চিকিৎসাবিদ্যায় নোবেল ২০২৩
গত বছর জীববিজ্ঞানে নোবেল পেলেন কারা, কেন
করোনাভাইরাসে পৃথিবী যখন দিশাহারা, তাঁদের গবেষণা তখন আশার আলো দেখিয়েছে মানুষকে। তাঁদের গবেষণার সূত্র ধরেই উদ্ভাবিত হয়েছে এমআরএনএ ভ্যাকসিন। ক্যাতালিন ক্যারিকো এবং ড্রু ওয়াইজম্যানের সেই চিকিৎসাবিদ্যায় নোবেলজয়ী গবেষণা...
২০২৩ সালে চিকিৎসাবিজ্ঞান ও শারীরতত্ত্বে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন হাঙ্গেরীয় বিজ্ঞানী ক্যাতালিন ক্যারিকো ও মার্কিন বিজ্ঞানী ড্রু ওয়াইজম্যান। কোভিড-১৯ প্রতিরোধে কার্যকর এমআরএনএ ভ্যাকসিন তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় নিউক্লিওটাইড বেস মডিফিকেশন বা পরিমার্জনের পদ্ধতি আবিষ্কারের জন্য তাঁরা এই পুরস্কার পেয়েছেন বলে জানিয়েছে নোবেল কমিটি।
২০১৯ সালে প্রথম শুরু হয় করোনাভাইরাস বা সার্স-কোভ-২ (SARS-CoV-2) সংক্রমণ। ২০২০ সালের শুরুতে এটি মহামারির রূপ নেয়। এ ভাইরাস সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার পর অনেকে ভাবতে পারেননি যথাসময়ে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন তৈরি করা সম্ভব হবে। কিন্তু রেকর্ড সময়ে, অর্থাৎ অনেক কম সময়ে বিজ্ঞানীরা বেশ কয়েকটি ভ্যাকসিন উদ্ভাবন করেন। তার মধ্যে দুটি ফাইজার-বায়োএনটেক ও মডার্না ছিল এমআরএনএ (mRNA) ভ্যাকসিন। অতি দ্রুত তৈরি এবং অনুমোদনপ্রাপ্ত এ দুই ভ্যাকসিনের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে ক্যারিকো ও ওয়াইজম্যানের আবিষ্কার।
কোনো রোগের ভ্যাকসিন বা টিকা নিলে ওই রোগের বিরুদ্ধে আমাদের দেহের ইমিউন সিস্টেম বা প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কাজ শুরু করে। এ সময় দেহ ওই ভাইরাসের সঙ্গে পরিচিত হয়। তাই পরে সেই রোগে আক্রান্ত হলে দেহের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দ্রুত কাজ করতে পারে, অল্প সময়ে ধ্বংস করে দিতে পারে ওই রোগের জীবাণু।
ভ্যাকসিন তৈরিতে মৃত বা দুর্বল ভাইরাস এবং ভাইরাসের অংশ অনেক আগে থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। হেপাটাইটিস এ ভ্যাকসিন তৈরি করা হয় মৃত ভাইরাস থেকে, অন্যদিকে হাম-রুবেলা-মাম্পসের ভ্যাকসিন তৈরি করা হয় দুর্বল ভাইরাস থেকে। একইভাবে তৈরি ইয়েলো ফিভারের ভ্যাকসিনের জন্য ১৯৫১ সালে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল। আবার হেপাটাইটিস বি, প্যাপিলোমা ভাইরাসের ভ্যাকসিন আসলে ভাইরাসের প্রোটিন। এগুলো গবেষণাগারে তৈরি করা হয়। এ ছাড়া ভাইরাসের জেনেটিক কোড অন্য একটি নিরীহ ভাইরাসে (ভেক্টর ভাইরাসে) প্রবেশ করিয়েও তৈরি করা হয় ভ্যাকসিন। ভেক্টর ভাইরাস শরীরে গিয়ে ওই জেনেটিক কোড অনুযায়ী প্রোটিন তৈরি করতে থাকে, যা দেখে দেহের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা মূল ভাইরাসকে চিনে নেয়। সম্প্রতি ইবোলা ভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়েছে এভাবে। কিন্তু এসব পদ্ধতিতে ভ্যাকসিন তৈরি করতে অনেক বড় আকারের গবেষণা ও প্রচুর খরচ প্রয়োজন। তাই মহামারির সময় অতি দ্রুত এ ধরনের ভ্যাকসিন নতুন করে তৈরি করা বেশ কঠিন। ভ্যাকসিন তৈরির পথ সহজ করতে ডিএনএ বা এমআরএনএ–ভিত্তিক ভ্যাকসিন তৈরির সম্ভাবনার কথা ভাবছিলেন অনেক বিজ্ঞানী।
এসব বাধা হাঙ্গেরির বায়োকেমিস্ট বা জীবরসায়নবিদ ক্যাতালিন ক্যারিকোকে দমিয়ে রাখেনি। তিনি ঠিকই এমআরএনএ–নির্ভর চিকিৎসাপ্রযুক্তি আবিষ্কারের চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। তিনি যখন ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ায় সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কাজ করছিলেন, তখন তাঁর নতুন সহকর্মী হিসেবে যোগ দেন ইমিউনোলজিস্ট বা দেহের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা–বিজ্ঞানী ড্রু ওয়াইজম্যান।
আমাদের দেহের কোষে জেনেটিক কোড হিসেবে আছে ডিএনএ, যার অবস্থান নিউক্লিয়াসে। এ থেকে তথ্য বহন করে নিয়ে যায় মেসেঞ্জার আরএনএ, সংক্ষেপে এমআরএনএ। এই এমআরএনএ থেকে নির্দেশনা নিয়ে সাইটোপ্লাজমে, অর্থাৎ কোষের জলীয় অংশে তৈরি হয় দেহের প্রয়োজনীয় প্রোটিন। ভ্যাকসিন হিসেবে সরাসরি ডিএনএ বা এমআরএনএ ব্যবহার করতে পারলে দেহের নিজের প্রোটিন তৈরির কলকবজা দিয়েই ভাইরাসের প্রোটিন তৈরি করে নেওয়া যায়, আলাদা করে ভাইরাসকে দুর্বল করা কিংবা ভেক্টর ভাইরাস ব্যবহার করতে হয় না।
প্রথম প্রথম ডিএনএ ভ্যাকসিন তৈরি করা তুলনামূলক সহজ ভেবেছিলেন বিজ্ঞানীরা। তবে এতে তেমন ফল পাওয়া যাচ্ছিল না। ডিএনএ ভ্যাকসিনকে প্রথমে প্রবেশ করতে হবে কোষের নিউক্লিয়াসে। এরপর তা থেকে এমআরএনএ তৈরি হয়ে তারপর তৈরি হবে প্রোটিন। অথচ এমআরএনএ ভ্যাকসিন সাইটোপ্লাজমে সরাসরি প্রোটিন তৈরি করতে পারে। এ ছাড়া ডিএনএ ভ্যাকসিনে থাকা ডিএনএ দেহের কোষের ডিএনএর সঙ্গে যুক্ত হয়ে স্থায়ীভাবে থেকে যাবে কি না, এই প্রশ্ন থেকে যায়। এমআরএনএ ভ্যাকসিনে সে ঝুঁকি একেবারে নেই।
আশির দশকে গবেষণাগারে কোষ ছাড়া এমআরএনএ তৈরির পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছিল। একে বলা হয় ইন ভিট্রো ট্রান্সক্রাইবড এমআরএনএ। গবেষণাগারে এমআরএনএ তৈরির সুবিধা হলো, নিজের ইচ্ছেমতো নিউক্লিওটাইড সাজিয়ে এমআরএনএ তৈরি করা যায়। তাই কোনো এমআরএনএ ভ্যাকসিন তৈরি করতে হলে শুধু কোন নিউক্লিওটাইডের পর কোনটি বসাতে হবে, সেটি জানা থাকলে চলে। নতুন করে কোনো কিছু আবিষ্কারের প্রয়োজন পড়ে না। ইন ভিট্রো ট্রান্সক্রাইবড এমআরএনএ আবিষ্কারের পরই এ প্রযুক্তিকে ভ্যাকসিন ও চিকিৎসার কাজে ব্যবহারের চেষ্টা শুরু হয়। কিন্তু সামনে তখনো অনেক বাধা। ইন ভিট্রো ট্রান্সক্রাইবড এমআরএনএ সহজে ভেঙে বা নষ্ট হয়ে যায়। তাই তৈরির পর একে দেহে প্রবেশ করানোর জন্য আবিষ্কৃত হয়েছে বিভিন্ন প্রযুক্তি। প্রথমে ধনাত্মক চার্জযুক্ত লিপিড কণা দিয়ে এমআরএনএকে মুড়িয়ে দেহে প্রবেশ করানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এর মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়। পরে লিপিড ন্যানোকণা ব্যবহার করে এমআরএনএ দেহে প্রবেশ করানো হয় সফলভাবে। সফলতা এল বটে, কিন্তু আরেকটি সমস্যার সমাধান তখনো বাকি। ইন ভিট্রো ট্রান্সক্রাইবড এমআরএনএ নিজেও ইনফ্ল্যামেটরি রিঅ্যাকশন ঘটায়, অর্থাৎ দেহে প্রদাহ বা জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করে।
এসব বাধা হাঙ্গেরির বায়োকেমিস্ট বা জীবরসায়নবিদ ক্যাতালিন ক্যারিকোকে দমিয়ে রাখেনি। তিনি ঠিকই এমআরএনএ–নির্ভর চিকিৎসাপ্রযুক্তি আবিষ্কারের চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। তিনি যখন ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ায় সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কাজ করছিলেন, তখন তাঁর নতুন সহকর্মী হিসেবে যোগ দেন ইমিউনোলজিস্ট বা দেহের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা–বিজ্ঞানী ড্রু ওয়াইজম্যান। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল প্রতিরক্ষাব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ অংশ—ডেনড্রাইটিক কোষ নিয়ে। ভ্যাকসিন নেওয়ার পর শরীরে প্রতিরক্ষাব্যবস্থার কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এই কোষ। তাই ক্যারিকো ও ওয়াইজম্যান একসঙ্গে সহজে এমআরএনএ–নির্ভর চিকিৎসাব্যবস্থা তৈরির পথে এগিয়ে গেছেন।
ফাইজার-বায়োএনটেক আর মডার্না—দুটি ভ্যাকসিনই মূলত লিপিড ন্যানোকণায় মোড়ানো এমআরএনএ। এতে ইউরিডিনের (U) পরিবর্তে আছে স্যুডোইউরিডিন (psy)। এই এমআরএনএ দেহের কোষে প্রবেশ করে যে প্রোটিন তৈরি করে, তা মূলত করোনাভাইরাসের বাইরের আবরণে থাকা স্পাইক প্রোটিন।
ক্যারিকো ও ওয়াইজম্যান দেখলেন, ইন ভিট্রো ট্রান্সক্রাইবড, অর্থাৎ গবেষণাগারে তৈরি এমআরএনএর সঙ্গে ডেনড্রাইটিক কোষ প্রতিক্রিয়া ঘটায়। অর্থাৎ এমআরএনএগুলোকে দেহের বাইরে থেকে আসা কিছু হিসেবে বিবেচনা করে সেগুলোকে ধ্বংস করে ফেলে। কিন্তু দেহের ভেতরে তৈরি এমআরএনএর ক্ষেত্রে এই সমস্যা হয় না। তাঁরা এ ঘটনার পেছনের কারণ খুঁজতে চাইলেন।
আরএনএতে চারটি নিউক্লিওটাইড থাকে—অ্যাডেনিন (A), ইউরাসিল (U), গুয়ানিন (G) ও সাইটোসিন (C)। এগুলো থেকে যখন ডিএনএ তৈরি হয়, তখন ডিএনএতে থাকে অ্যাডেনিন (A), থায়ামিন (T), গুয়ানিন (G) ও সাইটোসিন (C)। দেহে তৈরি এমআরএনএর নিউক্লিওটাইডে কিছু রাসায়নিক পরিবর্তন আসে। গবেষণাগারে তৈরি এমআরএনএতে এগুলো নেই। এ রকম বিভিন্ন রাসায়নিক পরিবর্তন গবেষণাগারে তৈরি এমআরএনএতে ঘটিয়ে সেগুলো ডেনড্রাইটিক কোষের সঙ্গে কী রকম প্রতিক্রিয়া ঘটায়, ক্যারিকো ও ওয়াইজম্যান সেটা দেখতে চেষ্টা করলেন।
তাঁরা দেখলেন, গবেষণাগারে তৈরি এমআরএনএর নিউক্লিওটাইডে কিছু রাসায়নিক পরিবর্তন আনলে তারা আর ডেনড্রাইটিক কোষের সঙ্গে কোনো প্রতিক্রিয়া ঘটায় না। ফলে এমআরএনএগুলো আর নষ্ট হয়ে যায় না, আবার দেহে প্রদাহও সৃষ্টি হয় না। তখন এই এমআরএনএ থেকে তৈরি হয় প্রোটিন, যা মূল ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে প্রস্তুত করে তুলতে পারে। এমআরএনএতে আনা রাসায়নিক পরিবর্তনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কার্যকরী ছিল ইউরিডিনকে (U) স্যুডোইউরিডিনে (psy) রূপান্তর করা। শুধু এ পরিবর্তন করলেই এমআরএনএর সঙ্গে ডেনড্রাইটিক কোষ আর প্রতিক্রিয়া দেখায় না। নিজেদের এই আবিষ্কার তাঁরা প্রকাশ করেন করোনা মহামারির ১৫ বছর আগে, ২০০৫ সালে।
পরে তাঁরা আবিষ্কার করেন এমআরএনএতে এ রকম পরিবর্তন করলে প্রোটিন তৈরির হার অনেক বেড়ে যায়। এই পরিবর্তিত এমআরএনএগুলো প্রোটিন উৎপাদন নিয়ন্ত্রণকারী এনজাইমের কাজ কমিয়ে দেয়, তাই প্রোটিন উৎপাদন হয় বেশি।
প্রোটিন উৎপাদন বৃদ্ধির আরও একটি উপায় বের করেন তাঁরা। বিভিন্ন পরিশোধনপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে দ্বিসূত্রক এমআরএনএ দূর করে শুধু একসূত্রক এমআরএনএ আলাদা করে নেওয়া। নিউক্লিওটাইডে পরিবর্তন আনা এমআরএনএ পরিশোধনের পর দেহে প্রবেশ করালে প্রদাহজনিত সমস্যা দেখা দেয় না, আবার প্রোটিন তৈরির হারও বেশি হয়। ক্যারিকো ও ওয়াইজম্যানের এই আবিষ্কার চিকিৎসার ক্ষেত্রে এমআরএনএ ব্যবহারের অনেকগুলো বাধা দূর করে।
তাঁদের এই আবিষ্কারের পর ২০১০ সালে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এমআরএনএ ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ শুরু করে। প্রথমে জিকা ও সার্স নিয়ে কাজ শুরু হলেও ২০২০ সালে করোনা মহামারির সময় বায়োএনটেক ও মডার্না খুব দ্রুত বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে যাওয়া এই মহামারির ভ্যাকসিন তৈরির কাজ শুরু করে।
ফাইজার-বায়োএনটেক আর মডার্না—দুটি ভ্যাকসিনই মূলত লিপিড ন্যানোকণায় মোড়ানো এমআরএনএ। এতে ইউরিডিনের (U) পরিবর্তে আছে স্যুডোইউরিডিন (psy)। এই এমআরএনএ দেহের কোষে প্রবেশ করে যে প্রোটিন তৈরি করে, তা মূলত করোনাভাইরাসের বাইরের আবরণে থাকা স্পাইক প্রোটিন। এই স্পাইক প্রোটিন চলে যায় কোষঝিল্লিতে, যেখানে দেহের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা তাকে চিনে নেয়, তৈরি করে করোনাভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনরোধী অ্যান্টিবডি।
এমআরএনএ ভ্যাকসিন এভাবে দ্রুত তৈরি এবং অনুমোদন পাওয়ার ফলে একই প্রযুক্তি ব্যবহার করে অন্যান্য রোগের ভ্যাকসিন তৈরির দ্বার খুলে গেছে। গত কয়েক বছরে এমআরএনএ ভ্যাকসিনের সফল প্রয়োগ থেকে বোঝা যায়, এমআরএনএ ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও খুব কম।
দুই ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়ার পর ফাইজার-বায়োএনটেক ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা ছিল ৯৫ শতাংশ। আর মডার্না ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে তা ছিল ৯৪ শতাংশ। তিন ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শেষে এ দুই ভ্যাকসিন ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে অনুমোদন পেয়ে যায়, জীবন বাঁচায় পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষের।
এমআরএনএ ভ্যাকসিন এভাবে দ্রুত তৈরি এবং অনুমোদন পাওয়ার ফলে একই প্রযুক্তি ব্যবহার করে অন্যান্য রোগের ভ্যাকসিন তৈরির দ্বার খুলে গেছে। গত কয়েক বছরে এমআরএনএ ভ্যাকসিনের সফল প্রয়োগ থেকে বোঝা যায়, এমআরএনএ ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও খুব কম। তাই সামনে আরও অনেক রোগের এমআরএনএ ভ্যাকসিন আসবে বলে আশা করা যায়।
এমআরএনএ প্রযুক্তি শুধু ভ্যাকসিন তৈরিতে ব্যবহার হবে, এমনটি ভাবা মোটেও ঠিক হবে না। চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম প্রোটিনের ব্যবহার রয়েছে। বাইরে থেকে দেহে প্রোটিন প্রবেশ না করিয়ে সেই প্রোটিন তৈরি করার নির্দেশনাযুক্ত এমআরএনএ প্রবেশ করিয়ে আরও সহজে সেই চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হতে পারে। এভাবে এমআরএনএ প্রযুক্তি ব্যবহৃত হতে পারে ক্যানসার চিকিৎসায় কিংবা প্রতিরক্ষাব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে।
২০০৫ সালে যখন ক্যারিকো ও ওয়াইজম্যান তাঁদের আবিষ্কার প্রকাশ করেছিলেন, তখন সেটা তেমন আলোড়ন তোলেনি। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারি তাঁদের আবিষ্কারের উপযোগিতা সবার সামনে তুলে ধরেছে, বাঁচিয়েছে অগণিত মানুষের জীবন।