২০১০ সাল। এক সকালবেলার ঘটনা। প্রতিদিনের মতোই সেই সকালেও নিজের খামারে কাজ করছিলেন আর্জেন্টিনার এক কৃষক। হঠাৎ তিনি খামারে একটি বড় হাড়ের টুকরো দেখলেন। খুব একটা গ্রাহ্য করলেন না। এভাবেই কেটে গেল কয়েকদিন। হঠাৎ একদিন তাঁর ইচ্ছে হলো হাড়টিকে খুঁড়ে বের করবেন। কিন্তু যতই মাটি খুঁড়ছেন, হাড়ের শেষ খুঁজে পাচ্ছেন না। হাড়টিকে পুরোপুরি বের করতে না পেরে জাতীয় প্রত্নতাত্বিক বিভাগকে বিষয়টা জানালেন।
প্রত্নতাত্বিক বিভাগ মাটি খুঁড়ে বের করে সেই হাড়। হাড়টি ছিল আসলে প্যাটাগোটাইটান মায়োরাম (Patagotitan Mayorum) নামের একটি ডাইনোসরের ফিমারের অংশ। ২০১৪ সালে এটিকে সাধারণ মানুষের সামনে আনা হয়। বর্তমানে এটি আমেরিকান ন্যাশনাল মিউজিয়াম অফ ন্যাচারাল হিস্ট্রিতে সংরক্ষিত আছে।
এ ডাইনোসরের উচ্চতা ৩১ থেকে ৩৭ মিটার। ওজন ৫০ থেকে ৬৯ টন। বিজ্ঞানীদের মতে, এ ডাইনোসরের বয়স প্রায় ১০ কোটি বছর। কিন্তু প্রশ্ন হলো, বিজ্ঞানীরা কীভাবে এই বয়স নির্ণয় করলেন?
আসলে যেকোনো প্রাণীর কঙ্কালকে বলে ফসিল বা জীবাশ্ম। জীবাশ্মের বয়স নির্ণয়ের অনেকগুলো পদ্ধতি প্রচলিত আছে। কার্বন ক্ষয় (Carbon Decay) সেরকম একটি পদ্ধতি। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রায় ৭৮ শতাংশ নাইট্রোজেন আছে। কিছু নাইট্রোজেন প্রভাবিত হয়ে নিউক্লিয় বিক্রিয়ার মাধ্যমে কার্বনে পরিণত হয়। তবে এটি আমাদের চিরচেনা C-12 কার্বন নয়। এটি কার্বনের একটি আইসোটোপ। যা C-14 নামে পরিচিত। উদ্ভিদ এই কার্বন পরমাণুর কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে। আর উদ্ভিদের মধ্যে কার্বন-১৪ থাকার অর্থ হলো ইকোসিস্টেমের মাধ্যমে সকল প্রাণীর দেহেই তা সঞ্চারিত হয়।
তবে এ কার্বন পরমাণু বেশ অস্থিতিশীল। ফলে এটি নিজেই বিটা কণা বিক্ষেপণ করে। এই বিক্ষপণকে বলে বিটা ক্ষয়। এই কার্বন ক্ষয় দেখে বলা যায় ফসিলটির বয়স কত। তবে এর জন্যে পরমাণুর অর্ধায়ু সম্পর্কেও ধারণা থাকতে হবে। কার্বন-১৪-এর অর্ধায়ু ৫ হাজার ৭৩০ বছর। বিষয়টা আরও স্পষ্ট করে বলা দরকার।
ধরুন, একজন মানুষের আজ মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর পরে তার দেহে নিশ্চয়ই বাহ্যিকভাবে কোনো শক্তি প্রবেশ করতে পারবে না। ধরি, মৃত্যুর সময় তার দেহে C-14 ছিল ১ হাজারটি। ৫ হাজার ৭৩০ বছরে কেউ যদি তার মৃতদেহে C-14-এর পরিমাণ নির্ণয় করতে চায়, তবে সেখানে পাবে ৫০০ টি কার্বন। আবার ১১ হাজার ৪৬০ বছর পরে কেউ তার দেহে C-14-এর নির্ণয় করলে পাবে ২৫০টি কার্বন। এভাবেই ফসিলের বয়স নির্ধারণ করা হয়।
কার্বন ক্ষয় ব্যবহার ১৯৪০ সালে প্রথম ফসিলের বয়স নির্ণয় করেন মার্কিন বিজ্ঞানী উইলিয়ার্ড লিবিই। কিন্তু এ পদ্ধতিতে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার বছর পর্যন্ত বয়স নির্ণয় করা যায়। কিন্তু ফসিলের বয়স যদি হয় তারচেয়েও বেশি?
তখন ব্যবহার করতে হবে K-40 ডেটিং পদ্ধতি। এ পদ্ধতিটাও বেশ প্রচলিত। পৃথিবীতে মোট পটাশিয়ামের প্রায় ০ দশমিক ০০১৭ শতাংশ K-40। এই K-4০ আইসোটপের বয়স ১ দশমিক ২৫ বিলিয়ন বছর।
K-40 নিউক্লিয় বিক্রিয়া ভেঙে তৈরি হয় Ar-40 ও Ca-40। আগ্নেয়গিরির লাভা নির্গত হয়ে K-4০ ভেঙে আর্গন ও ক্যালসিয়াম তৈরি করে। যেহেতু আর্গন গ্যাসীয় মৌল, তাই উড়ে যায়। কিন্তু লাভা শীতল হলে আর আর্গন উড়ে যেতে পারে না। বরং জমতে থাকবে। ধীরে ধীরে সেখানে তৈরি হয় শিলার স্তর। কিন্তু প্রথম স্তরের তুলনায় দ্বিতীয় স্তরে আর্গনের পরিমাণ কম থাকবে। এভাবে বিভিন্ন স্তরে আর্গনের অনুপাত নির্ণয়ের মাধ্যমে সেই শিলার বয়স নির্ণয় করা যায়।
এখন ওই মৃত ব্যক্তিকে যদি কয়েক বিলিয়ন বছর পর একটি শিলার স্তরে পাওয়া যায়, তাহলে তার বয়স কীভাবে নির্ণয় করবে? সেক্ষেত্রে ব্যবহার করতে হবে ইউরেনিয়াম ক্ষয়। এ পদ্ধতিতেই বিজ্ঞানীরা নির্ণয় করেছেন পৃথিবীর বয়স।
লেখক: শিক্ষার্থী, আল ফারুক একাডেমী, সৈয়দপুর, নীলফামারি
সূত্র: উইকিপিডিয়া