস্ক। এটি মাটির কাছাকাছি হওয়া বজ্রপাতের ঠিক ওপরের বায়ুমণ্ডলে দেখা যায়। এটি তৈরি হয় যখন বায়ুমণ্ডলে ইলেকট্রন কণার ধাক্কায় নাইট্রোজেন অণু উত্তেজিত হয়ে আলো ছড়ায়।

স্প্রাইটগুলোকে মাঝেমধ্যে জেলিফিশ বলা হয়। কারণ, এদের আলোর অনেকগুলো শাখা জেলিফিশের শুঁড়ের মতো ছড়িয়ে থাকে। আবার কেউ কেউ এদেরকে ‘গাজর’ নামেও ডাকেন। কারণ, এদের সঙ্গে গাছের শেকড়ের মতো কিছু হালকা আলোর রেখা নিচের দিকে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। এই স্প্রাইটগুলো সাধারণত বড় বজ্রঝড়ের সময় দেখা যায়। এমনকি হারিকেনের কারণে সৃষ্ট ঝড়েও দেখা যেতে পারে।

জ্যোতিবিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, লাল জেলিফিশের মতো দেখতে এই স্প্রাইটগুলো বৃহস্পতি গ্রহের বায়ুমণ্ডলেও দেখা গেছে। ধারণা করা হয়, শনি ও শুক্র গ্রহেও এদের দেখা মেলে।

স্প্রাইটগুলো আকার যেমন ভিন্ন হতে পারে, তেমনি দেখতেও হতে পারে নানা রকম। এদের মধ্যে সবচেয়ে বড় স্প্রাইটগুলো পৃথিবীর মাটি থেকে প্রায় ৫০ মাইল বা ৮০ কিলোমিটার ওপর পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। নাসার আর্থ অবজারভেটরি জানিয়েছে, আকাশের অনেক উঁচুতে থাকা নাইট্রোজেন গ্যাসের সঙ্গে বিক্রিয়া করার কারণেই স্প্রাইটগুলোর রং লাল দেখায়।

১৯৫০ সালে বিমানের যাত্রীরা প্রথম স্প্রাইট দেখতে পান। কিন্তু এটার ছবি তোলা সম্ভব হয় ১৯৮৯ সালে। জ্যোতিবিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, লাল জেলিফিশের মতো দেখতে এই স্প্রাইটগুলো বৃহস্পতি গ্রহের বায়ুমণ্ডলেও দেখা গেছে। ধারণা করা হয়, শনি ও শুক্র গ্রহেও এদের দেখা মেলে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ফক্স ওয়েদারের তথ্য অনুযায়ী, বহু বছর ধরে গবেষণার পরও বিজ্ঞানীরা এখনো নিশ্চিত নন যে কেন কিছু বজ্রপাতের কারণে স্প্রাইট তৈরি হয়, আর অন্যগুলোতে হয় না।

আকাশ পরিষ্কার থাকলে আর পরিবেশ অনুকূল হলে মাটি থেকেও স্প্রাইট বা অন্য ধরনের উজ্জ্বল আলোর ছবি তোলা যায়। তবে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের নভোচারীরা এই স্প্রাইটগুলো আরও ভালোভাবে দেখতে পান। কারণ, তাঁরা মহাকাশে থাকেন এবং একই সময়ে বজ্রপাতের ঝলকানিও খুব কাছ থেকে দেখতে পান। নভোচারীদের তোলা ছবি ও তথ্য বিজ্ঞানীদের এই ধরনের রহস্যময় ঘটনাগুলো কীভাবে ঘটে, তা বুঝতে অনেক সাহায্য করে।

স্প্রাইটগুলো আকার যেমন ভিন্ন হতে পারে, তেমনি দেখতেও হতে পারে নানা রকম। এদের মধ্যে সবচেয়ে বড় স্প্রাইটগুলো পৃথিবীর মাটি থেকে প্রায় ৫০ মাইল বা ৮০ কিলোমিটার ওপর পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।

নভোচারী নিকোল আয়ার্স লিখেছেন, ‘মহাকাশ থেকে পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে থাকলে আমরা বহু অসাধারণ প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে পাব। এর মধ্যে কিছু দৃশ্য এতই বিরল যে পৃথিবী থেকে তা চোখে প্রায় পড়েই না। আশা করছি বিজ্ঞানীরা এ ধরনের ছবিগুলো ব্যবহার করে ভালোভাবে বুঝতে পারেন, বজ্রঝড়ের সঙ্গে আকাশে হঠাৎ দেখা উজ্জ্বল আলোর এই ঘটনা কীভাবে তৈরি হয়। এগুলোর বৈশিষ্ট্য কী ও এদের মধ্যে কী সম্পর্ক রয়েছে।’

লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ

সূত্র: লাইভ সায়েন্স, স্পেস ডটকম