তেলাপোকা পরিচিতি

তেলাপোকাকে আরশোলাও বলা হয়। এদের কয়েকটি আঞ্চলিক নামও রয়েছে। যেমন ‘তেলাচোরা’ বা তেলচোট্টা। এগুলো বিশেষ করে পুরান ঢাকায় প্রচলিত। এমন নাম দেওয়ার পেছনে ‘চোরা-চোট্টা’ কথাগুলোর সাধারণ অর্থ দাঁড়ায় ‘চুরি করা’। এখানে এমন ভাবা যেতে পারে যে, এই পতঙ্গগুলো যেন এইমাত্র কোনো তেলের পাত্র থেকে ডুব দিয়ে এসেছে। কারণ, এদের দেহ সব সময়ই তেলতেলে, চকচকে।

পৃথিবীর সব প্রাণীকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়—মেরুদণ্ডী ও অমেরুদণ্ডী প্রাণী। তেলাপোকা অমেরুদণ্ডী প্রাণী। অর্থাৎ আমাদের মতো মেরুদণ্ড নেই এদের। দ্বিতীয়ত এগুলো ‘সন্ধিপদী’ প্রাণী (Arthropoda)। অর্থাৎ এ দলের প্রাণীগুলোর অঙ্গপ্রতঙ্গ সন্ধিযুক্ত। এতে এদের পেশিগুলো সহজে নড়াচড়া করতে পারে। তেলাপোকা সন্ধিপদী দলের ‘ইনসেক্টা’ শ্রেণির অন্যতম সদস্য বা প্রজাতি। এই শ্রেণির প্রজাতির সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ (যা পৃথিবীর গাছসহ সব জীব প্রজাতির অর্ধেকেরও বেশি)।

আমাদের দেহ-কাঠামো (কঙ্কাল) ভেতরে থাকে। অন্যদিকে তেলাপোকাসহ সব কীটপতঙ্গের দেহ-কাঠামো থাকে ওপরের দিকে।

এদের দেহ তিন খণ্ডে বিভক্ত—মাথা, ধড় ও উদর। ধড়ে তিন জোড়া পা ও সাধারণত দুই জোড়া পাখা থাকে। মাথায় দুটি লম্বা শুল রয়েছে। তা খুব অনুভূতিপ্রবণ হয়ে থাকে। এদের বিস্তার সারা পৃথিবীতেই। খাদ্য মালবাহী জাহাজ এদের উপযুক্ত বাসস্থান। আর আমাদের বাসাবাড়ির রান্নাঘর এদের প্রিয় স্থান। এসব জায়গায় এরা ডিম পেড়ে বাচ্চা ফোটায়। এরা সর্বভুক বা Omnivore (সব ধরনের খাবার খেতে অভ্যস্ত)। অনেক আগে পতঙ্গগুলো আফ্রিকা থেকে নানা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল বলে ধারণা করা হয়।

এরা সর্বভুক বলে ৩৫ কোটি বছর ধরে প্রকৃতির খাদ্যাভাব ও প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও নিজেদের টিকিয়ে রাখতে পেরেছে। পরিবেশে খাবারের অভাব দেখা দিলে তারা একে অপরকে খেয়ে বেঁচে থাকে। আমাদের মাথার চুল, দেহের মরা চামড়া খেয়েও এগুলো বেঁচে থাকতে পারে। আমাদের দেশের প্রধান দুটি তেলাপোকা প্রজাতির নাম: Periplanata americana এবং Blatta orientals.

 

লেখক: সাবেক জ্যেষ্ঠ আণবিক বিজ্ঞানী ও খণ্ডকালীন অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।