প্রাণীরা কেন পরিযান করে?

শীত এলেই হাজার হাজার অতিথি পাখি এসে ভিড় জমায় আমাদের দেশে। সুমেরু অঞ্চল, পূর্ব সাইবেরিয়া এবং ইউরোপের নানা এলাকা থেকে আসে এসব পাখি। পাড়ি দেয় হাজার হাজার কিলোমিটার আকাশপথ। শুধু পাখিই নয়, মাছ, জলজ স্তন্যপায়ী প্রাণী, স্থলচর, উভচরসহ বিভিন্ন প্রাণী সাময়িক বা স্থায়ীভাবে বাসস্থান পরিবর্তন করে। কিন্তু এর কারণ কী? কেন প্রাণীরা পরিযান করে?

শীতকালে উত্তর গোলার্ধের বেশিরভাগ অঞ্চলের তাপমাত্রা ভীষণ কমে যায়। শুভ্র বরফের আস্তরণে ঢাকা পড়ে চারপাশ। ফলে, শীতল তাপমাত্রার সঙ্গে যোগ হয় খাবারের সংকট। একারণে, এই অঞ্চলের পাখিরা শীতকালে এশিয়া ও আফ্রিকার উষ্ণ এলাকায় ভ্রমণ করে। একই কারণে হাম্পব্যাক প্রজাতির তিমিরা মেরু থেকে বিষুবীয় অঞ্চলে ভ্রমণ করে দলবেঁধে। মেক্সিকোতে উড়ে আসে হাজার হাজার মনার্ক প্রজাপতি।

জলবায়ু ও খাদ্য ছাড়াও এসব প্রাণীর পরিযানের আরেকটি বড় কারণ প্রজনন। উভচর প্রাণী এবং মাছ প্রজনের সময় পরিযানের ব্যাপারটি সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। সমুদ্রের স্যামন মাছ জীবনের বেশিরভাগ সময় সাগরে কাটালেও, প্রজনন মৌসুমে ফিরে আসে নদীতে।

২০২১ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, কোনো কোনো মাছ নদীতে ফিরে আসার জন্য প্রায় ২,৯৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত পথ পাড়ি দেয়। প্রজননের জন্য অনুকূল পরিবেশ এবং পোনা মাছের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য এই পরিযান।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সাধারণত খাদ্য, প্রজনন এবং নিরাপত্তা জন্য উপযুক্ত জলবায়ুর খোঁজে মূলত প্রাণীরা বাসস্থান পরিবর্তন করে বা পরিযান করে।

বন উজাড় ও দূষণের কারণে প্রতিনিয়ত হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে বন্য প্রাণীদের জীবন। জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে আবাসস্থল পরিবর্তনও খুব বেশি কাজে আসছে না। ফলে দিন দিন পরিযায়ী প্রাণীর সংখ্যাও কমে আসছে। অথচ জীববৈচিত্র্যে পরিযানের গুরুত্ব অনেক। পৃথিবীর ভারসাম্য বজায় রাখতে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে কাজ করার কোন বিকল্প নেই। এ দায়িত্ব মানুষকেই নিতে হবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা

সূত্র: সায়েন্স ফোকাস