পরীক্ষাগারে তৈরি রক্ত মানবদেহে

প্রথমবার মানবশরীরে প্রবেশ করানো হলো পরীক্ষাগারে তৈরি রক্ত। সম্প্রতি এই গবেষণাটি করে সফল হয়েছেন যুক্তরাজ্যের গবেষকেরা। তাঁদের দাবি, রক্তের নানা সমস্যা সমাধানে এই গবেষণা কাজে লাগবে। এ ছাড়া বিরল রক্তের গ্রুপসহ বিভিন্ন চিকিৎসায় ব্যবহার করা যাবে পরীক্ষাগারে তৈরি রক্ত।

তবে কৃত্রিম রক্ত তৈরির ক্ষেত্রে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ আছে। সাধারণ রক্তদান পদ্ধতিতে যে খরচ হয়, কৃত্রিম রক্ত তৈরিতে খরচ হবে তারচেয়ে অনেক বেশি । এ ছাড়া স্টেম সেল সংগ্রহের বিষয়টিও চ্যালেঞ্জিং। যথেষ্ট পরিমাণ স্টেম সেল না পাওয়া গেলে রক্তের পরিমাণ হবে খুব অল্প। যথেষ্ট রক্ত তৈরি করতে হলে এ ক্ষেত্রে আরও গবেষণা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন গবেষকেরা।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাজ্যের দুজন রোগীকে পরীক্ষামূলকভাবে অল্প পরিমাণে রক্ত দিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে। কয়েক চামচের সমান রক্ত দিয়ে তা মানুষের শরীরে কেমন কাজ করে, তা দেখার উদ্দেশ্যে তাঁরা এ গবেষণা করেন।

ভবিষ্যতে এই গবেষণা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন গবেষকেরা। মানুষের শরীর থেকে পাওয়া রক্তের তুলনায় পরীক্ষাগারে তৈরি এই রক্তের আয়ুষ্কাল কত, তা বের করার চেষ্টাও করবেন গবেষকেরা। তাঁরা ১০ জন স্বেচ্ছাসেবকের ওপর কয়েক মাস ধরে এই পরীক্ষা চালাবেন।

গবেষকেরা আরও জানিয়েছেন, মানুষের রক্তদানের বিকল্প হিসেবে পরীক্ষাগারে তৈরি রক্ত ব্যবহার করার উদ্দেশ্য নয় তাঁদের। প্রতিদিন রোগীর জন্য অনেক রক্তের প্রয়োজন হয়। এ জন্য রক্তদাতার ওপর নির্ভর করতেই হবে। তবে তাঁদের পরীক্ষার উদ্দেশ্য হচ্ছে, গুরুত্বপূর্ণ ও দুর্লভ গ্রুপের রক্ত তৈরি করা।

যুক্তরাজ্যের এনএইচএস ব্লাড অ্যান্ড ট্রান্সপ্লান্টের ট্রান্সফিউশন বিভাগের চিকিৎসা পরিচালক ফারুখ শাহ বলেন, ‘তাঁদের এ গবেষণা লোহিত রক্ত​​কণিকা তৈরির জন্য ভিত্তি স্থাপন করবে। এ পদ্ধতিতে পরীক্ষাগারে তৈরি রক্ত সিকল সেলের মতো বিরল রক্তের রোগের ক্ষেত্রে নিরাপদে ব্যবহার করা যাবে।’

এনএইচএস ব্লাড অ্যান্ড ট্রান্সপ্লান্ট ছাড়াও এ গবেষণায় যুক্ত ছিলেন ব্রিস্টল, কেমব্রিজ ও লন্ডনের গবেষকেরা। তাঁরা ফুসফুস থেকে অক্সিজেন নিয়ে পুরো দেহে ছড়িয়ে দিতে কাজ করা লোহিত রক্তকোষের ওপর গুরুত্ব দেন। তাঁরা বলেন, পরীক্ষার জন্য কৃত্রিম রক্তের সঙ্গে তেজস্ক্রিয় পদার্থ যুক্ত করা হয়েছে। এ ধরনের তেজস্ক্রিয় উপাদান মূলত চিকিৎসাক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। কৃত্রিম রক্ত শরীরে কতক্ষণ স্থায়ী থাকে, তা পর্যবেক্ষণে এটি কাজে দেবে। এরপর সুস্থ শরীরে চার মাসের ব্যবধানে কৃত্রিম রক্ত সঞ্চালন করে এর কার্যকারিতার সময় নির্ধারণ করা হবে। ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক অ্যাশলি টয়ি বলেন, ‘আমরা ভবিষ্যতে যতটা সম্ভব রক্ত তৈরি করতে চাই।’

সূত্র: বিবিসি