ভাইরাস আক্রমণকারী ভাইরাস!

একটি ভাইরাসকে আক্রমণ করছে আরেকটি ভাইরাসছবি: Tagide deCarvalho/UMBC
৩১ অক্টোবর ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর মাইক্রোবিয়াল ইকোলজি জার্নাল-এ গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়।

ভাইরাসের গায়ে লেগে আছে আরেকটি ভাইরাস। ট্রান্সমিশন ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপের সাহায্যে প্রথমবারের মতো এমন ঘটনা পর্যবেক্ষণ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের একদল বিজ্ঞানী। ইলেকট্রন ছুড়ে গভীরভাবে বোঝার চেষ্টার করেছেন, কীভাবে একটি ভাইরাস অন্যটির সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ায় জড়ায়, একটি অন্যটির চেয়ে কতটা ভিন্ন—এসব তথ্য। ৩১ অক্টোবর ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর মাইক্রোবিয়াল ইকোলজি জার্নাল-এ গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়।

দুটি ভাইরাসই ব্যাকটেরিয়াখেকো বা ব্যাকটেরিওফাজ ক্যাটাগরির অন্তর্ভুক্ত। যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাথমেটিকাল সায়েন্স ও কলেজ অব ন্যাচারালের সহকারী পরিচালক এবং গবেষণাপত্রটির প্রধান লেখক ট্যাগিড ডিকার্ভালহো। তিনি বলেন, এর আগে কেউ একে অন্যের সঙ্গে লেগে থাকা ব্যাকটেরিওফাজ বা অন্য কোনো ভাইরাস দেখেননি। আমরাই প্রথম।’

স্ট্রেপ্টোমাইসেস ব্যাকটেরিয়াকে আক্রমণ করে, এমন ভাইরাসের নমুনা পর্যবেক্ষণের সময় বিজ্ঞানীদের চোখে এ ঘটনা ধরা পড়ে।

ছবিতে বেগুনি রং, অর্থাৎ আকারে ছোট ভাইরাসটি বড় ভাইরাসের গায়ে লেগে থাকতে দেখা যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা একে বলছেন স্যাটেলাইট ভাইরাস। বড় ভাইরাসের সাহায্য ছাড়া এটি নিজে নিজে পোষকের কোষে আক্রমণ কিংবা নিজের প্রতিলিপি তৈরি করতে পারে না।

স্ট্রেপ্টোমাইসেস ব্যাকটেরিয়াকে আক্রমণ করে, এমন ভাইরাসের নমুনা পর্যবেক্ষণের সময় বিজ্ঞানীদের চোখে এ ঘটনা ধরা পড়ে। প্রথমে তাঁরা ভেবেছিলেন, কোনো ধরনের দূষণের কারণে এমনটা দেখা যাচ্ছে। কারণ, এগুলোর ডিএনএ সিকোয়েন্স ছিল সচরাচর ব্যাকটেরিওফাজ ভাইরাসের বড় ডিএনএ সিকোয়েন্সের চেয়ে ভিন্ন।

যাই হোক, ভাইরাসটি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে আরও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন তাঁরা। দেখতে পান, ঘটনাটা আসলেই ঘটেছে। প্রায় ৮০ শতাংশ সহায়ক ব্যাকটেরিওফাজ ভাইরাসের ঘাড়ে লেগেছিল একটি করে স্যাটেলাইট ভাইরাস।

গবেষকেরা বলছেন, এ আবিষ্কারের মাধ্যমে ব্যাকটেরিওফাজ ভাইরাসগুলো কীভাবে সময়ের সঙ্গে নিজেদের বদলে নেয়, স্যাটেলাইট ভাইরাস কীভাবে সহায়ক ভাইরাসের সঙ্গে যুক্ত হয় এবং এমন ঘটনা কতটা ঘটে—এরকম নতুন প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

স্যাটেলাইট ভাইরাস হলো আক্রমণকারী মূল ভাইরাস। তবে জিনগত সীমাবদ্ধতার কারণে এগুলো সরাসরি দেহকোষে নিজের প্রতিলিপি তৈরি করতে পারে না। এ জন্য অপেক্ষাকৃত বড় ভাইরাসের জিনের সাহায্যের দরকার পড়ে। তাই বড় ভাইরাসকে সহায়ক ভাইরাস বলা হচ্ছে এক্ষেত্রে।

গবেষকেরা বলছেন, এ আবিষ্কারের মাধ্যমে ব্যাকটেরিওফাজ ভাইরাসগুলো কীভাবে সময়ের সঙ্গে নিজেদের বদলে নেয়, স্যাটেলাইট ভাইরাস কীভাবে সহায়ক ভাইরাসের সঙ্গে যুক্ত হয় এবং এমন ঘটনা কতটা ঘটে—এরকম নতুন প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও গবেষণার মাধ্যমে পেতে হবে এগুলোর উত্তর।

ভাইরাস মানুষসহ যেকোনো প্রাণীদেহের জন্য বেশির ভাগ সময় ক্ষতিকর। বিভিন্ন রোগ-বালাই এগুলোর মাধ্যমে ছড়ায়। ভাইরাস সম্পর্কে যত জানা যাবে, তত বাড়বে সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার সুযোগ। সেদিক থেকে নতুন এ আবিষ্কার ভাইরাস সম্পর্কে আরও অনেক গবেষণার প্রয়োজন তৈরি করল। ভবিষ্যতে হয়তো এ থেকে বেরিয়ে আসবে যুগান্তকারী কোনো ফলাফল।

লেখক: প্রদায়ক, বিজ্ঞানচিন্তা

সূত্র: লাইভ সায়েন্স