ডিপথেরিয়া শব্দটি যেভাবে পেলাম

নতুন কিছু আলাদাভাবে চিহ্নিত করাসহ নানা কারণেই নাম দিতে হয়। বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও কথাটি সত্য। এসব নামের পেছনেও লুকিয়ে থাকে মজার ইতিহাস

একসময় শিশুদের মারাত্মক রোগের তালিকায় ছিল ডিপথেরিয়া। ১৯৮০–এর দশকে এ রোগের ভ্যাকসিন আবিষ্কারের পর তা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। একসময় ধারণা করা হতো, বিড়ালের মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে এটি আসলে ভুল ধারণা। মূলত হাঁচি ও কাশির মাধ্যমে একজনের কাছ থেকে আরেকজনের দেহে রোগটি ছড়ায়। ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে এ রোগ হয়, যা করিনিব্যাকটিরিয়াম ডিপথেরি (Corynebacterium diphtheriae) নামে পরিচিত। মানুষই এই ব্যাকটেরিয়ার একমাত্র পোষক।

রোগটি সাধারণত গায়ের হালকা তাপমাত্রা আর গলাব্যথা দিয়ে শুরু হয়। সে কারণে শুরুতে সাধারণ ঠান্ডা লাগা বলে মনে হতে পারে। কিন্তু অচিরেই মৃত কোষ গলায় জড়ো হতে থাকায় রোগটি গুরুতর হয়ে ওঠে। এতে গলায় একটা চামড়ার মতো আবরণ তৈরি হয়। ফলে খাবার খেতে বা গিলতে খুব সমস্যা হয়। গুরুতর সমস্যা দেখা দেয় শ্বাসপ্রশ্বাসেও। পরে গোটা দেহে রোগটি ছড়িয়ে পড়ে। দেহের অঙ্গাণুগুলো একে একে অকেজো হতে থাকায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে রোগী।

ডিপথেরিয়ার মাইক্রোস্কোপিক ইলাস্ট্রেশন
ডিপথেরিয়ায় সবচেয়ে মারাত্মক ঘটনাটি ঘটে ইউরোপে ১৯৪৩ সালে। সে বছর গোটা ইউরোপে প্রায় ১০ লাখ লোক আক্রান্ত হয়।

১৯২৬ সালের আগপর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ডিপথেরিয়া ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত ছিল। সে বছর ফরাসি চিকিৎসক পিয়েরে ব্রেটোননু রোগটির নাম দেন ডিপথেরিয়া (diphthérite)। গ্রিক শব্দ diphthera অর্থ চামড়া বা ত্বক। এ সংক্রমণে গলার পেছন দিকটা পুরু আস্তরণে ঢেকে যায় বলেই এমন নাম। রোগটির সঠিক উচ্চারণ আসলে ডিপথেরিয়া নয়, ডিফথেরিয়া। তবে এখন ভুল উচ্চারণটিই প্রায় সব জায়গায় প্রচলিত হয়ে গেছে।

একসময় ডিপথেরিয়া খুবই ভয়াবহ রোগ ছিল। কোনো পরিবারে রোগটির সংক্রমণ শুরু হলে পরিবারের বেশির ভাগ কিংবা সব শিশু মারা যেত। তবে ভ্যাকসিনের (ডিপিটি ভ্যাকসিন) কারণে এখন অনেক দেশেই ডিপথেরিয়া আর দেখা যায় না বললেই চলে। ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের আগে যুক্তরাষ্ট্রে বছরে দুই লাখ মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হতো। তাদের মধ্যে প্রায় ১৫ হাজার মানুষই মারা যেত। বিশেষ করে শিশুরাই ক্ষতির শিকার হতো বেশি। ডিপথেরিয়ায় সবচেয়ে মারাত্মক ঘটনাটি ঘটে ইউরোপে ১৯৪৩ সালে। সে বছর গোটা ইউরোপে প্রায় ১০ লাখ লোক আক্রান্ত হয়। আর মারা যায় ৫০ হাজার মানুষ। ১৯৭০-এর দশকেও বিশ্বব্যাপী আতঙ্কের নাম ছিল ডিপথেরিয়া। সে সময় বছরে ১০ লাখ সংক্রমণ এবং ৫০ থেকে ৬০ হাজার মৃত্যুর ঘটনা ঘটত।

ভ্যাকসিনের কারণে ডিপথেরিয়া এখন প্রায় নির্মূল করা সম্ভব হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে চলতি দশকে মাত্র পাঁচটি ঘটনা দেখা গেছে। তাই অনেক দেশের চিকিৎসকেরা প্রায়ই রোগটি চিনতে সমস্যার মুখে পড়েন। বাংলাদেশে এখনো রোগটি দেখা যাচ্ছে, বিশেষ করে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের মধ্যে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে ২০১৮ সালেও ৪৫ জন ডিপথেরিয়ায় মারা গেছে।